মিয়ানমারে হিজাব পরা মুসলিম ব্লগার

ছবিতে সিনকে প্রশিক্ষণকেন্দ্রে পাঠদান শেষে বাড়ি ফিরতে দেখা যাচ্ছে৷ ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারে হিজাব পরা মুসলিম ব্লগার

নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইন

পাঁচ কোটি মানুষের দেশ মিয়ানমারে মাত্র পাঁচ শতাংশ মুসলিম৷ নানা ধরণের নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার তারা। সেখানে নেই নতুন করে মসজিদ নির্মানের অনুমতি। যেগুলো আছে সেগুলোও ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। রাখাইন থেকে তো নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ১০ লক্ষাধিক মুসলিম রোহিঙ্গা।

বাড়ি ভাড়া নিতে গিয়েও মুসলিমদের পোহাতে হয় ভোগান্তি। এমনই এক দেশে ব্লগার হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন হিজাব পরা মুসলিম তরুণী উইন লে ফাইয়ু সিন।

সিনের বয়স এখন ১৯ ৷ তবে ব্লগিংয়ের সুবাদে তাকে এখন অনেকেই চেনেন। রূপচর্চার বিষয়াদি নিয়ে ব্লগিং করেন এ তরুণী ৷ হিজাব পরা নিয়ে প্রায়ই তাকে সমালোচনা শুনতে হয়।

নানা বৈষম্যের শিকারও হতে হয়। তবে এত কিছুর পরও হিজাব ছাড়েননি সিন। সমালোচনার পরোয়া না করে নিজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন।

রূপচর্চা নিয়ে ভিডিও ব্লগিং করেন উইন লে ফাইয়ু সিন। বিভিন্ন পরামর্শ দেন। সমালোচনা করলেও অনেকেই এখন সিনের কাছে রূপচর্চার পরামর্শ নিতে যান। ব্লগার হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রও খুলেছেন। দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সিনের সেই প্রশিক্ষণকেন্দ্র। এরইমধ্যে প্রায় ৬০০ জনকে সেখান থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে যারা প্রশিক্ষণার্থীদের বেশিরভাগই বৌদ্ধ। তবে তাদের অনেকেই জানেন না সিন একজন মুসলিম নারী। একবার এক বৌদ্ধ নারী যখন জানতে পারেন সিন একজন মুসলিম, তখন তিনি তাঁর (সিন) রূপচর্চার ক্লাস থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। এগুলোকে অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই নেন সিন।

কীভাবে সিন রূপচর্চায় বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠলেন। এখানে অবশ্য সিনের প্রধান শিক্ষক সার্চইঞ্জিন গুগল। সেখান থেকেই তিনি বিভিন্ন তথ্য নিয়ে সেগুলো দিয়ে ভিডিও ব্লগিং শুরু করেন। সিনের এই যাত্রার শুরুটা অবশ্য এক ছেলেবন্ধুর উপহার দিয়ে।

সিন জানান, হাইস্কুলে পড়াশোনা শেষ করার পর তাঁর ছেলেবন্ধু তাঁকে একদিন মেক-আপের কিছু পণ্য উপহার দিয়েছিল। কিন্তু সেগুলো ব্যবহারের নিয়ম তখনো জানা ছিল না তার। আবার কাউকে জিজ্ঞাসা করতেও সংকোচ লাগছিল। ফলে দ্বারস্থ হন গুগলের। সেখান থেকে মেক-আপের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করতে শুরু করেন। কিছু ভিডিও দেখেন। এরপর অন্যদের সহায়তা করতে নিজেই মেক-আপ বিষয়ে পরামর্শমূলক একটি ভিডিও তৈরি করে ফেসবুকে আপলোড করেন। সেই থেকে শুরু। এখন রূপচর্চার ক্ষেত্রে সিন মিয়ানমারের একটি পরিচিত নাম।

সিনের ফেসবুক পাতায় অনুসারীর সংখ্য এখন ছয় হাজারের মতো৷ দিন দিন সেই সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি রূপচর্চা বিষয়ক পণ্যের এক অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন সিন। রূপচর্চা নিয়ে ব্লগিং করা অন্য ব্লগাররাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানেও বরাবরের মতো হিজাব পরে ও সারা শরীর ঢেকে উপস্থিত হয়েছিলেন সিন যা বেশ আলোচিত হয়েছিল। কিছু মানুষ সমালোচনা করলেও সিনের পোশাক প্রশংসাই কুড়ায় বেশি।

হিজাব পরা নিয়ে সিনের বিব্রতকর অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকবার। প্রশিক্ষণ ক্লাস থেকে প্রশিক্ষনার্থী বেরিয়ে যাওয়াই নয়, রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় অনেক মেয়ে সিনের দিকে বাঁকা নজরে তাকায়। তবে এ নিয়ে সিনের কোন আক্ষেপ নেই। নেই সংকোচ। তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহ আমার জন্য অনেক রাস্তা খুলে দিয়েছেন। হিজাব আমার কাছে চাবির মতো। এটা ব্যবহার করে আমি যেখানে ইচ্ছা যেতে পারি, যা ইচ্ছা করতে পারি৷’’

এদিকে রূপচর্চা নিয়ে ব্লগিং করায় ফেসবুকে অনেক মুসলিম লোকজনও সিনকে নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেন। কারণ, রক্ষণশীল মুসলমানদের কাছে মেক-আপ বিষয়টি ট্যাবু হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু সিন এসব সমালোচনার জবাব দেন না। কারণ, এটা তাঁর কাছে শুধু সময়ের অপচয়। সিন বলেন,  ‘‘আমার অনেক কাজ, এগুলো নিয়ে ভাবলে চলবে না। ’’

সম্পর্কিত খবর