‘ওরা গরু মেরেছে, আমি ওদের মেরেছি’

‘ওরা গরু মেরেছে, আমি ওদের মেরেছি’

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

বুক ফুলিয়ে কথাগুলো বলছিল রাকেশ সিসৌদিয়া। বলতে বলতে তার চোখে-মুখে একটা রূঢ় ভাব ফুটে উঠলো। মনে হচ্ছিল, সে যে কাজটা করেছে সেটা ‘গর্ব’ করার মতো! তাকে বলতে শোনা গেল, ‘ওরা গরু কাটছিল, আমি ওদের কেটে ফেলেছি। ’

গেল ১৮ জুন ভারতের উত্তর প্রদেশের হাপুরে গরু চুরির অভিযোগে কাশেম কুরেশিকে (৪৫) পিটিয়ে খুন করে একদল দুর্বৃত্ত।

তার সঙ্গী সামিউদ্দিনকেও বেধড়ক প্রহার করে তারা। গুরুতর জখম অবস্থায় সামিউদ্দিনকে উদ্ধার করে পুলিশ।  

কাশেম কুরেশি খুনের অন্যতম অভিযুক্ত রাকেশ। আদালতকে সে লিখিতভাবে জানিয়েছিল, ওই ঘটনায় তার কোনো হাত নেই।

এমনকি, ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিল না সে। তার লেখা সত্য বলে মেনে নেয় আদালত। ফলে কারাগারে ক’দিন কাটানোর পর জামিনে মুক্তি পায় রাকেশ।  

কিন্তু আদালতকে সে যে লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছিল, ঠিক তার উল্টো কথা শোনা গেল রাকেশের মুখে। সে যে ওই ঘটনায় জড়িত, সেটা নিজের মুখেই স্বীকার করলো রাকেশ। আর সমস্ত কথোপকথন রেকর্ড হয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডি টিভির গোপন ক্যামেরায়।

উত্তর প্রদেশের হাপুর জেলার বাজেখুর্দ গ্রামের বাসিন্দা রাকেশ। সম্প্রতি এনডি টিভির একটি প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়েছিল। গোপন ক্যামেরায় রাকেশের স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হয়।  

news24bd.tv
নিহত কাশিম কুরেশির পরিবারের সদস্যরা

সেখানে রাকেশকে বলতে শোনা যায়, ‘ওরা গরু মেরেছে, আমরা তাই ওদের খতম করেছি। ’ জেলে থাকাকালীন জেলারকেও সে গর্বের সঙ্গে এ কথা বলেছিলো।  

রাকেশের ভাষ্য, ‘এই প্রথম জেলে গেলাম। স্বাভাবিকভাবে ভয় পাওয়ার কথা। কিন্তু আমি ভয় পাইনি। জেলে গিয়েও বেশ হইচই করেছি, জেলারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। ’

জেলর নাকি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, কোন কেসের আসামি?তাকেও একই কথা শুনিয়ে এসেছে সে।  

রাকেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি ৩০২ ও ৩০৭ ধারায় মামলা হয়। কিন্তু জামিনে শেষমেশ ছাড়া পেয়ে যান সে। সেই ছাড়া পাওয়ার কয়েক দিন পরেই ভিন্ন কথা শোনা গেল তার মুখে।


সে যে ‘বাহাদুরি’র কাজ করেছেন সেটাও জানিয়েছে। জেল থেকে যে দিন ছাড়া পেল, সে দিন ৩-৪টি গাড়ি করে লোক তাকে নিতে এসেছিল। তারা রাকেশের নামে স্লোগান তুলছিল, ‘রাকেশ সিসৌদিয়া জিন্দাবাদ’। রাকেশ জানায়, যে ভাবে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়েছিল, তা দেখে গর্ববোধ হচ্ছিল তার। মনে হচ্ছিল, যেন একটা যুদ্ধ জয় করে ফিরছে!

রাকেশ হুমকির সুরে আরও জানায়, ‘কেউ যদি গরু কাটে, আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের কেটে ফেলব। ’ এ জন্য যদি হাজার বার জেল খাটতে হয়, তাতেও সে রাজি!

পুলিশ প্রশাসন তার সঙ্গে আছে বলেই যে এ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে, সেটাও জানায় রাকেশ। তাকে বলতে শোনা যায়, ‘পুলিশ সরকারের। আর সে কারণেই এ কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। আজম খান ক্ষমতায় থাকলে কি এ সব সম্ভব হতো? মোটেও না। ’

কিভাবে কাশিমকে মেরেছে সেটাও জানিয়েছে রাকেশ। মারের পর মার চলছিল। আশপাশে ভিড় জমেছিল বেশ। তাদের মধ্যে থেকেই কেউ বলেন, কাশিমকে একটু পানি দিতে। কিন্তু  না, কাশিমকে পানি দেওয়া হয়নি। উল্টে বলা হয়েছিল, গরুকে মারার সময় পানি দিয়েছিস? তুইও পানি পাবি না। মারতে মারতে শেষে মরেই যায় কাশিম!


সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, দ্য কুইন্ট, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর