জাবালে নূরের মালিকসহ ছয়জনের বিচার শুরু

জাবালে নূর পরিবহন, ইনসেটে রাজীব-দিয়া

জাবালে নূরের মালিকসহ ছয়জনের বিচার শুরু

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার মামলায় জাবালে নূর পরিবহনের মালিক শাহাদাত হোসেনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েস আসামিদের অব্যাহতির আবেদন না মঞ্জুর করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

ছয় আসামির মধ্যে জাবালে নূরের একটি বাসের মালিক মো. শাহাদাত হোসেন আকন্দ, চালক মাসুম বিল্লাহ, হেলপার মো. এনায়েত হোসেন এবং আরেক বাসচালক মো. জোবায়ের সুমন অভিযোগ গঠনের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

জোবায়ের সুমন যে বাসের চালক ছিলেন, তার মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও হেলপার মো. আসাদ কাজীকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হচ্ছে।

কাঠগড়ায় উপস্থিত চার আসামি অভিযোগ গঠনের শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান।

তাদের পক্ষ থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হলেও বিচারক তা নাকচ করে দণ্ডবিধির ৩০৪, ২৭৯ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন।

আদালত ও তদন্ত সূত্র জানায়, চার্জশিটে আসামিদের ৩০২ ধারায় অভিযুক্ত না করে ৩০৪ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। ৩০২ ধারায় অভিযুক্ত করা হলে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে চিহ্নিত হতো এবং এ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া সম্ভব হতো।

মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার পরিবর্তে ৩০৪ ধারায় অভিযুক্ত করায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার মতে এটি দুর্ঘটনা। আর কোনো দুর্ঘটনা ইচ্ছাকৃত হয় না। জবানবন্দিতে ঘাতক চালক স্বেচ্ছায় গাড়িচাপা দেওয়ার কথা উল্লেখ করলেও এটি পূর্বপরিকল্পিত না। তাই ৩০৪ ধারায় আসামিদের অভিযুক্ত করা হয়েছে।

দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় শাস্তির বিধানে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি খুনের অপরাধ করলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে।

অন্যদিকে ৩০৪(খ) ধারার শাস্তির বিধানে বলা আছে- কোনো ব্যক্তি বেপরোয়া যান চালিয়ে বা অবহেলার মাধ্যমে যান চালিয়ে কারও মৃত্যু ঘটলে দায়ী চালককে তিন বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ২৯ জুলাই দুপুরে চালক ও তাদের সহকারীরা বেশি যাত্রী ওঠানোর লোভে যাত্রীদের কথা না শুনে, তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে জিল্লুর রহমান উড়াল সড়কের ঢালের সামনে রাস্তা ব্লক করে দাঁড়ায়। এ সময় চালক মাসুম বিল্লাহ সেখানে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ১৪-১৫ জন ছাত্রছাত্রীর উপর বাস উঠিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই দুই শিক্ষার্থী নিহত ও নয়জন আহত হন। নিহতরা হলেন ওই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬)। সেদিন বাস দুটি দুই থেকে তিনবার একে অপরকে ওভারটেক করে।

এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। এরপর মিরপুর ও বরগুনা জেলায় অভিযান চালিয়ে জাবালে নূরের তিন বাসের তিন চালক এবং তাদের দুই সহযোগী এনায়েত ও রিপনকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১)। এরপর গত ১ আগস্ট সন্ধ্যায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে জাবালে নূরের একটি বাসের মালিক শাহাদাত হোসেনকে (৬০) গ্রেপ্তারের খবর জানানো হয়। গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনকে পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, জাবালে নূরের যে তিন বাসের রেষারেষিতে এ ঘটনাটি ঘটে, সেগুলোর নিবন্ধন নম্বর হলো ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭, ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭ এবং ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৫৮০। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭ নম্বর বাসের চাপায় মারা যান দুই শিক্ষার্থী। বাসটি চালাচ্ছিলেন মাসুম বিল্লাহ। ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭ নম্বর বাসের চালক ছিলেন জুবায়ের এবং ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৫৮০ নম্বরধারী বাসটির চালক ছিলেন সোহাগ।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর