কাজের ব্যস্ততার কারণে বুধবার রাতে ঘরে ফেরেনি মনিকার বাবা মান্নান। মা আফরোজা ছোট মেয়ে মিমকে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। রাত ১১টার পর মনিকাদের ঘরের দরজার টিন কেটে ভেতরে ঢুকে পড়ে চার দুর্বৃত্ত।
এরপর বাচ্চু ওরফে পাইতা আফরোজার পা ধরে শক্ত করে।
জসিম মাথা চেপে ধরে। আতিকুর মুখ চেপে ধরে। আর আমিনুর ধারালো ছুরি দিয়ে আফরোজাকে গলা কেটে হত্যা করে।নিজের মেয়েকে ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় এভাবেই খুন হতে হয় আফরোজাকে।
পরদিন সকালে ছোট মেয়ে মিম প্রতিবেশীদের ডেকে বলে তার মার গলা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তারা খবর দেয় পুলিশে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
৫ বছরের ছোট মেয়ে মিম ছাড়া আর কেউ ছিল না ঘটনার সাক্ষী। মিমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার রাতে পুলিশ বাচ্চু ওরফে পাইতাকে গ্রেফতার করে। অকপটে স্বীকার করে খুনের ঘটনা। পরে গ্রেপ্তার করা হয় জসিমকে। এরমধ্যে খবর পেয়ে আত্মগোপন করে অপর দুইজন। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দেয় তারা দু'জন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বাঁশের ঝাড়ু বিক্রি করেই চার সদস্যের সংসার চালায় আব্দুল মান্নান। দুই মেয়ে মনিকা ও মিম। মনিকার বয়স ১৪ আর মিমের ৫। এক দিকে মনিকা দেখতে বেশ সুন্দর, অন্যদিকে ঝাড়ু বিক্রেতা গরীব মানুষের মেয়ে। এমনও দিন যায় যেদিন মনিকার বাবা ঘরে ফেরে না, ফিরলেও রাত ভোর হয়।
এ কারণে প্রতিবেশী জসিমের ছেলে মোহনের কু-দৃষ্টি পড়ে তার উপরে। সুযোগ বুঝে মনিকার উপর ঝাপিয়ে পড়ে মোহন। তবে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। প্রভাবশালী জসিম ছেলের অপকর্ম স্থানীয়ভাবে ঢাকার চেষ্টা করে। কিন্তু মনিকার মা তাতে রাজি হননি।
মনিকার বাবা থানায় মামলা করলে জসিমের ছেলে মোহনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। মোহনের বয়স ১৬ হওয়ায় তাকে আদালতের নির্দেশে পাঠানো হয় যশোর কিশোর সংশোধনাগারে। এ কারণেই জসিম ক্ষুব্ধ হয় মনিকাদের পরিবারের উপর। তারাও বিষয়টি বুঝতে পেরে মনিকাকে পাঠিয়ে দেয় তার নানার বাড়িতে।
এদিকে, মোহনের বাবা জসিম মনিকার মা আফরোজাকে খুন করার জন্য পরিকল্পনা করে একই গ্রামের বাচ্চু ওরফে পাইতা, আমিনুর ওরফে আনু, এবং আতিকুরের সঙ্গে। মনিকার মা আফরোজাকে খুন করতে পারলে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দিতে চায় মোহনের বাবা জসিম।
ধর্ষণের চেষ্টা মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন বাচ্চু ওরফে পাইতা। বাচ্চুর ছিল মনিকাদের বাড়িতে অবাধ যাতায়াত। তাকে বিশ্বাস করতো আফরোজা ও তার স্বামী। মান্নানের অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের দেখভালও করতো বাচ্চু ওরফে পাইতা। কিন্তু এক লাখ টাকার লোভে পাইতা হাত মেলায় জসিমের সঙ্গে। আফরোজাকে খুন করার পরিকল্পনায় সায় দেয়।
গত বুধবার রাতেও গৃহকর্তা ঘরে না ফেরায় রাত ১১টার পর ওরা চারজন মনিকাদের ঘরের দরজার টিন কেটে ঢুকে পড়ে। আফরোজাকে ধারালো ছুরি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে।
পরদিন সকালে ছোট মেয়ে মিম প্রতিবেশীকে ডেকে বলে তার মার গলা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তারা খবর দেয় পুলিশে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
৫ বছরের ছোট মেয়ে মিম ছাড়া আর কেউ ছিল না ঘটনার সাক্ষী। মিমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার রাতে পুলিশ বাচ্চু ওরফে পাইতাকে গ্রেপ্তার করে। অকপটে স্বীকার করে খুনের ঘটনা। পরে গ্রেপ্তার করা হয় জসিমকে। এরমধ্যে খবর পেয়ে আত্মগোপন করে অপর দুইজন। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দেয় তারা দুজন।
বগুড়ার পুুলিশ সুপার আশরাফ আলী জানান, গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে খুনের দায় স্বীকার করেছে। ঘটনার সময় আফরোজার ছোট মেয়ে মিমের ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু খুনিরা তাকে হত্যা করেনি। মিমি বেঁচে যাওয়ায় পুলিশকে অনেক তথ্য দিয়েছে। খুব শিগগিরই খুনের সঙ্গে জড়িত অপর দুজনকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)