আজ বাদে কাল ঈদ। অথচ, এখনো লাখো মানুষ মহাসড়কের ভোগান্তি পেরিয়ে স্বজনের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। অনেকের কেনা হয়নি কোরবানির পশুও। প্রতিটা মহাসড়কে যানজট।
যানজটের কারণে বিভিন্ন রুটের বাস নির্ধারিত সময়ে ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। কোনো যানবাহনই সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না। ভেঙে পড়েছে ট্রেনের সিডিউলও। ফেরিঘাটগুলোয় কয়েক কিলোমিটার জুড়ে গাড়ির সারি।ঈদুল আজহার আগের দিন তুলনামূলক রাস্তা ফাঁকা থাকার কথা থাকলেও এবার তার ব্যতিক্রম চোখে পড়েছে। অনেকেই আগের দিন রওনা দিতে না পেরে গত রাতে এমনকি আজ সকালে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। এই সকল গাড়িই এখন সড়কে রয়েছে। ফলে মহাসড়কে যানজট ভয়াভহ আকার ধারণ করছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দীর্ঘ এলাকাজুড়ে গতকাল থেকেই দেখা গেছে যানজট। কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার যানজটে যাত্রীদের নাকাল হতে হচ্ছে। মহাসড়কে এই দীর্ঘ যানজটের ফলে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে ঘরমুখো মানুষের ঈদ যাত্রা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই পাশের সড়কের তুলনায় সেতু কম প্রশস্ত হওয়ায় যানজট তৈরি হচ্ছে। আবার যাত্রীরা বলছেন, উভয় সেতুতেই পুলিশ সড়কে প্রতিটা ট্রাক দাঁড় করিয়ে চালকের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলে তবে ছাড়ছেন (যাত্রীদের ধারণা, ট্রাকচালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতে সেগুলো দাঁড় করানো হচ্ছে)। এতে পেছনে শত শত গাড়ি জমে যাচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার মহাসড়কের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। সড়কের পাশেই গরুর হাট, স্থানে স্থানে খানাখন্দ, বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা, সড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা ও উন্নয়ন সংস্কারে থমকে আছে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা। রাজধানী থেকে আব্দুল্লাহপুর হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এমন চিত্র চোখে পড়েছে।
এদিকে ঈদে ট্রেনের বগির সংখ্যা বাড়ানো হলেও ভোগান্তি কমেনি যাত্রীদের। মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে প্রতিটি ট্রেন। প্রতিটি স্টেশনে বিপুলসংখ্যক যাত্রী ওঠানামা করায় যাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে। এছাড়া রেললাইনের পাশে কোথাও কোথাও গরুর হাট বসায় ট্রেন চলাচল করছে সতর্কভাবে। ফলে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না ট্রেন। ওলট-পালট হয়ে গেছে সিডিউল।
প্রায় এক কোটি মানুষ স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ তথা বৃহত্তর ঢাকা ছাড়ছেন। স্বভাবতই মহাসড়কগুলোর ওপর স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ চাপ পড়েছে। ফলে সড়ক ব্যবস্থাপনায় আগের চেয়ে অগ্রগতি ঘটলেও মহাসড়কগুলোতে যানজট এড়ানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাড়তি চাপের অনিবার্য পরিণতিতে প্রতিবারের মতো এবারও ঈদযাত্রায় বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে শুরু হয়েছে ভোগান্তি।
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট, শরীয়তপুর-চাঁদপুর রুটে মেঘনার নরসিংহপুর ফেরিঘাট ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি পারাপার বিঘ্নিত হচ্ছে বলেই জানা গেছে। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া দুই ফেরিঘাটেই আজ সকাল থেকে কয়েক কিলোমিটার গাড়ির সারি দেখা গেছে। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদীতে স্রোত বেশি থাকায় ও গাড়ির চাপ বাড়ায় এ সমস্যা হয়েছে। দুপুরের পর থেকে এই অবস্থা বদলাতে থাকবে বলে তাদের অভিমত।