১০ সেকেন্ড খুবই সাহস অনুভব করেছিলাম: তামিম

এক হাত দিয়ে খেলে যাচ্ছেন তামিম।

১০ সেকেন্ড খুবই সাহস অনুভব করেছিলাম: তামিম

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণ ভোমরা ওপেনার তামিম ইকবাল এশিয়ার কাপের প্রথম ম্যাচে যে দেশপ্রেম ও ক্রিকেটপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন তা ইতিহাসে বিরল। আর তাইতো গোটা দেশে চলছে তামিম বন্দনা।

দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের ব্যাটিং ইনিংসের শুরুতেই ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরে যান তামিম।

পরে জানা যায়, তার এশিয়া কাপই শেষ।

বাংলাদেশ দলও তখন মহাবিপর্যয়ে। একদিকে ক্রিজ আগলে রেখেছেন মুশফিকুর রহিম অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যানরা আসছে আর যাচ্ছে। মুড়ি মুড়কির মতো পড়ে যাচ্ছেন শ্রীলংকান বোলারদের দাপটে। তখন একজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের অভাব বোধ করছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু তামিম তো হাসপাতারের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। কিন্তু তখনও করো ধারণা ছিল না সামনে কত বড় চমক আসতে যাচ্ছে।

দলের প্রয়োজনে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন মাঠে নামলেন সবার চোখে অবিশ্বাসের ছায়া। এ সময় এক হাতে ব্যাট করে বিরল নজির গড়েন টাইগার এই ওপেনার।

সেদিনের সেই রোমাঞ্চকর ও দুঃসাহসী অনুভূতির বর্ণনা দিয়েছেন তামিম। জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ‘ইএসপিএন ক্রিকইনফো’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তামিম জানান, ‘ওই ১০ সেকেন্ড খুবই সাহস অনুভব করেছিলাম। স্টেডিয়ামের চারদিকের গ্যালারি থেকে ধেয়ে আসা লাল-সবুজ সমর্থকদের গর্জন আমাকে দুঃসাহসী করে তুলেছিল। যেকোনো কিছুই ঘটতে পারত। আউট হতে পারতাম, একটু এদিক ওদিক হলে পুরো ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারত। তবে ওই মুহূর্তে জাতি ও দলের প্রতি খুবই, খুবই অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিলাম। ’

পেশাদার দলের বিপক্ষে একহাতে ব্যাট করাটা যে ঝুকিপূর্ণ এটিও উঠে আসে টাইগার ওপেনারের কথায়। এভাবে ব্যাট করা সত্যিই খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আমি শুধু ডান হাতেই ব্যাট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখবেন-বলটি খেলার সময় বাঁ হাতও সামনে এগিয়ে এসেছিল। যদি সেটি মিস করতাম, তা হলে আহত হাতেই লাগত।

‘রুবেল যখন ক্রিজে ছিল আমি তখন প্যাড আপ করা শুরু করি। মাশরাফি ভাই আমার গ্লাভস কেটে দেন। জীবনে প্রথম অন্য কেউ আমাকে গার্ড পরিয়ে দিয়েছে! মুমিনুল এবং অন্যরা আমাকে প্যাড পরতে সাহায্য করে। সবাই আমাকে তখন দারুণ সহায়তা করছিল, সাহস দিচ্ছিল। যখন মুস্তাফিজ আউট হলো, তখন পর্যন্তও নিশ্চিত ছিলাম না নামব কিনা। আমি কিছু চিন্তা না করেই নেমে পড়েছিলাম। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আমি নিশ্চিত কিনা, আমি দ্বিধাহীন ছিলাম। ’

‘এই এশিয়া কাপ নিয়ে আমার অনেক উচ্চাশা ছিল এবং আমি ওই মুহূর্তে আবেগের বশেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল যদি আমি এক বল খেললে দল আরো ৫ কিংবা ১০ রান করতে পারে এবং সেটা দলের উপকারে আসে, তাহলে কেন নয়? কেউ হয়তো আশা করেনি যে আমি ১ বল খেললে অপর প্রান্ত থেকে ৩২ রান আসবে। মুশফিক অসাধারণভাবে শেষ দিকটা সামলেছে। ’

‘আমার মনে হয় না আমার জীবনে এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়েছে। এখন আমি সবার প্রতিক্রিয়া দেখছি, কিন্তু আমি যখন ব্যাট করতে নামছিলাম এসব কোনো কিছুই তখন আমার মাথায় ছিল না। আমি শুধু আমার দল এবং দেশের কথা ভেবে নেমেছিলাম। ’

শনিবার এশিয়ার কাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচে দলীয় ২২৯ রানে ৯ উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। শেষ উইকেটে নেমে এক হাতে লাকমলের মারাত্মক ডেলিভেরি মোকাবেলা করেন তামিম। তাঁর এমন মানসিকতা দেখে যেন আরও তেতে যান গোটা ইনিংসে আলো ছড়ানো মুশফিক। শেষ পর্যন্ত চোটগ্রস্ত বাঁহাতি ওপেনারকে নিয়ে ৩২ রান যোগ করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। সবকটিই তার রান। মাঝে মাত্র একটি বল খেলেন তামিম। ওই একটি বল ঠেকিয়েই দলকে ২৬১ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ে তোলার পথে এগিয়ে দেন। অবশেষে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে ১৩৭ রানে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর