পাহাড়ে বিলাতি ধনিয়ার বাম্পার ফলন

চলতি বছর রাঙামাটিতে বিলাতি ধনিয়া পাতার বাম্পার ফলন হয়েছে

পাহাড়ে বিলাতি ধনিয়ার বাম্পার ফলন

ফাতেমা জান্নাত মুমু  • রাঙামাটি

পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে বিলাতি ধনিয়া পাতার বাম্পার ফলন হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে উৎপাদিত এ বিলাতি ধনিয়া পাতার গন্ধ কড়া। পাতা চ্যাপ্টা, সবুজ ও ভারি। দু'পাশে খাঁজকাটা ও দেখতে খুবই আকর্ষণীয়।

সাধারণত এ গাছের পাতা লম্বায় ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার ও চ্যাপ্টায় ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এক বার বীজ বুনলে বেঁচে থাকে কয়েক বছর। তাই বার বার ফলন সংগ্রহ করা যায়। গাছগুলো পর্যাপ্ত বড় হলে কৃষকরা ছোট ছোট আঁটি বেঁধে রাজারজাত করে।

পাহাড়ে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাহিদা অনেক। তাই লাভবান হচ্ছেন বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষীরা। কম খরচ, অধিক ফলন, বেশি লাভ। ফলে বিলাতি ধনিয়া চাষে আগ্রহ বেড়েছে অন্যান্য কৃষকদেরও।  

রাঙামাটি কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার প্রত্যন্ত ও দুর্গম উপজেলা সাপছড়ি, কাপ্তাই, ওয়াগ্গা, তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া ও শীলছড়ি মারমা পাড়াসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বিলাতি ধনিয়ার ব্যাপক চাষ হয়েছে। এ বিলাতি ধনিয়াপাতা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেক কৃষক পরিবার। পাহাড়ের আনাচে-কানাচে, ঢালে ও পাদদেশে বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষ করেছে চাষীরা। ফলনও হয়েছে বাম্পার। এ পাতা চাষ করে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করেছেন অনেক কৃষি পরিবার। স্থানীয় বাজারে পাহাড়ে উৎপাদিত বিলাতি ধনিয়ার চাহিদা অনেক। অধিক ফলনের কারণে ক্রেতাদের জন্য বিলাতি ধনিয়ার দাম যেমন সহনশীল, তেমনি চাষীরাও ভালো দাম পাচ্ছে। উচ্চ বাজারমূল্যে ও অধিক আয়ের কারণে রাঙামাটিতে তাই বাড়ছে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ।  

news24bd.tv

জানা যায়, একটা সময় পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে শুধুমাত্র তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ করতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে আগ্রহ বেড়েছে অন্যান্য সম্প্রদায়ের কৃষকের মধ্যেও। তাই রাঙামাটিতে সব মৌসুমে পাওয়া যাচ্ছে বিলাতি ধনিয়া পাতা।  

রাঙামাটির কাপ্তাই সড়কের ওয়াগ্গা এলাকার চাষী কিরণ বালা চাকমা জানান, ‘অল্প পুঁজি, বেশি লাভ। বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি চাষ করা যায় এ বিলাতি ধনিয়া পাতা। সহজ পদ্ধতিতে চাষ করা সম্ভব। তাই কৃষকদের মধ্যে এর চাহিদা বাড়ছে। ’

তবে তার ভাষ্য, এবার বিলাতি ধনিয়া পাতার ফলন ভালো হলেও উৎপাদন খরচ অনুযায়ী বাজার মূল্য অনেকটাই কম। তাছাড়া ছত্রাকের আক্রমণে অনেক ধনিয়া পাতা নষ্ট হয়ে গেছে।
 
অন্যদিকে, রাঙামাটি কৃষি বিভাগ বলছে, অতিরিক্ত তাপদাহের কারণে বিলাতি ধনিয়া পাতায় যে রোগ দেখা দিয়েছে তা ছত্রাকজনিত। এ সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতার হাত বড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া উপযুক্ত থাকায় বিলাতি ধনিয়া চাষে সফলতা এসছে। তাছাড়া ফলনও ভালো হয়েছে।  

news24bd.tv

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, বিলাতি ধনিয়া পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। পাহাড়ের কৃষাণ-কৃষাণীরা যাতে বিলাতি ধনিয়া চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে, সেজন্য রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করছে।  

তাছাড়া এ ধনিয়াতে তেমন কোনো রোগবালাই দেখা যায় না। সম্প্রতি অতিরিক্ত গরম ও তাপ দেহের কারণে বিলাতি ধনিয়া পাতায় ছত্রাকজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।  

গেল ৫ বছরের রাঙামাটিতে ২৩০হেক্টর জমিতে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ হয়েছে। সামনে এ চাষ আরও বাড়তে পারে বলে বিশ্বাস জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।

 

মুমু▐ অরিন▐ NEWS24

সম্পর্কিত খবর