নানা সমীকরণে ঐক্যফ্রন্টের আজকের জনসভা

সিলেটে জনসভা দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি শুরু

নানা সমীকরণে ঐক্যফ্রন্টের আজকের জনসভা

নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইন

আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজপথের আন্দোলনে নামছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত নতুন জোট 'জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট'। সিলেটে আজ সমাবেশ করবে তারা। সমাবেশ থেকে নির্বাচনকেন্দ্রীক বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জোটের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এ নিয়ে এরইমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছে জোটের নেতারা।

তবে সেই আন্দোলনের ঢেউ সরকারকে কতোটা নাড়া দিতে পারবে এবং তাদের দাবি আদায়ে কতটা ভূমিকা রাখবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এরইমধ্যে ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার প্রধান দাবিগুলোই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। তারা বলেছেন, যা কিছু হবে সংবিধান মেনেই হবে। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোন কিছু করা হবে না, করতে দেওয়া হবে না।

জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, সংসদ বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে বিএনপি'র সমন্বয়ে সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করে নতুন জোট 'জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট'। তবে শুরুতেই জোটে ভাঙনের সুর দেখা যায়। সরকার বিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় শুরু থেকে থাকা বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার দল বিকল্প ধারাকে বাদ দেওয়া হয়। আজ সেই জোটের প্রথম জনসভা। বেলা ২টায় পুণ্যভূমি সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে এই জনসভা হবে। জনসভায় মানুষের উপস্থিতি বলে দেবে অনেক কিছুই। জোটের ভবিষ্যৎ এবং গণমানুষের সমর্থন জানা যাবে মানুষের ঢল দেখে। এ কারণে যে কোন মূল্যে লোক সমাগম ঘটিয়ে জনসভা সফল করতে চায় জোট নেতারা। তাই দু'একদিন আগেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর অনেক শীর্ষ নেতা সিলেটে অবস্থান নিয়েছে। বিপুল লোকসমাগম ঘটিয়ে তাদের গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দিতে চায় জোট নেতারা।  news24bd.tv

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পুণ্যভূমি সিলেট থেকে আমাদের যাত্রা শুরু। যে দাবি এতদিন বিএনপি করেছিল, এখন তা সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আজ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির পক্ষে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমরা সফল হবোই।

সিলেট শহরে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এই জোটের জনসভায় বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগও চুপ করে বসে নেই। আজ সকাল ১১টা থেকে সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টে সরকারের নানা উন্নয়নের দিক তুলে ধরে প্রচারপত্র বিলি করছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান বলেছেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত ‘ঐক্যফ্রন্ট’ পরস্পর বিপরীত মতাদর্শীদের ঐক্য। ড. কামাল গংদের ব্যক্তিপ্রভাব থাকলেও ভোটের মাঠে তারা শূন্য। ভোটের মাঠে কর্মীবাহিনী না থাকলে কোনো দাম নেই। এটি মাঝপথেই হোঁচট খাবে। নির্বাচনের চূড়ান্ত মুহূর্তে বিএনপি এ ঐক্য থেকে ইউটার্ন নিতে পারে। যখন ভোটের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে তখন বিএনপি এই নেতাদের সরিয়ে দেবে। তারা বিএনপিতে বিলীন হয়ে যাবেন। চৈত্র মাসে পানির অভাবে মাটি ফেটে যেমন চৌচির হয়ে যায়, তেমন নির্বাচনের ঠিক আগে এই জোটও ফেটে চৌচির হয়ে যাবে। তাই এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ভাবছে না।

তবে সরকারবিরোধী নতুন এ জোটের নেতারা বলছেন, তারা তীব্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করবেন। এটা করতে যত ধরণের কর্মসূচি প্রয়োজন তারা দেবেন।  

ঐক্যফ্রন্টের শরিকদল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জনগণকে নিয়ে ধাপে ধাপে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করা হবে। অবরোধ থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যতো রকম কর্মসূচি আছে সবগুলো পালন করা হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনঅভ্যুত্থান ঘটানো হবে। আমরা জন-আন্দোলনে বিজয়ের সম্ভাবনাই প্রচুর দেখতে পাচ্ছি।

জোটের অন্যতম শরীক বিএনপির মওদুদ আহমদ বলেন, ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে প্রথম পর্যায়ে জনমত সৃষ্টির জন্য সারাদেশে সভা সমাবেশ হবে। শত শত গাড়ি নিয়ে তারা যাত্রা করবেন। সরকার বাঁধা দিলে পরিণতি নির্মম হবে। আর সেটা হলে তো গণতন্ত্র থাকবে না।

এদিকে আজকের জনসভার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা হিসাব-নিকাশ। সরকারি দলের নেতারা বলছেন, তারা এই ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে মোটেও ভাবছেন না। ঐক্যফ্রন্ট খুব বেশি দূর যাওয়ার আগেই মুখ থুবড়ে পড়বে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে সিলেটে জনসভার অনুমতি আওয়ামী লীগের স্বচ্ছ রাজনৈতিক চর্চারই ইঙ্গিত দিয়েছে। এখন আজকের জনসভায় সরকারের তরফ থেকে কোন বাধা না আসলেই বোঝা যাবে ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে আওয়ামী লীগ সত্যিই এই মুহূর্তে ভাবছে না। অন্যদিকে এই জনসভায় লোক সমগমের উপর নির্ভর করছে জোটের গ্রহণযোগ্যতা ও ভবিষ্যৎ। কথায় বলে, সকালই বলে দেয় দিনটা কেমন যাবে।

সম্পর্কিত খবর