ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হচ্ছেটা কী?

ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হচ্ছেটা কী?

ফখরুল হাসান পলাশ • দিনাজপুর প্রতিনিধি

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসেন এক প্রসূতি। কিন্তু চিকিৎসা দেয়া তো দূরের কথা, কর্তব্যরতরা তাকে বের করে দেন। ফলে জনসম্মুখেই সন্তান জন্ম দিতে হলো ওই গর্ভবতীকে। দিনাজপুর ফুলবাড়ী উপজেলার এই ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

ওই প্রসূতির নাম রীনা পারভীন। তিনি পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের বাঁশপুকুর গ্রামের আবু তাহেরের স্ত্রী।  

এ ঘটনায় স্থানীয়রা গণমাধ্যমের সহযোগিতায় প্রতিবাদ জানালে অবশেষে নড়েচড়ে বসে ‘ওপর মহল’। বিষয়টি তদন্তের জন্য মাত্র দুই দিনে গঠিত হয়েছে তিন-তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি!

news24bd.tv

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায়ই চিকিৎসা বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ।

বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য অভিযুক্তরা টাকার লোভ দেখিয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

জানা যায়, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোববার (১২ আগস্ট) ভোরে রীনা পারভীন নামে এক অন্তঃসত্ত্বাকে জরুরি ভিত্তিতে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু প্রসব যন্ত্রণায় কাতর রীনাকে কর্তব্যরত নার্স রোজিনা আক্তার ও আফরোজা বানু পার্শ্ববর্তী বেসরকারী ক্লিনিকে যেতে বলে।  

পরিবারটি হত দরিদ্র হওয়ায় ক্লিনিকে যেতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে কমপ্লেক্স ভবনের সামনে প্রসব ব্যাথা আরও বাড়লে কামরাঙ্গা গাছের নিচে সন্তানের জন্ম হয়।  

এ সময় স্থানীয়রা সেই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ায় এবং চাপের মুখে দায়িত্বপ্রাপ্তরা রীনা পারভীন ও নবজাতক কন্যা সন্তানকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঢুকাতে বাধ্য হয়।

সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরতদের এমন অনীহায় গর্জে ওঠে ফুলবাড়ীবাসী। বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছে তারা। সবার একটাই দাবি, ঘটনার সাথে জড়িত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।  

তাদের অভিযোগ, এখানে প্রায়ই রোগীদের সাথে এই ধরনের ঘটনা ঘটে।  

news24bd.tv

ভূক্তভোগী ও তার পরিবার জানায়, হাসপাতালে তাদের কোনো সেবা দেয়া হয়নি। উল্টো তাদের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে বাধ্য করে কর্তব্যরত নার্স। তারা যেতে অস্বীকার জানালে তাদের হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়।

রীনা পারভীনের স্বামী রিকশা চালক আবু তাহের জানান, আজ (১৪ আগস্ট, মঙ্গলবার) সকালে নার্সের পক্ষ থেকে বাসায় গিয়ে ৬০হাজার টাকা দিয়ে অভিযোগ তুলে নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। ।  

আবু তাহের বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেন,‘৬০হাজার কেন, ৬০ কোটি টাকা দিলেও আমি অভিযোগ তুলে নিবো না। আজ আমাদের সাথে ঘটেছে, কাল অন্য কারও সাথে একই কাণ্ড ঘটতে পারে। ’

নার্সদের সুপারভাইজার সাহিদা বেগম বিষয়টি স্বীকার করে জানান, সেই সময় দুইজন নার্স রোজিনা ও আফরোজা কর্তব্যরত ছিল।

গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে লেখাখেলির কারণে ওপর মহলে বেশ নাড়া দেয়। ফলে মাত্র দুই দিনেই সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকতৃক পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে ৩সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান। তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছেন- বিভাগীয় উপ-পরিচালক ডা. আবু জাফর ও সহকারী পরিচালক ডা. মাহাবুবুর রহমান।

কমিটির প্রধান জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে ভূক্তোভোগীসহ সবার সাথে কথা বলা হয়েছে। আমরা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদান করবো। অভিযোগ প্রমাণ হলে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ’

এই ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভূক্তোভোগী পরিবারসহ গোটা ফুলবাড়ী উপজেলাবাসী।

অভিযুক্ত নার্সদের সাথে কথা বলতে চাইলে তাদের কেউই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি।

 

পলাশ/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর