এবার ৭০ বছরের বৃদ্ধাকে ধর্ষণ!

সত্তর বছরের বৃদ্ধা ধর্ষণ। প্রতীকী ছবি

এবার ৭০ বছরের বৃদ্ধাকে ধর্ষণ!

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

এবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সত্তর বছরের বৃদ্ধা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কয়েকজন সাংবাদিক তার চিকিৎসা ভার নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের আগে ওই বৃদ্ধাকে ‘মা’ সম্বোধন করে চা খেতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল সেই ব্যক্তি। তারপর তাকে ধর্ষণ করা হয়।

নির্যাতনের শিকার ওই বৃদ্ধা জানান, ঘুরতে ঘুরতে গত শুক্রবার বর্ধমানে এসেছিলেন তিনি। একাই বসেছিলেন রাস্তার ধারে।

‘একটা ছেলে এসে আমাকে বলে, ‘মা চা খেতে যাবে?’ আমি বুড়ি মানুষ, সকালে চা খেলে ভালো লাগবে বলে ওর সঙ্গে গেলাম। তারপর আমাকে একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে গেল।

আমার উপর অত্যাচার চালায়৷ মারধরও করে’।

এরপর বৃদ্ধা কোনো রকমে আসেন বড় রাস্তার ধারে। তখন তার শাড়ি রক্তে ভিজে লাল। ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। উৎসুক মানুষ আড় চোখে তাকালেও এগিয়ে আসেনি।

তবে ক্রমশ অমানবিক হতে থাকা এই সভ্যতায় সহমর্মিতার সম্পূর্ণ মৃত্যু ঘটেনি।

বৃদ্ধা বলেন, ‘চারটি ছেলে আমার কাছে আসে। জানতে চায়, কী হয়েছে। তারপর আমাকে একটি রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে আসে’।

কিন্তু, ওই চার যুবক রক্তাক্ত বৃদ্ধাকে হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করাননি। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের খোলা চত্বরে বসিয়ে রেখে চলে যান তারা।

পরে সুজাতা মেহরা, সুমন ভগত ও সইফুল হোসেন মল্লিক নামে তিন সাংবাদিক ঘটনাচক্রে হাসপাতাল চত্বরে আসেন।  রক্তাক্ত বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ান।

সংবাদকর্মী সুজাতা মেহেরা বলেন, ‘একটা ঘটনা কভার করতে এসেছিলাম। হঠাৎ দেখি হাসপাতালের একটা জায়গায় ছোট জটলা। ওখানে কী হচ্ছে দেখতে আমরা এগিয়ে যাই। দেখি, এক বৃদ্ধা বসে রয়েছেন। রক্তে লাল তার শাড়ি। তখন বুঝতে পারিনি, কী হয়েছে।

জিজ্ঞেস করলে বলেন, একজন তার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছে। একজন আয়াকে পরীক্ষা করে দেখতে বলি। তিনি পরীক্ষা করে বলেন, কী অত্যাচার হয়েছে বৃদ্ধার সঙ্গে’।

আরেক সাংবাদিক ভগত বলেন, ‘সবাই ছবি তুলছিল বৃদ্ধার। কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। যে চারটি ছেলে ওকে হাসপাতালে এনেছিল, তারাও ভর্তি করায়নি। অনেকেই এসব ক্ষেত্রে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে চায়। তাই সামনে আসে না। আমরা না এলে বৃদ্ধা হাসপাতালে ভর্তি হতে পারতেন না’।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক নাসির খান সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ান।

তিনি বলেন, ‘একটা বড় দুর্ঘটনার পর অনেক আহত যাত্রীকে আনা হয়েছিল। তা নিয়ে ব্যস্ততা ছিল। তাই ব্যাপারটা অনেকক্ষণ নজর এড়িয়ে যায়। পরে বৃদ্ধাকে ভর্তি করানো হয়। সাংবাদিকরাই নিগৃহীতাকে ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করান। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে’।

সাংবাদিক সুজাতা বলেন, ‘চিকিৎসক আমাকে ক্ষতস্থান দেখিয়েছেন৷ আমি দেখেই বুঝতে পারি, কতটা অত্যাচার চালানো হয়েছে’।

বর্ধমান মেডিকেল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগে ভর্তি রয়েছেন ওই বৃদ্ধা।

হাসপাতালের সুপার ডা. উৎপল তা বলেন, ‘এখন রোগিণীর অবস্থা স্থিতিশীল। প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ওর জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের চিকিৎসকরা তাকে নজরদারিতে রেখেছেন’।

সুপার জানিয়েছেন, তারা এখনো পুলিশকে নির্যাতিতার জবানবন্দি রেকর্ড করার অনুমতি দেননি।

কারণ জানতে চাইলে সুপার বলেন, ‘এখনো ট্রমার মধ্যে আছেন ওই বৃদ্ধা। মানসিকভাবে তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। একটু সুস্থ হলে সে কথা ভাবা যাবে’।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর