নদীর পেটে ঘরবাড়ি, তার উপরে কিস্তি আতঙ্ক

নড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে

নদীর পেটে ঘরবাড়ি, তার উপরে কিস্তি আতঙ্ক

রতন মাহমুদ, শরীয়তপুর

পদ্মার করাল গ্রাস প্রতিদিনই গিলে খাচ্ছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সরকারি-বেসরকারি ভবন ও মূলফৎগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বহু লোকের সাজানো গোছানো ঘর-বাড়ি। পরিবার-পরিজন নিয়ে হাজারো মানুষের ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। নেই খাবার, নেই পানি। যখন খোলা আকাশের নিচে এমনই মানবেতর জীবন যাপন করছে নদীভাঙনের কবলে পড়া অসহায় মানুষগুলো, তখন আরেকটি দুঃশ্চিন্তা তাদের তাড়া করে ফিরছে।

কিস্তি ও সুধের টাকা পরিশোধ করবে কীভাবে?

চড়া সুদে টাকা এনে অনেকেই কৃষিকাজ ও ব্যবসা করতেন। ক'দিনের ভাঙনে অনেকের ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নেই থাকার জায়গা। খাবার টাকা।

নেই শিশুদের জন্য ওষুধ কেনার টাকা। খোলা আকাশের নিচে যুবতি মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে রয়েছে পরিবারগুলোর মধ্যে শঙ্কা। তার উপরে রয়েছে চোরের উৎপাত। এই অবস্থায় কিস্তির টাকা নিয়েও বিপাকে আছে কয়েকশ' পরিবার। পেটে ভাত থাকুক আর নাই থাকুক, সময়মতো ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাজির হচ্ছেন কিস্তি ও সুদের টাকা নিতে।

ভাঙন কবলিত রাশ মনি দাস বলেন, জীবন বাঁচাতে আমার স্বামী বাজারে বাজারে গিয়ে বাদাম বিক্রি করছেন। এতে আর সংসার চলে না। তার উপর আবার কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। আমরা খাইতে পাই না, কিস্তি দিমু কীভাবে। প্রতিদিন কিস্তির স্যারেরা আইসা চাপ দিতাছে। আমি এক বছর যাবৎ প্যারালাইসিসে ভুগতাছি। আমারে ডাক্তার দেহানোর জন্য স্বামী কিস্তি তুলেছিল। নদী সব নিয়া গেছে। এহন তো ওষুধই কিনতে পারি না, কিস্তি দেব কীভাবে?
সরকারের কাছে কিস্তি থেকে মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে ভাঙন কবলিতরা।

এদিকে বর্ষা মৌসুমে ৫ হাজার ৮২ পরিবারের তালিকা করেছে উপজেলা প্রশাসন। এবার ভাঙনে দুই শয়ের উপরে ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এ পর্যন্ত ভাঙন কবলিতদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে পারেনি প্রশাসন, তবে বলছে নির্মান কাজ চলছে।

রাশ মনি দাস বলেন, আমার স্বামী মূলফৎগঞ্জ বাজারে দোকান করতো। এক মাস সাত দিন হলো আমাদের ঘরবাড়ি, দোকান পাট নদীতে চলে গেছে। সব হারিয়ে কেদারপুর রাস্তার পাশে কোনরকম মাথা গুজে আছি। আমার দুইটি সন্তান- ছেলে অনিক দাস আর মেয়ে প্রিয়া দাস। নদীতে আমাদের সব নিয়ে যাওয়ায় ছেলে-মেয়ের পড়ালেখে বন্ধ হয়ে গেছে।  

নড়িয়া থানার ওসি মো: আসলাম উদ্দিন বলেন, ভাঙন এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে । প্রয়োজনে নিরাপত্তার জন্য আরো পুলিশ মোতায়ন করা হবে।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে চাল, শুকনা খাবার ও টিন বিতরণ অব্যাহত আছে। আমাদের কৃষি ঋণ কমিটির মিটিংয়ে জেলা প্রশাসক নদী ভাঙন কবলিত এলাকায় আগামী পাঁচ মাস কিস্তি আদায়ের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য ঋণদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিদের্শনা দিয়েছেন। নির্দেশনার চিঠি সকল ব্যাংক, এনজিও ও বিমা কোম্পানিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত খবর