বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৮ খাবার

বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৮ খাবার

বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৮ খাবার

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

১. জাফরান

জাফরানের নাম যদি শুনে থাকেন, এটাও নিশ্চয়ই জানেন যে এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি মশলার একটি। প্রতি আউন্স জাফরানের দাম স্বর্ণের দামের চেয়েও বেশি। এজন্যে জাফরানের আরেক নাম "লাল স্বর্ণ। " জাফরান আসলে একটি ফুলের গর্ভমুন্ড।

এটি মূলত খাদ্যে ব্যবহার করা হয় রঙিন করতে।

এটি ভাতে ছিটিয়ে দেয়া হলে হলদে রঙের আভা ছড়ায়। যদি কেথিাও ভাতে হলদে দেখেন তাহলে মনে করবেন এটির ওপর ছিটানো হয়েছিল জাফরান।

এটি ওজনের তুলনা করলে স্বর্ণের চেয়ে দামি।

কেন জাফরানের দাম এত বেশি?

কারণ খুব সহজ। যে ফুল থেকে এই জাফরান সংগ্রহ করা হয়, সেটি ফুটে মাত্র এক সপ্তাহের জন্য, শরৎকালের শুরুতে। একটি ফুলে মাত্র তিনটি গর্ভমুন্ড থাকে। খালি হাতে এটি খুব সতর্কতার সঙ্গে সংগ্রহ করতে হয়। এক কিলোগ্রাম জাফরান সংগ্রহ করতে অন্তত দুটি ফুটবল মাঠের সমান জায়গায় এই ফুলের চাষ করতে হবে। বা দরকার হবে প্রায় তিন লাখ ফুল।

news24bd.tv

২. ক্যাভিয়ার

ক্যাভিয়ার আসলে এক ধরণের সামুদ্রিক মাছের ডিম। এই ডিমকে নোনা জল এবং চাটনিতে রসিয়ে নেয়া হয়। বিশ্বের সবচেয়ে সুস্বাদু খাবারের একটি বলে গণ্য করা হয়। এই ক্যাভিয়ার সংগ্রহ করে প্যাকেটে ভরে বাজারজাত করার কাজটি খুবই দুরূহ। তবে তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে ক্যাভিয়ার খুবই বিরল।

সবচেয়ে বিখ্যাত ক্যাভিয়ার আসে বেলুজা স্টার্জেন মাছ থেকে। কেবল মাত্র কাস্পিয়ান সাগর এবং কৃষ্ণ সাগরে এই মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু এই মাছ এখন বিপন্ন প্রায়। খুব কম মাছের ডিমই এখন বৈধভাবে কেনা-বেচা হয়।

গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের হিসেবে এক কিলোগ্রাম অ্যালবিনো ক্যাভিয়ারের সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ৩৪ হাজার ৫শ ডলার।


৩. ঝিনুক

ঝিনুক এখন বিলাসী খাবার হিসেবে বিবেচিত হলেও আগে কিন্তু তা ছিল না। উনিশ শতকের শুরুতে ঝিনুক ছিল খুব সস্তা। উপকূলীয় এলাকার শ্রমজীবী লোকজনের অন্যতম প্রধান খাবার ছিল এটি। কিন্তু অতিরিক্ত ঝিনুক আহরণ এবং সমূদ্র দূষণের ফলে ঝিনুকের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এবং ফলে এর দাম বেড়ে গেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দামে বিক্রি হয় ঝিনুক। কিন্তু লন্ডনের কোন দামি রেস্তোঁরায় এক ডজন ঝিনুক খেতে আপনাকে অন্তত ৬৫ ডলার খরচ করতে হবে।


৪.সাদা ট্রাফল

সাদা ট্রাফলের বিশ্বের সবচেয়ে দুর্লভ ছত্রাকগুলোর একটি। এটি জন্মায় মাটির নীচে। তাও আবার কেবলমাত্র উত্তর ইটালির পাইডমন্ট অঞ্চলের কিছু গাছের শেকড়ের মধ্যে। সাদা ট্রাফলের মধ্যে আছে এক দারুণ সুগন্ধ। এবং খুবই তীব্র এক স্বাদ।

সাদা ট্রাফলের চাষ করা যায় না। এটি নিজে থেকে হয়। অনেকে এই ট্রাফলের চাষ করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণেই সাদা ট্রাফলের দাম এত বেশি।

৫.ইবেরিকো হ্যাম

একটা প্রবাদই আছে। পৃথিবীতে দুধরণের হ্যাম আছে। হ্যাম, আর ইবেরিকো হ্যাম। এই বিশেষ ধরণের শুকরের মাংস আসে কেবল মাত্র স্পেন আর পর্তুগালের একটি নির্দিষ্ট এলাকা থেকে। যেখানে ওক গাছের জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় কালো ইবেরিয়ান শুকর ।

ওক গাছ থেকে ঝরে পড়া ফল খেয়ে বাঁচে এই শুকর। ইবেরিয়ান হ্যাম আসে এই শুকর থেকে। প্রায় তিন বছর ধরে এই শুকরের মাংস প্রক্রিয়াজাত করা হয়। কখনো কখনো চার বছর। গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের হিসেবে সবচেয়ে দামি ইবেরিয়ান শুকরের একটি পা সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০ ডলার দামে বিক্রি হয়েছিল।

৬. ওয়েগু বিফ

ওয়েগু বিফ মানে আসলে জাপানি গরুর মাংস। চার ধরণের জাপানি গরুর যে কোনটি থেকেই আসতে পারে এই মাংস।

এই গরুর মাংসের পরতে পরতে থাকে চর্বি। যখন রান্না করা হয়, তখন এই চর্বি গলে মাংসে মিশে যায়। ফলে মাংসটা থাকে খুবই নরম। মুখে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে হবে মাংসটা যেন গলে যাচ্ছে। জাপানে সবচেয়ে দামি ওয়েগু বিফ হচ্ছে 'কোবে বিফ'। প্রতি কেজির দাম ৬৪০ ডলার।

৭. কোপি লুয়াক কফি

এক কাপ কফি কেন দামী খাবারের তালিকায়, সে প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু এটি যেমন তেমন কফি নয়। এই কোপি লুয়াক কফির দাম প্রতি কেজি ৭শ ডলার। যে কফি বীন থেকে এই কফি তৈরি হয়, সেই বীনগুলোকে এক ধরণের বিড়ালকে খাওয়ানো হয়। এশিয়ান পাম সিভেট নামের এই বিড়াল কফি বীন গুলো খাওয়ার পর সেগুলো তার পাকস্থলীর এসিডে জারিত হয়।

এরপর বিড়ালের মলের সঙ্গে বেরিয়ে আসে এই কফি বীন। সেই বীন থেকে তৈরি হয় কফি। আশা করি এই প্রক্রিয়ার কথা শুনে কফি খাওয়ার বাসনা আপনার উঠে যায়নি! যারা এই কফির ভক্ত, তাদের যুক্তি, বিড়ালের পেটেই আসলে এই কফির সঙ্গে যুক্ত হয় ভিন্ন এক ফ্লেভার।

৮. ফোয়া গ্রা

ফোয়া গ্রা একটি দামী খাবার। মূলত হাঁস বা রাজহাঁসের লিভার বা যকৃৎ দিয়ে তৈরি করা হয় এই খাবার। এই হাঁস বা রাজহাঁসের লিভার স্বাভাবিক আকারের চাইতে প্রায় দশগুন পর্যন্ত বড় করা হয় বেশি করে খাইয়ে।

এ কারণে এই লিভারের স্বাদ অনেক বেশি। যারা এই খাবারের ভক্ত, তারা এর জন্য যে কোন মূল্য দিতে রাজী। তবে মানুষের এই লোভের বলি হচ্ছে হাঁস। কারণ তাদেরকে জোর করে বেশি খাইয়ে মেদবহুল করে তোলা হচ্ছে।

গলা দিয়ে টিউব ঢুকিয়ে এসব হাঁসকে জোর করে খাওয়ানো হয়। উদ্দেশ্য তাদের লিভারকে স্বাভাবিকের চেয়ে বহুগুণ বড় করে তোলা।


নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল)

সম্পর্কিত খবর