কী করছেন ভারতের প্রথম রূপান্তরকামী মডেল?

ভারতের প্রথম রূপান্তরকামী মডেল অঞ্জলি লামা

কী করছেন ভারতের প্রথম রূপান্তরকামী মডেল?

নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইন

ছেলে সন্তান হিসেবে নেপালের নুয়াকোটের এক কৃষক পরিবারে জন্ম তার। বাবা-মা ছেলের নাম রেখেছিলেন নবীন ওয়াইবা। একসময় সেই ছেলেটি লিঙ্গ পরিবর্তন করে হয়ে যান মেয়ে। বদলে ফেলেন নাম।

পরতে শুরু করেন মেয়েদের পোশাক। এক পর্যায়ে নাম লেখান মডেলিংয়ে। নানা বাধা আসলেও তা অতিক্রম করেন দৃঢ় মনোবল আর কঠোর পরিশ্রমের ওপর ভর করে। বলছি ভারতে র‌্যাম্পে হাঁটা প্রথম রূপান্তরকামী মডেল অঞ্জলির কথা।
কেমন আছেন এখন তিনি?

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ভালোই আছেন অঞ্জলি। একজনকে ভালোবাসেন। সুযোগ হলে তাকে বিয়েও করতে চান।

ভারতের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার মডেল অঞ্জলি লামা জন্মসূত্রে ভারতীয় না হলেও এখব স্থায়ীভাবেই বাস করছেন মুম্বাইতে। বর্তমানে এলজিবিটি আন্দোলনের একজন মুখ অঞ্জলি। ২০১৬ সালে বাতিল হয়ে গেলেও ২০১৭ মুম্বাইয়ে একটি বিখ্যাত ফ্যাশন উইকের অডিশনে নির্বাচিত হন তিনি। হাঁটেন দেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার মডেল হিসেবে। সেই থেকে শুরু। ৩২ পেরিয়েও ছাড়েননি মডেলিং পেশা। অবশ্য অঞ্জলির মডেলিং শুরুই ২৫ বছরে, যে বয়সে অনেকে এই পেশা ছেড়ে দেন।

কেন নিজেকে বদলে ফেললেন নবীন থেকে অঞ্জলি হয়ে যাওয়া ছেলেটি?

দরিদ্র কৃষক পরিবারে ছেলে হিসেবে জন্ম নেওয়া অঞ্জলি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ব্যাপারগুলো অন্যদের চোখেও ধরা পড়তে থাকে। অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন সমাজ-পরিবার থেকে। কিন্তু, নিজেকে নিয়ে তার স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। সারা বিশ্বে ভারতীয় ফ্যাশন দুনিয়ার ভাবমূর্তি তখনও বেশ ইতিবাচক। তাই নিজেকে প্রকাশ করার স্বাধীনতার জন্য এই প্ল্যাটফর্মকেই দৃষ্টান্ত হিসাবে দেখেছিলেন তিনি। ভাবতে ভাবতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ২০১০ সালে নুয়াকোট থেকে কাঠমাণ্ডুতে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমানোর পর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করে ফেলেন। যদিও ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না, কিন্তু তাকে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল, জানান অঞ্জলি।

২০১০ সালে অস্ত্রোপচারের পর নবীন নাম বদলে হলেন অঞ্জলি। এলজিবিটি-দের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্লু ডায়মন্ড সোসাইটির সদস্য-কর্মী হন। সেই সংস্থার হয়ে এখনও কাজ করছেন। ভারতেরও বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তিনি।

মডেলিংয়ে বরাবরই উৎসাহ ছিল তাঁর। বেশ কয়েকটি ফ্যাশন পত্রিকার ফটোশুটে ডাক পড়ে। ছবি ছাপা হয় প্রচ্ছদে। শুরু হয় নিউ ইয়র্ক, মিলান, প্যারিসের র‌্যাম্পে হাঁটা। মুম্বাইয়ে থাকা শুরু করেন সেই সময় থেকেই।

অঞ্জলি জানান, মা ও বোন ছাড়া বাড়ির আর কেউ তাকে সমর্থন করেনি। নিজের পড়াশোনার খরচও নিজেকেই জোগাড় করতে হত স্কুলজীবনের শেষ থেকেই।  তবে ভেঙে পড়েননি। মডেলিংয়ের শুরুতে এক সাক্ষাৎকারে অঞ্জলি বলেছিলেন, মডেলিং অনেক কঠিন কাজ। তার জন্য তো আরও কঠিন। কিন্তু কোন কিছু পেতে হলে কষ্ট তো করতেই হবে। তাই তিনি করে যাচ্ছেন।

তবে অঞ্জলির কষ্ট বিফলে যায়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডাক পেয়েছেন অঞ্জলি। সম্প্রতি ওয়েব সিরিজের একটি সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁর একজন ভালবাসার মানুষ রয়েছে সেই ২০০৫ সাল থেকে। কোনও না কোনও দিন বিয়ে করতে চান তাকে।

সম্পর্কিত খবর