না ফেরার দেশে রাজীব মীর

রাজীব মীরI -ফাইল ছবি

না ফেরার দেশে রাজীব মীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষক মীর মোশাররফ হোসেন ওরফে রাজীব মীর আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার দিবাগত রাত ১.৩৭ মিনিটে ভারতের চেন্নাইয়ের গ্লোবাল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।  রাজীব মীরের বন্ধু ও সাবেক সহকর্মী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রাজীব মীর ভোলা জেলার কৃতিসন্তান, পরানগঞ্জ হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মীর মোয়াজ্জেম হোসেন (লালু) এর জ্যেষ্ঠ সন্তান।

তিনি লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিন মাস আগে চিকিৎসার জন্য তিনি চেন্নাই যান। সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, দুই মাসের মধ্যে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা না হলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।

শিক্ষক রাজীব মীরের চিকিৎসার জন্য প্রায় কোটি টাকার প্রয়োজন ছিল।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীরা মিলে চেষ্টা করছিলেন। প্রয়োজনীয় অর্থ ও লিভার সবই জোগাড় হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। অপারেশনের আগে হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। এরপর জানা যায়, তার কিডনিও কাজ করছে না। চিকিৎসকরা আশা ছেড়ে দেন। অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন রাজীব মীর।

রাজীব মীরের ছোট বোন সৈয়দা ফারজানা ইয়াসমীন জানান, লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনীয় অর্থ রাজীব নিজেই হাসপাতালে জমা দেন। লিভার ডোনারসহ সবকিছুই প্রস্তুত ছিল। তাঁর অস্ত্রোপচারের জন্য গত শনিবার সময় নির্ধারণ করা হয়। তিনি অস্ত্রোপচারের সময় এগিয়ে আনার আকুলতা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আমি কি অত দিন বাঁচব?’ শেষ পর্যন্ত তাই-ই হলো।  গত শনিবারের আগে হার্ট অ্যাটাক হয় রাজীবের। এরপর থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।  

তিনি জানান, চেন্নাইয়ে এখন রাজীবের বাবা-মা, সবচেয়ে ছোট বোন ও বোনের স্বামী রয়েছেন। তিনিও রাজীবের সঙ্গে চেন্নাইয়ে ছিলেন। কিছুদিন আগে দেশে ফিরে আসেন। রাজীবের স্ত্রী সুমনা খান ও মেয়ে বিভোর ঢাকায় আছেন।

রাজীব মীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। বিভাগের চেয়ারপার্সন হিসেবে কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন শেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।

অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি একাধারে কবি, লেখক, গবেষক, সমাজকর্মী এবং মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমৃত্যু রাজপথে, প্রতিবাদের মঞ্চে সদা সক্রিয় ছিলেন।

মৃত্যুকালে তিনি শিশু কন্যা বিভোর, স্ত্রী, মা, বাবা, দুই বোন এবং অসংখ্য স্বজন, বন্ধু, শিক্ষার্থী, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

রাজীব মীরের বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছে তার পরিবার।

তার মৃত্যুর পর অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশ করেছেন। রাজীব মীরের বন্ধু ও সাবেক সহকর্মী শহীদুল হক ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, 

''আমার বন্ধু রাজীব মীর আর নেই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সহপাঠী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সহকর্মী রাজীব মীর গত রাত ১:৩৭ মিনিটে ইন্তিকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

একসাথে দীর্ঘ ১৫ বছরের চেয়েও বেশি সময় কাটানোয় অনেক স্মৃতি তার সাথে। অনেক বিষয়ে মিল, অনেক বিষয়ে অমিলও ছিল। সর্বশেষ দেখা হয়েছিল গত একুশে বইমেলায়- যেখানে সে আমাকে "মানবিক বন্ধু শহীদুল" লিখে অটোগ্রাফ দিয়েছিলো। ভারতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় কয়েকবার ফোনে কথা হয়েছে। একবার সে আমাকে তার মায়ের সাথে কথা বলিয়ে দিয়ে হয়তো মাকে সান্ত্বনা দিয়েছে যে, সে চলে গেলেও তার বন্ধুরা তার মা-বাবার পাশে থাকবে। আমরা সন্তানহারা মা-বাবাকে তাদের প্রিয় সন্তান ফিরিয়ে দিতে না পারলেও তাদের পাশে থাকলে তারা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। তার বোন নিপা ও জান্নাত ভাইয়ের জন্য যা করেছে, তা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাজীবের বোনরা নিজেদের লিভার কেটে হলেও ভাইকে বাঁচানোর জন্য অনেক দূর এগিয়েছিল। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে যে বোন দু'টো অসহায় হয়ে গেছে, আমরা তাদের পাশে দাঁড়ালে ওরা একটু হলেও ভরসা পাবে। তার একমাত্র মেয়ে "বিভোর"কে বড় করার দায়িত্ব আজ আমাদের সকলের। যারা আমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে আমার মাধ্যমে অথবা সরাসরি রাজীব মীরের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন, সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। মহান আল্লাহ আপনাদের সহযোগিতা কবুল করুন।

আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে নই। রাজীব মীরও নয়। আসুন আমরা তাকে ক্ষমা করে দেই। আমরাও ক্ষমা চাই। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিন, সকলের তাওবা কবুল করুন।

কেউ জানি না এই ধরাতে মৃত্যু মোদের আসবে কখন, আর দেরী নয়, আসুন সবাই খাঁটি তাওবা করি এখন। ''

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর