নতুন বউয়ের খরচ চালাতে শিশু অপহরণ!

বাবার কোলে সিমন

নতুন বউয়ের খরচ চালাতে শিশু অপহরণ!

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

নতুন বউয়ের খরচ চালাতে প্রতিবেশীর শিশুকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল রোমান নামের এক যুবক। তবে পুলিশের তৎপরতায় তার সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।  

সম্প্রতি রাজধানীর পূর্ব নাখালপাড়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। স্ত্রী ও ৪ সহযোগীসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে রোমান।

পুলিশ জানায়, গেল মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) রাতে অপহৃত হয় তেজাগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পূর্ব নাখালপাড়ার ৩/৪১/১ বাসার ভাড়াটিয়া মো. সাইফুল ইসলাম ও সাথী আক্তার দম্পতির ৪ বছরের পুত্র সন্তান তোয়াসিন ইসলাম সিমন। এ সময় শিশুটির মা রান্নাঘরে এবং বাবা বাসার বাইরে ছিলেন।  

ঘুমন্ত শিশুটিকে অপহরণকারীরা তুলে নিয়ে যায়। বাবা-মা তাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

তারা ওই রাতেই বিষয়টি পুলিশ ও স্বজনদের জানান।  

শিশু সিমনের বাবা সাইফুল ইসলাম রাতেই তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর পুলিশ ২৮ ঘণ্টার চেষ্টায় সিমনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার জানান, প্রযুক্তির সহযোগিতায় অপহরণকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপহরণকারী রোমান শিশুটির প্রতিবেশী। সে মুক্তিপণ আদায় করতে নিজ প্রতিবেশীর সন্তানকে অপহরণ করেছিল।

যেভাবে সন্ধান মিললো অপহৃত শিশু সিমনের

সিমনের বাবা সাইফুল ২৮ আগস্ট রাতে এবং পরদিন (২৯ আগস্ট) সকালে পূর্ব নাখালপাড়ায় মাইকিং করেন। এ সময় অপহরণকারী রোমানও তার সঙ্গে ছিল। শিশুটিকে খুঁজে পেতে রোমান ও তার স্ত্রী প্রথম থেকেই তাকে সহযোগিতা করে আসছিল। এ কারণে সন্দেহের ঊর্ধ্বে ছিল রোমান ও তার স্ত্রী।

পরে ২৯ আগস্ট দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে সাইফুলের মোবাইলে একটি ফোন আসে। ফোনদাতা জানায়, সিমন তাদের কাছে আছে। তাকে ফেরত নিতে হলে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে।  

তখন শিশুটির বাবা অপহরণকারীকে জানান, তিনি টাকা দেবেন। এরপর তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ তৎক্ষণাৎ ওই মোবাইল নম্বরটি ট্র্যাকিং করে। তবে সিমটি মোবাইল থেকে খুলে রাখা হয়। তবে যে মোবাইলে সিমটি ঢুকিয়ে ফোন দেয়া হয়েছিল, সেটির আইএমই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর পেয়ে যায় পুলিশ। তারা নিশ্চিত হয়, সিম পরিবর্তন করে ওই মোবাইলটিতে অন্য সিম ব্যবহার করা হচ্ছে।  

পুলিশ নতুন নম্বর ট্র্যাকিং করে জানতে পারে, সাইফুলের বাড়ির আশপাশ থেকেই ওই সিম কার্ডটি ব্যবহার করা হচ্ছে। পরে প্রতিবেশী রোমানকে আটক করে পুলিশ।  

তাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, নতুন বউয়ের ভরণ-পোষণের টাকা জোগাতে এই অপকর্ম করেছে সে। পরে রোমানের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিজয় সরণীর পীর মাজার মসজিদ গলির একটি বাসা থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় শিশু সিমনকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় শহীদুল ইসলাম মিয়া ও জিসান মিয়া নামে দু’জনকে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, মহাখালী ও রামপুরা থেকে রোমানের অপর দুই সহযোগী সাইফুল ইসলাম ইমন ও আলী আহম্মেদকেও আটক করা হয়।

এদিকে, উদ্ধারের ১২ ঘণ্টা পরেও শিশু সিমনের জ্ঞান না ফেরায় তাকে তেজগাঁওয়ের সমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে। বর্তমানে শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠছে।  

 

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর