বেকারত্বের শঙ্কায় বান্দরবানের হাজারো শ্রমিক

বাইশারীতে কষ থেকে ল্যাটেক্স তৈরি করছেন শ্রমিকরা

বেকারত্বের শঙ্কায় বান্দরবানের হাজারো শ্রমিক

কবির হোসেন সিদ্দিকী • বান্দরবান প্রতিনিধি

ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে বান্দরবানের ‘রাবার শিল্প নগরী’ হিসেবে পরিচিত বাইশারী। গেল দুই বছর ধরে এই অবস্থা চলতে থাকলেও উন্নতির কোন সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। এতে করে এই শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা দিনে দিনে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। যার কারণে হাজারো শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

 

বাণিজ্যিক রাবার চাষে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীকে এখন ‘দ্বিতীয় মালয়েশিয়া’ হিসেবে দেখেন স্থানীয় রাবার ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও উপজেলার ঘুমধুম, দৌছড়ি ও আশারতলীতেও রাবার উৎপাদন হচ্ছে।  

১৯৮৪ সাল থেকে নাইক্ষ্যংছড়িতে বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে তোলা রাবার বাগান থেকে রাবার কষ আহরণ করে ব্যবসায়িকভাবে লাভের মুখ দেখলেও বর্তমানে দর পতনে মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছেন তারা।  

সরজমিনে রাবার বাগান ঘুরে ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চারা লাগানোর ৭ বছর পর রাবার উৎপাদন শুরু করা যায়।

প্রতিটি গাছে উৎপাদনের প্রথম থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত নির্দিষ্ট হারে রাবার উৎপাদন হয়। আর প্রতি গাছ থেকে গড়ে বার্ষিক ১৫ কেজি ল্যাটেক্স (তরল সাদা কষ) পাওয়া যায়।  

কয়েকজন শ্রমিক জানান, দুই বছর আগের আনন্দমুখর পরিবেশ এখন আর বাগানে নেই। বর্তমানে রাবারের দাম কমে যাওয়ায় তরল কষের পরিমাণ বাড়াতে মালিকদের অসহনীয় চাপ সহ্য করতে হচ্ছে। ফলে ভোর ৪টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পেটের দায়ে তারা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।  

আরিফ রাবার বাগান ব্যবস্থাপক হারুনুর রশিদ জানান, বাইশারী ও আলীক্ষ্যং মৌজায় প্রায় ২শ একরের বাগানে বর্তমানে ৫০ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। গেল বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যা আয়, তা দিয়ে শ্রমিকদের মাসিক বেতন প্রদান করা হয়েছে। নিরুপায় হয়ে বাগানের জঙ্গল কাটা ও সার প্রদানের টাকা মালিকের নিজ থেকেই দিতে হচ্ছে।  

ন্যাম রাবার বাগান ব্যবস্থাপক শেখ মোহাম্মদ ইরফান জানান, রাবারের মূল্য না থাকায় গেল বছর প্রায় ৩০ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে। কয়েক বছর পূর্বে রাবারের প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে বাজার দর পতনে প্রতি কেজি রাবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে!
 
স্থানীয় ক্ষুদ্র রাবার বাগান মালিক মৌলানা আব্দুর রহিম জানান, আলীক্ষ্যং মৌজার দুর্গম পাহাড়ে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা খরচ করে ১০ একর জমির ওপর একটি রাবার বাগান গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু পরপর ৩বার বন্য হাতি তাণ্ডব চালিয়ে সম্পূর্ণ বাগান ধ্বংস করে দেয়। রাবারের মূল্য না থাকায় পুনরায় বাগান সৃজন করারা আগ্রহ নেই বলে জানান তিনি।  

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, একটি মহল নিজেদের স্বার্থে বিদেশি রাবার আমদানি করে দেশিয় রাবার শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ রাবারের দর কম হলেও রাবার থেকে উৎপাদিত কোনো পণ্য সামগ্রীর দাম কমেনি। বর্তমান বাজারে রাবার থেকে উৎপাদিত পণ্যের দাম বেশ চড়া।  

স্থানীয়দের দাবি, রাবার সেক্টর বন্ধ হলে শ্রমিকদের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রীসহ শিল্প মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

 

কবির/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর