পদ্মার ভাঙন: গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়ালো

নিউজ টোয়েন্টিফোরকে কষ্টের কথা শোনাচ্ছেন বৃদ্ধা লুৎফা বেগম

পদ্মার ভাঙন: গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়ালো

রতন মাহমুদ • শরীয়তপুর প্রতিনিধি

শরীয়তপুরের  নড়িয়ায় পদ্মার ভাঙন থামছে না এখনও। আজ (১৫ সেপ্টেম্বর, শনিবার) সকাল পর্যন্ত উপজেলার শুভ গ্রাম,বাঁশতলা,পূর্ব নড়িয়া, উত্তর কেদারপুর,দাসপারা ও পাঁচগাঁও গ্রামের একাংশ পদ্মা-গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে দিক-বিদিক ছোটাছুটি করছেন ভাঙ্গন কবলিতরা।  

ভাঙনে ওই গ্রামগুলোর ৯০টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

আতঙ্কে বাড়ি-ঘর ছাড়তে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে ১০ হাজার পরিবারের। এ নিয়ে গেল ৩ মাসে ভিটেমাটি হারালো ৬ হাজার ১শ পরিবার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উত্তর কেদারপুর,দাসপারা ও বাঁশতলা গ্রামে ভাঙন আতঙ্কে মানুষ তাদের বসত বাড়ি ও ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। মাঝে মাঝে বৃষ্টি থাকায় দুর্ভোগ বেড়ে যায় ভাঙ্গন কবলিতদের।

অনেকে পাকা ঘর ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন।

news24bd.tv
ভাঙন আতঙ্কে ভিটেমাটি ছেড়ে যাচ্ছেন গ্রামবাসীরা

কেদারপুর দাসপারা গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে গঙ্গা পুজার আয়োজন করেন। পুজায় এলাকার কয়কশ নারী-পুরুষ অংশ নেন। এ ছাড়া মুলফৎগঞ্জ মাদ্রাসাসহ আশপাশের ২০টি মসজিদে কাল জুম্মার নামাজের পর মিলাদ ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। সেখানে কয়েক হাজার মুসল্লি অংশ নেন।

উত্তর কেদারপুর গ্রামের লুৎফা বেগম (৬০) বলেন, ‘আমার একটা ছেলে আছে। কিন্তু সে পঙ্গু, কাজ করতে পারে না। তাই আমাকেই সবকিছু করতে হয়। পদ্মা কয়েকবার আমাদের ঘর ভেঙে নিয়ে গেছে। কান্না করতে করতে আর চোখের পানি আসেনা। ’

‘অনেক কষ্টে একটি বাড়ি করেছি, তাও পদ্মায় গিলে খেয়ে ফেলছে। আমরা এখন আশ্রয় ও খাবারের সন্ধান করছি। শুনেছি, সরকার লাখ লাখ টাকা দিয়েছে। এগুলো কোথায় যায়? আমরা তো পাই না। স্বামী-শ্বশুরের স্মৃতি ফেলে যেতে মন চায় না। ’

news24bd.tv
গাছের গুঁড়ির ওপর মুখ লুকিয়ে বসে আছে গৃহহারা পরিবারের এক সন্তান

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শরীয়তপুর কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এ বছর ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেশি। জিউ ব্যাগ ফেলার কারণে ভাঙন কিছুটা রোধ করা গেছে, কিন্তু থামানো যাচ্ছে না। অতি বৃষ্টি হওয়ায় উজানের পানি পদ্মায় দীর্ঘ সময় ধরে স্রোত সৃষ্টি করছে। ’

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজী আবু তাহের বলেন, ‘ইতোমধ্যে সাড়ে ৩ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। আরও দেড় হাজার পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। আগামী ২মাসের মধ্যে গৃহহীন পরিবারগুলোকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া যাবে। ’ 


রতন▐ অরিন▐ NEWS24
 

সম্পর্কিত খবর