কোরবানির গোশতের বণ্টন ও খাওয়ার বিধান

ফাইল ছবি

কোরবানির গোশতের বণ্টন ও খাওয়ার বিধান

ধর্ম ডেস্ক

প্রতি বছর ঈদুল আজহাতে মহান সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনে পশু কোরবানি করে সামর্থ্যবান ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। আর এই দিনটিতে ধনিদের পাশাপাশি দরিদ্র মানুষগুলোও পেট ভরে গোশত খাওয়ার সুযোগ পায়। কারণ, কোরবানির গোশতের একটি অংশ দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়। আবার একটি অংশ স্বজন ও প্রতিবেশীদের মাঝে বণ্টন করা হয়।

এর মাধ্যমে সকলের মাঝে একটা সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি হয়।  

এবার প্রশ্ন হলো, কোরবানির গোশত কী পরিমাণ নিজে খাবে এবং কী পরিমাণ সদকা করবে? এ ব্যাপারে উম্মাহর স্বীকৃত ও অনুসৃত ইমামগণের মাঝে কিছুটা মতানৈক্য রয়েছে। অগ্রগণ্য অভিমত হচ্ছে- এক তৃতীয়াংশ খাওয়া, এক তৃতীয়াংশ হাদিয়া দেওয়া এবং এক তৃতীয়াংশ সদকা করা। যে অংশটুকু খাওয়া জায়েজ সে অংশটুকু সংরক্ষণ করে রাখাও জায়েজ; এমন কি সেটা দীর্ঘ দিন পর্যন্ত হলেও যতদিন পর্যন্ত রাখলে এটি খাওয়া ক্ষতিকর পর্যায়ে পৌঁছবে না।

কিন্তু যদি দুর্ভিক্ষের বছর হয় তাহলে তিনদিনের বেশি সংরক্ষণ করা জায়েজ নয়। দলিল হচ্ছে সালামা বিন আকওয়া (রাঃ) এর হাদিস। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের যে মধ্যে ব্যক্তি কোরবানি করেছে তৃতীয় রাত্রির পরের ভোর বেলায় তার ঘরে যেন এর কোন অংশ অবশিষ্ট না থাকে”। পরের বছর সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমরা কি গত বছরের মত করব? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “তোমরা খাও, খাওয়াও এবং সংরক্ষণ কর। ওই বছর মানুষ কষ্টে ছিল। তাই আমি চেয়েছি তোমরা তাদেরকে সহযোগিতা কর”। [সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম]

অর্থাৎ, আশপাশে যদি ক্ষুধার্ত, অভাবী মানুষ থাকে তাহলে কোরবানির মাংস তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা উচিত নয়।

ইমাম মালিক (রহ.) এর মতে গোশত বণ্টনের নির্ধারিত কোনো পরিমাণ নেই। আর বণ্টনের ক্ষেত্রে কাঁচা গোশত আর রান্না করা গোশতের মাঝে কোনো তফাৎ নেই। (আল কাফি, ১/৪২৪)

ইমাম শাফেয়ি (রহ.) এর মতে অধিকাংশ গোশত সদকা করে দেওয়া মুস্তাহাব। (আস সিরাজ আল ওয়াহহাজ, ৫৬৩) 

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এবং ইমাম আহমদ (রহ.) এর মতে কোরবানির গোশতের একতৃতীয়াংশ নিজে খাবে, একতৃতীয়াংশ আত্মীয়স্বজন এবং পাড়াপড়শির মাঝে বিতরণ করবে আর বাকি তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনদেরকে সদকা করবে। বস্তুত এ বিষয়ে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস এই মতের সমর্থন করে। তাছাড়া একই কথা হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) এবং হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকেও বর্ণিত হয়েছে। (আল মুগনি, ৮/৬৩২, আল মুহাল্লা, ৭/২৭০, আস সুনানুল কুবরা; বায়হাকি, ৫/২৪০ প্রভৃতি গ্রন্থ) এ মতটিই অগ্রগণ্য।  

মাসআলা : কোরবানির গোশতের এক-তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকীনকে এবং এক -তৃতীয়াংশ আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্র তিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৮১, আল বাহরুর রায়েক ৮/২০৩)

মাসআলা : কোরবানির গোশত তিন দিনের চেয়ে অধিক সময় রেখে দেওয়া ও খাওয়া জায়েজ। (সহীহ মুসলিম ২/১৫৯, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৫/৮১)

মাসআলা : কোরবানির গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েজ। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০)

মাসআলা : মান্নতকৃত কোরবানির গোশত নিজে ও পরিবার-পরিজন খেতে পারবে না, বরং তা কোনো মুসলমান ফকীরকে সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১)

কোরবানির পশুর অংশ বিক্রয়

মাসআলা : কোরবানির পশুর কোনো অংশ যথা গোশত, চর্বি, হাড্ডি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েজ নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৮১, কাযীখান ৩/৩৫৪)

মাসআলা : কোরবানির পশুর চামড়া কোরবানিদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে, তবে বিক্রির মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১)

মাসআলা : কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়্যাতে বিক্রি করবে। সদকার নিয়্যাত না করে নিজের খরচের নিয়্যাত করা গোনাহ। নিয়্যাত যা-ই হোক বিক্রীত অর্থ পুরোটাই যাকাতের উপযুক্ত কাউকে সদকা করে মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরি। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১, কাযীখান ৩/৩৫৪)

মাসআলা : কোরবানির চামড়ার বিক্রীত মূল্য যাকাতের উপযুক্ত খাতে সদকা করা জরুরি, তা মাদরাসা-মসজিদ ইত্যাদির নির্মাণে খরচ করা সহীহ নয়। (রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৪)

সম্পর্কিত খবর