অন্যের পক্ষে কোরবানি করার বিধান

প্রতীকী ছবি

অন্যের পক্ষে কোরবানি করার বিধান

ধর্ম ডেস্ক

কোরবানি ইসলামের মৌলিক ইবাদতসমূহের একটি। রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেও প্রতি বছর তা আদায় করতেন, হাদীস ও সুন্নাহে উম্মতের সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের প্রতি তা আদায়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন এবং এর নিয়মনীতি শিক্ষা দিয়েছেন। কোরবানি কখনো ব্যক্তি নিজে করেন, আবার কারও অবর্তমানে তার নামে অন্যজনেও কোরবানি করতে পারেন। আবার মৃত ব্যক্তির নামেও কোরবানি করা যায়।

রাসূলে কারীমের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পক্ষ থেকেও কোরবানি করেন অনেকে। এ ব্যাপারে কোরআন-হাসিদে সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে।

মাসআলা : অন্যের ওয়াজিব কোরবানি দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে, নতুবা ওই ব্যক্তির কোরবানি আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের অনুমতি ব্যতীত তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করার নিয়ম সর্বদা থাকে এবং এ ব্যাপারে তাদের জানাশোনা থাকে তাহলে তাদের প্রত্যক্ষ অনুমতি ব্যতীতও কোরবানি আদায় হয়ে যাবে।

তবে অনুমতি নিয়ে করা ভালো। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫)

মাসআলা : মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তাহলে তাদের পক্ষ থেকে নফল কোরবানি করা উত্তম। এর গোশত কোরবানির স্বাভাবিক গোশতের মতো নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কোরবানির ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরিব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫২)

মাসআলা : সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পক্ষ থেকে কোরবানি করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। আর এ কোরবানির গোশতের বিধান নিজের কোরবানির ন্যায় দাতা ও তার পরিবার সকলেই খেতে পারবে। (ফাতাওয়া রশীদিয়া, পৃ. ৫৮৯)
হযরত হানাশ (রহ.) বলেন, আমি হযরত আলী (রা.)-কে দুটি বকরি কোরবানি করতে দেখে তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ওসিয়ত করেছিলেন যে, আমি যেন তাঁর পক্ষ থেকে কোরবানি করি, তাই আমি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পক্ষ থেকেও কোরবানি করে থাকি। (সুনানে আবী দাউদ, হা. ২৭৯০)

মাসআলা : মৃতের পক্ষ থেকে যেমনিভাবে ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কোরবানি করা জায়েয, তদ্রুপ জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকেও তার ঈসালে সাওয়াবের জন্য নফল কোরবানি করা জায়েয। এ কোরবানির গোশত দাতা ও তার পরিবারসহ সকলেই খেতে পারবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৭)

মাসআলা : বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কোরবানি করা জায়েয। এক্ষেত্রে যার পক্ষ থেকে কোরবানি করা হবে তার দেশে কোরবানির দিন হওয়া জরুরি। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৮)

মাসআলা : কোরবানিদাতা এক স্থানে আর কোরবানির পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কোরবানিদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে, ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। (আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮)


সূত্র: মাসিক আল-আবরার, ফকীহুল মিল্লাত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত খবর