ভাঙছে তিস্তা,কাঁদছে মানুষ

তিস্তা গর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি।সেটা চেয়ে চেয়ে দেখছেন বৃদ্ধ আব্বাস উদ্দিন

ভাঙছে তিস্তা,কাঁদছে মানুষ

রেজাউল করিম মানিক • লালমনিরহাট প্রতিনিধি

করালগ্রাসী তিস্তা একে একে গিলে খাচ্ছে লালমনিরহাটের আবাদি জমি, বসতভিটা। ভয়াবহ ভাঙনের শিকার মানুষগুলোর কান্নায় তিস্তাপাড়ের আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠছে।

‘একবার নোমায়/ দুইবার নোমায়। এই বার নিয়া চৌদ্দবার বাড়ি সড়বার নাগচি।

গত আইতে (বুধবার রাতে) একটা ঘর নদীত ভাসি গেইচে। বাকি ঘর তিনটা খুলচি। এগুলা নিয়া এলা হামরা কোনটে যাই বাহে? এই নদী হামাক ফকির বানাইছে’- কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাগডোরা মধ্যপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ আব্বাস উদ্দিন।

এই বৃদ্ধ বয়সে এসে ছেলেদের আয়ে গেল বছর দেড় লাখ টাকায় ১২ শতাংশ জমি কিনে বাগডোরা মধ্যপাড়ায় বসতভিটা বাঁধেন আব্বাস আলী।

সেটাও বুধবার মধ্যরাতে তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়ে। একটি ঘর ভেসে যাওয়ায় আগেভাগেই বাকি ঘরগুলো সরিয়ে নিচ্ছেন নিরাপদে। কিন্তু বসতভিটা বাঁধার জায়গা নেই। রাস্তার ধারে ফেলে রেখেছেন টিন, কাঠ আর অন্যান্য উপকরণ।  

ভাঙনের শিকার ওই এলাকার কালাম মিয়া  জানান, ঘরটা সরিয়ে রাখার জায়গা নেই। তাই অনিরাপদ হলেও নদীর কিনারে থাকছেন তারা। রাতে স্বামী-স্ত্রী পালাক্রমে পাহারা দেন।

বাগডোরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেয়া গৃহবধূ মৈরন বেগম জানান, ঈদের দিন তাড়াহুড়ো করে ঘর দুইটি সরিয়ে রাস্তায় নিয়েছেন। একটি ঘর জায়গার অভাবে পাশে ডোবায় ফেলে রেখেছেন। একটি ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কোনো সরকারি সহায়তা পাননি বলে দাবি করেন তিনি।

কেবল আব্বাস উদ্দিন, কালাম ও মৈরন নন, গেল ১৫দিনে বাগডোরা মধ্যপাড়া গ্রামের অন্তত অর্ধশত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে রাস্তায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। জায়গার অভাবে কিছু পরিবার সব কিছু বিকিয়ে দিয়ে কাজের সন্ধানে পরিবার-পরিজনসহ পাড়ি জমিয়েছেন রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। কেউ আবার আত্মীয়ের বাঁশ বাগান বা ডোবা উঁচু করে, কেউ দাদন ব্যবসায়ীদের চরা সুদে ঋণে জমি বন্ধক নিয়ে নতুন স্বপ্ন বুনছেন। আর যাদের কোনো উপায় নেই, তারা রয়েছেন খোলা আকাশের নিচে।

এদিকে, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বাহাদুরপাড়া গ্রামের গরিবুল্লাটারী পাড়াটি গত এক সপ্তাহে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। গত রাতে সর্বশেষ মাজেক মিয়ার বসতভিটা নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে বাহাদুরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহাদুরপাড়া মসজিদ, ব্রিজ-কালভার্টসহ কয়েক হাজার পরিবার। ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে এলাকাবাসী মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আজাহারুল ইসলাম  জানান, গত এক মাসে তার ইউনিয়নে ১৩০টি পরিবারের বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে ক্ষতিগ্রস্থ কিছু পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।  

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) শফিউল আরিফ জানান, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হচ্ছে। শিগগিরই তাদের মাঝে ঢেউ টিন ও নগদ অর্থ বিতারণ করা হবে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান ডিসি।



মানিক▐ অরিন▐ NEWS24

সম্পর্কিত খবর