বার্তা কক্ষে বেঁচে থাকবেন তিনি

বার্তা কক্ষে বেঁচে থাকবেন তিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আপাদমস্তক কাগজের মানুষ ছিলেন। কাগজের গন্ধ শুঁকেই বিদায় নিলেন। বিদায়-চিরবিদায় হে কাগজের মানুষ। শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চলে গেলেন সাংবাদিকতার দিকপাল গোলাম সারওয়ার।

আলোর দেশে আঁধার নামিয়ে শায়িত হলেন মহাঘুমের দেশে, যে ঘুম আর কখনই ভাঙবে না সাংবাদিকতার এই বাতিঘরের।

রক্তের বন্ধন ছাড়িয়ে আত্মার বন্ধন যে দৃঢ় হয়, আজ তারই হাজারো গল্প মিললো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। আজ (১৬ আগস্ট, বৃহস্পতিবার) সকালে সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের মরদেহ শহীদ মিনারে আনার পরপরই শোকের ছায়া নেমে আসে।

ভরদুপুরের রৌদ্রকেও ম্লান করে দেয় আপনহারা শোক আর কান্না।

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার পরশে পরশে স্মরণ হতে থাকে সাংবাদিকদের এই অভিভাবকের নাম।

প্রাণের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। বিশেষ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, সাংবাদিকরা তাদের প্রিয় মানুষকে শেষ বিদায় জানাতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে থাকেন। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও সরকারের মন্ত্রীরাও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে শহীদ মিনারে ছুটে আসেন।

সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার ১৯৪৩ সালের ১ এপ্রিল বরিশালের বানারীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ১৯৬২ সালে দৈনিক আজাদী পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।

news24bd.tv

১৯৬৩ সালে দৈনিক সংবাদের সহ-সম্পাদক হিসেবে তার পেশাগত জীবন শুরু। রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭৩ সালে যোগদান করেন দৈনিক ইত্তেফাকে। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৯ সালে সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন দৈনিক যুগান্তর। এরপর ২০০৫ সালে তার হাতেই প্রতিষ্ঠা পায় দৈনিক সমকাল। এছাড়া খেলা, বিনোদন এবং বিভিন্ন ম্যাগাজিনও সম্পাদনা করেন তিনি।  

চমকপ্রদ আর আকর্ষণীয় শিরোনাম সৃষ্টিতে গোলাম সারওয়ার ছিলেন অদ্বিতীয়। মুক্তিযুদ্ধ আর অসাম্প্রদায়িক চেতনার সঙ্গে আপস করেননি, জীবনের শেষ বেলায়ও যার সহস্র প্রমাণ মিলেছে তার দীর্ঘ জীবনের সাংবাদিকতায়। পত্রিকায় দায়িত্বপালনের সুবাধে দায়িত্ব পালন করেছেন আরও বিভিন্ন সংগঠনে।

নিষ্ঠা আর একাগ্রতার স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদক ছাড়াও অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন গোলাম সারওয়ার।

আজ বাদ আসর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শায়িত হন তিনি। এর আগে সকাল ৯টায় গোলাম সারওয়ার শেষবারের মতো আসেন তেজগাঁওয়ে তার প্রিয় কর্মস্থল সমকাল কার্যালয়ে। এরপর সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার পাঁচ দশকের আড্ডাস্থল জাতীয় প্রেস ক্লাবে।

সেখানেই রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবেই অনুষ্ঠিত হয় তার চতুর্থ জানাজা।

গেল ২৯ জুলাই অসুস্থ হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হন ৭৫ বছর বয়সী গোলাম সারওয়ার। অবস্থার অবনতি ঘটলে ৩ আগস্ট সিঙ্গাপুর নেয়া হয় তাকে।  

গেল সোমবার (১৩ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর