ওরা দিনে দর্জি, রাতে ডাকাত

আটক ডাকাত।

ওরা দিনে দর্জি, রাতে ডাকাত

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপাল লাগোয়া শিল্পাঞ্চল মান্ডিদীপ এলাকার এক দর্জি আদেশ খামরা। বয়স ৪৮ বছর।

শিল্পাঞ্চলটির বাজার এলাকায় একটা পোশাক তৈরির দোকান আছে তাঁর। সকলেই তাঁকে চেনেন ভালো দর্জি হিসেবে।

কিন্তু তার অন্য একটা চেহারা সামনে এসেছে কদিন আগে।

পুলিশ ওই আদেশ খামরাকেই গ্রেপ্তার করার পরে জানা যাচ্ছে যে, রাত হলেই দর্জির পোষাক ছেড়ে বেরিয়ে আসত তার অন্য এক চেহারা। খবর বিবিসির

কয়েকজন সঙ্গীসাথীর সঙ্গে সে আলাপ জমাত হাইওয়ের ধারে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য দাঁড় করানো ট্রাকগুলোর চালকদের সঙ্গে।

চলত মদ্যপানের আসর।

আর তার মধ্যেই, সবার চোখের আড়ালে মদে মিশিয়ে দিত মাদক।

অচৈতন্য ট্রাকচালক আর তার খালাসীদের হত্যা করে কোনো নির্জন জায়গায় লাশ ফেলে দিত আদেশ আর তার বন্ধুরা।

ভোপালের পুলিশ ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল ধর্মেন্দ্র চৌধুরী বলছিলেন, আজকেও নতুন করে তিনটি খুনের কথা সে স্বীকার করেছে। এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে ৩৩ টি খুনের কথা জানা গেছে। প্রায় সব হত্যাকাণ্ডই কনফার্ম করা গেছে। তবে শুধু মধ্যপ্রদেশ নয় - আশপাশের ৫-৬ টি রাজ্যেও আদেশ আর তার সঙ্গীরা খুন করেছে। সবগুলোই খতিয়ে দেখছি আমরা।

প্রথম ঘটনাটা ২০১০ সালের। এগারো মাইল বলে একটি এলাকা থেকে দুটি ট্রাক এরা ছিনতাই করেছিল - সেটাই শুরু। মাদক খাইয়ে অচৈতন্য করে দিয়ে দুই চালককেই তারা হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়েছিল দুটি আলাদা জায়গায়।

এই সিরিয়াল কিলার পুলিশের হাতে বেশ অদ্ভূতভাবেই ধরা পড়ে।

অগাস্টের ১৫ তারিখ পুলিশ একটি মৃতদেহ উদ্ধার করে। আবদুল্লাগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মাখন সিংয়ের মরদেহ ছিল সেটি।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ওই ট্রাক চালক মান্ডিদীপ থেকে লোহা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। দেহ উদ্ধারের পরে ট্রাকটিকেও খুঁজে পাওয়া যায় হাইওয়ের ধারে।

তদন্ত করতে গিয়ে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে জেরা করতেই সে কয়েকজনের নাম বলে দেয়। তারপরেই একে একে নয়জন ধরা পড়ে।

কিন্তু তখনও পর্যন্ত পুলিশ জানত না এক এক করে ৩৩টি খুনের কিনারা করতে পারবে তারা আর খোঁজ পাবে এক সিরিয়াল কীলারের।

তবে চৌধুরীর কথায়, জেরা করতে গিয়ে কখনই মনে হয় নি অন্য সিরিয়াল কিলারদের মতো মানসিকভাবে অসুস্থ এরা। নিজেরাই এক এক করে তাদের হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করছে। এটাও জানিয়েছে যে সম্প্রতি আদেশ নিজের একটা আলাদা গ্যাঙ বানিয়েছিল। আর অন্য রাজ্যে গিয়ে হত্যা আর ট্রাকচুরির ঘটনায় সেখানকার দুষ্কৃতিদেরও সাহায্য নিত।

পুলিশ জেরায় আরও জানতে পেরেছে যে আদেশ খামরার এই চক্র শুধু ১২ বা ১৪ চাকার বড় ট্রাকের দিকেই নজর দিত - কারণ সেগুলো বেচতে পারলে বেশী দাম পাবে।

চোরাই ট্রাক আর তাতে ভরা মালপত্র উত্তর প্রদেশ বা বিহারে নিয়ে গিয়ে দালালদের মাধ্যমে বিক্রি করে দিত এরা।

অন্যদিকে হত্যার পরে কোনও সূত্রই রাখত না এরা। যে কারণে এতদিন পুলিশের জালে ধরা পড়েনি।

একেকটি ঘটনার পরেই মোবাইল ফোন আর সিমকার্ড বদলে ফেলত আদেশ খামরা।

তাকে জেরা করে পুলিশ এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪৫ পৃথক আইএমইআই নম্বরের মোবাইল খুঁজে পেয়েছে, যেগুলোতে ৫০টিরও বেশী সিম কার্ড ব্যবহার করেছে আদেশ খামরা।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর