বিড়াল নিয়ে আতঙ্কিত নিউজিল্যান্ড

বিড়াল

বিড়াল নিয়ে আতঙ্কিত নিউজিল্যান্ড

নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইন

অনেকেই বাড়িতে বিড়াল পালেন । পশ্চিমা দেশগুলোতে তো রীতিমতো বিড়ালের খাতির-যত্নের জন্য মাসে লক্ষ লক্ষ টাকাও খরচ করেন অনেকে। বিড়ালের চিকিৎসার জন্য রয়েছে হাসপাতাল। এর জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খাবারও প্রস্তুত করে থাকে।

আছে বিড়ালের বিশেষ শ্যাম্পু-সাবানও। আমাদের দেশেও অনেক পরিবারে পোষ্য হিসেবে বিড়ালের কদর রয়েছে। আর সেই বিড়াল এবার নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ডে! কিন্তু কেন?

প্রকৃতি সংরক্ষকরা বলছেন, বিড়াল ভয়ঙ্কর প্রাণি। পরিবেশ বাঁচাতে বিড়াল হটাতে হবে।

 

প্রাথমিকভাবে নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলের ছোট্ট শহর ওমাউই- তে বিড়াল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে আর বিড়াল পালন করা যাবে না! যেটি আছে সেটিকে বন্ধ্যা করার পাশাপাশি নিবন্ধিত করতে হবে। এটির মৃত্যুর পরে আনা যাবে না নতুন কোন বিড়াল। সেখানে সব ধরনের বিড়াল পালন নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বন্য প্রাণি রক্ষার চেষ্টা হিসেবে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এনভায়রনমেন্ট সাউথ-ল্যান্ড-এর প্রস্তাবিত এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, ওমাউইতে যত বিড়াল-প্রেমী আছেন তাদের বিড়ালকে বন্ধ্যা করতে হবে, সেগুলোর শরীরে মাইক্রোচিপ বসাতে হবে এবং বিড়ালকে নিবন্ধিত করতে হবে। তাদের পোষা বিড়ালের মৃত্যু হলে ওই সম্প্রদায়ের বিড়াল-প্রেমী লোকজন নতুন করে বিড়াল পালনের অনুমতি পাবেন না।

উদ্যোক্তাদের যুক্তি- প্রতিবছর কোটি কোটি পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণির মৃত্যুর জন্য দায়ী এসব বিড়াল। এ কারণে পরিবেশ বাঁচাতে 'বিড়াল হটাও' পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

সেখানকার একটি পাখি সংরক্ষণাগার দ্য স্মিথসোনিয়ান মাইগ্রেটরি বার্ড সেন্টারের প্রধান ডক্টর পিটার মারা বলেন, তিনি বিড়াল বিদ্বেষী নন কিংবা বিড়াল পালনের বিপক্ষেও নন। বিড়াল চমৎকার পোষা প্রাণি-তারা দেখতেও দারুণ! তাই বলে তাদের যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতে দেয়া যাবে না-এটাই অবধারিত সমাধান।

কর্মকর্তারা বলছেন, ওমাউইতে এই পদক্ষেপ যথাযথ। কারণ ক্যামেরায় দেখা গেছে যে, ঘুরে বেড়ানো বিড়ালেরা ওই এলাকার পাখী, পোকা-মাকড় এবং সরীসৃপ প্রজাতির প্রাণি শিকার করছে।

বায়ো-সিকিউরিটি অপারেশন্স ম্যানেজার আলি মিয়াদে বলেন, "তাই ওমাউইতে আপনার বিড়াল যেভাবে আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছে সেভাবেই কাটাতে পারবে। কিন্তু যে মুহূর্তে সেটি মারা যাবে আপনি এর পরিবর্তে আর কোন বিড়াল পালার জন্য আনতে পারবেন না"।

ওমাউই ল্যান্ড কেয়ার চ্যারিটেবল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান জন কলিনস অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় বিড়াল পালনের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।

তিনি বলেন, "আমরা বিড়াল বিদ্বেষী নই কিন্তু আমরা চাই আমাদের বন্যপ্রাণি-সমৃদ্ধ পরিবেশ থাকুক। "

কতবড় হুমকি বিড়াল?

বিড়াল এবং স্থানীয় ইকো-সিস্টেম নিয়ে বিতর্ক যে শুধু ওমাউইতে- তা নয়। বিশ্বব্যাপী ইকো-সিস্টেমের ওপর বন্য এবং পোষা- দুই প্রজাতিই বিড়ালের প্রভাব নিয়ে বহু আগে থেকেই সতর্ক করে আসছেন বন সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞরা। বিড়াল বিশ্বের ১০০টি ভয়ংকর আক্রমণাত্মক নন-নেটিভ প্রজাতির মধ্যে জায়গা পেয়েছে।

ডক্টর মারা বলেন, ৬৩টি প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে যারা বিড়ালের আক্রমণের আতঙ্কে আছে।

নিউজিল্যান্ডের মত অত্যন্ত সংবেদনশীল ইকো-সিস্টেম যেখানে, সেখানে এই সমস্যাটি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

"এটা চরম বলে মনে হতে পারে কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। "

তিনি মনে করেন, বিশ্বজুড়ে বিড়াল প্রেমীদের এই প্রাণীটির প্রতি আলাদা চিন্তা-ভাবনা গড়ে তুলতে হবে। তার মতে, বিড়ালকে বন্ধ্যা করে দেওয়া, এবং বাড়িতে খেলনা দিয়ে খেলানো কিংবা বাড়ির ভেতরে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে -যেমন শিকলে বেধে রাখা যেতে পারে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, "এই বিপজ্জনক অবস্থার দায় বিড়ালের নয় এটা মানুষের দোষ। "

সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং মেমে-তে জনপ্রিয়তার কারণে বিশ্বব্যাপী পোষা প্রাণির সংখ্যায় কোন ঘাটতি নেই।

"তারা দেখতে 'কিউট'- ফলে তাদের সম্পর্কে মানুষের অনুভূতি বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে। "

সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন তবে আমেরিকাতে ৮৬ মিলিয়ন পোষা বিড়াল আছে। অর্থাৎ প্রতি তিনটি পরিবারে একটি বিড়াল।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় চার বিলিয়ন পাখি এবং ২২ বিলিয়ন স্তন্যপায়ী প্রাণি বিড়ালের দ্বারা হত্যার শিকার হয়।

ব্রিটেনেও এই সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং সেজন্য বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন বিড়ালকেই।

স্তন্যপায়ী প্রাণি বিষয়ক গবেষণা ও সংরক্ষণ সংগঠন ম্যামাল সোসাইটি বলছে, প্রায় ৫৫ মিলিয়ন পাখি প্রতিবছর আক্রান্ত হয়।

প্রকৃতিগতভাবেই ঘাতক!

নিউজিল্যান্ডে এই প্রথম বিড়ালের এমন ভীতিকর চেহারা উঠে এসেছে তেমনটি নয় - দেশের মোট পরিবারগুলোর প্রায় অর্ধেক পরিবারেই পোষা বিড়াল রয়েছে।

অস্ট্রেলিয়াতেও বিষয়টি বড় চিন্তার কারণ। যেখানে প্রতি রাতে বিড়াল বহু বিরল প্রজাতির প্রাণির মৃত্যুর কারণ হচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে সেখানে বিড়ালের কবল থেকে প্রাণিকুলকে বাঁচাতে বিশ্বের বৃহৎ ক্যাট-প্রুফ বেড়া দেওয়া হয় এবং গৃহপালিত বিড়ালের কারণে সেখানে জাতীয়ভাবে কারফিউ পর্যন্ত জারি করা হয়।  সূত্র: বিবিসি

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর