পার্বত্য চট্টগ্রামে কয়েক শতাব্দী ধরে চলছে রাজার শাসন!

মং ও বোমাং রাজা

পার্বত্য চট্টগ্রামে কয়েক শতাব্দী ধরে চলছে রাজার শাসন!

কবির হোসেন সিদ্দিকী▐ বান্দরবান প্রতিনিধি

পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জেলা বান্দরবান,রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে এখনো রয়েছে রাজপ্রথা। শত শত বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ তিন রাজার আদেশ-নির্দেশ মেনে আসছে। তবে রাজাদের এখন তেমন কোনো ক্ষমতা নেই।  

স্থায়ী বাসিন্দার সনদ প্রদান, কর আদায়, সামাজিক কিছু বিচার-আচার, সালিশ-বৈঠকের মাঝেই তাদের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ।

তবে তিন রাজার রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস।  

১৮৬০ সালে ব্রিটিশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে চাকমা, বোমাং ও মং ৩টি সার্কেলে বিভক্ত করে। বোমাং সার্কেল বান্দরবানে, চাকমা সার্কেল রাঙ্গামাটিতে ও মং সার্কেল খাগড়াছড়িতে অবস্থিত।  

চাকমা এবং মং সার্কেলের নিয়ম অনুযায়ী, রাজ-পরিবারের বড় ছেলে বংশ পরপম্পরায় রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হলেও বান্দরবানের বোমাং সার্কেলে বংশের সবচেয়ে বড় জনই রাজা হয়ে থাকেন।

 

বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে চাকমা রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, বান্দরবানে বোমাং সার্কেলের রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কেএস প্রু আর খাগড়াছড়িতে মং রাজা হিসেবে রয়েছেন সাচিং প্রু চৌধুরী।  

news24bd.tv
চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়

জানা গেছে ১৯৭৭ সালের ২৫ নভেম্বর রাঙ্গামাটিতে দেবাশীষ রায় আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি চাকমা সার্কেলের ৫১তম রাজা।  

১৬তম বোমাং রাজা ক্য এস প্রু মারা গেলে তার উত্তরসূরি হিসেবে উ চ প্রুকে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল নিয়োগ দেয় সরকার। সে থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে তিনি সিভিল ইনঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেন।

খাগড়াছড়িতে মং সার্কেলের বর্তমান রাজা সাচিং প্রু। রাজা পাইহ্লা প্রু চৌধুরী সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাকে রাজা নিযুক্ত করা হয়। তিনি মং সার্কেলের ৯ম রাজা।  

চাকমা সার্কেলে ১৭৮টি মৌজা, বোমাং সার্কেলে ৯৭টি এবং মং সার্কেলে ১০০টি মৌজা রয়েছে। হেড ম্যানরা প্রতিটি মৌজার প্রধান হিসেবে কাজ করে থাকেন। প্রত্যেক পাড়ায় রাজার প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছে একজন করে কারবারী। রাজা হেডম্যান এবং কারবারীদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আর হেডম্যান এবং কারবারীরা সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ কর আদায় করে থাকেন।

প্রতি বছর শীতের সময় তিন রাজা রাজপুণ্যাহের আয়োজন করে থাকেন। আর এ সময় প্রজারা তাদের জমির খাজনা প্রদান করেন। এ উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয় রাজকীয় অনুষ্ঠান মালার। যদিও রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়িতে রাজ পুণ্যাহের প্রচলন তেমন একটা নেই। তবে বান্দরবানে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময় রাজপুণ্যাহ হয়ে থাকে। আর রাজপুণ্যাহে আদায় করা খাজনার শতকরা ৪২ ভাগ রাজা, ৩৭ ভাগ হেডম্যান এবং ২১ ভাগ সরকারের কোষাগারে জমা হয়ে থাকে।  

জানা যায়, ব্রিটিশ শাসন আমলে রাজারা অত্যন্ত ক্ষমতাশালী ছিলেন। তবে পাকিস্তান আমল থেকে রাজাদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে তাদের ক্ষমতা আরও কমতে থাকে। রাজারা বর্তমানে সম্মানি পেয়ে থাকেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। আর হেডম্যান ৫০০ এবং কারবারী ৩০০ টাকা। এ নিয়ে রাজা, হেডম্যান,কারবারীদের মাঝে রয়েছে ক্ষোভ।

বোমাং রাজা বলেন, ‘আমি রাজা হলেও কোনো সুযোগ-সুবিধা পাই না। সম্প্রতি এক সম্মেলনে রাজাদের জন্য একজন দেহরক্ষী ও গাড়ি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। ’

তবে রাজার তেমন ক্ষমতা না থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘুরতে আসা পর্যটকদের এখনো আকর্ষণ করে রাজপ্রথা এবং রাজাদের পুরোনো ইতিহাস। তাই দেশ-বিদেশ থেকে যারাই বেড়াতে আসেন, সবাই এক নজর হলেও দেখে যান রাজবাড়ি। সম্ভব হলে দেখা করে যান রাজার সাথে।

 

কবির▐ অরিন▐ NEWS24 

সম্পর্কিত খবর