মি-টু আন্দোলনে এবার গৃহপরিচারিকারাও

প্রতীকী ছবি

মি-টু আন্দোলনে এবার গৃহপরিচারিকারাও

নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইন

নন্দিতা (প্রতীকী নাম), টাওয়েলটা দিয়ে যাও তো। বাথরুম থেকে হাক ছাড়লেন গৃহকর্তা। টাওয়াল দিতে গেলে না বোঝার ছলে গৃহকর্মী নন্দিতার হাতটা ছুয়ে দিলেন তিনি। এরপর মাঝে মধ্যেই স্ত্রী বাসায় না থাকলে নন্দিতাকে নানা কৌশলে বোঝাতে লাগলেন পরিবারে কতটা অসুখী তিনি।

আশায় থাকেন, কখন নন্দিতা সমবেদনা জানিয়ে চাপা হাসিতে নিজেকে লুকিয়ে নেবে। নন্দিতা শুনে যান, কথা বলেন না। বুঝতে পারেন এর পরিণামের কথা। কারণ, এ অভিজ্ঞতা তার পুরনো।
মাঝে মধ্যে স্ত্রীর অগোচরে নন্দিতার জন্য ছোট-খাটো উপহারও কিনে আনেন গৃহকর্তা। প্রশংসা করেন নন্দিতার রূপের, ফিগারের। মাঝে-মধ্যে বলেই ফেলেন, 'তোমার আসলে ভালো কোন ঘরে জন্মানো দরকার ছিল'। তার চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করেন। একদিন হয়তো সুযোগ বুঝে নন্দিতাকে সরাসরিই দিয়ে বসেন কোন অশ্লীল ইঙ্গিত বা প্রস্তাব। এরপর সেই সম্পর্ক হয়তো চলে যায় সীমানার বাইরে।  

গল্পটি প্রতীকী। তবে এমন ঘটনা এখন ঘরে ঘরে। আর তাই গৃহকর্মীদের ওপর যৌন হেনস্থা রুখতে এবার মাঠে নেমেছে ভারতের 'পশ্চিমবঙ্গ গৃহ পরিচারিকা সমিতি'। দীর্ঘ আন্দোলনের পর ট্রেড ইউনিয়নের স্বীকৃতি পেয়েছে এই সমিতি। এখন থেকে কোন গৃহকর্মীকে অশ্লীল ইঙ্গিত দিলেই তার কড়া জবাব দেওয়া হবে বলে সমিতি থেকে জানানো হয়েছে।

হলিউডের পর এবার মি-টু আন্দোলনে কাঁপছে বলিউড। বড় বড় প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতারা অভিযোগের কাঠগড়ায়। এক যুগ আগে করা যৌন হেনস্থার বিষয়গুলোও এখন উঠে আসছে অভিযোগ আকারে। যৌন হেনস্থা নিয়ে চলমান হ্যাশট্যাগ মি-টু আন্দোলনে বলিউড অভিনেত্রীদের সঙ্গে এরইমধ্যে কণ্ঠ মিলিয়েছেন করপোরেট নারীরা। এবার সেই কাতারে যোগ হলেন গৃহপরিচারিকারা।  

এদিকে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সমিতির পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে কর্মস্থলে যৌন হেনস্থা কী, তা পরিচারিকাদের বোঝানো যায়। কারণ, যৌন হেনস্থার সংজ্ঞাই অনেক পরিচারিকার কাছে স্পষ্ট নয়। তারা শুধু শারীরিক সম্পর্ককেই যৌন হেনস্থা মনে করেন।  

সংগঠনের কলকাতা জেলার নেত্রী তাপসী ময়রার কথায়, ‘‘বহু পরিচারিকাই কর্মস্থলে যৌন হেনস্থার শিকার হন। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, কর্মস্থলে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করতে বাধ্য করলে তবেই তাকে যৌন হেনস্থা বলে। অশোভনীয় ইঙ্গিত বা কথাবার্তাও যে এক ধরনের যৌন হেনস্থা তা অনেকেই জানেন না। বৈঠকে অনেকেই তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তখন দেখি দশ জনের মধ্যে পাঁচজন কোনও না কোনও ধরনের যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছেন। আমরা সংগঠনের সদস্যাদের যৌন হেনস্থা নিয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছি। ’’

তাপসী বলেন, ‘‘কর্মস্থলে যৌন হেনস্থার শিকার পরিচারিকার কাছে তিনটি দিক খোলা থাকে। তিনি সম্মান বাঁচাতে চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন। না হলে প্রতিবাদ করতে পারেন। তৃতীয়ত, তিনি মুখ বুজে মেনে নিতে পারেন। আর্থিক দিক থেকে দুর্বল হওয়ায় চাকরি হারাবার ভয়ে অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়। ’’ 

কর্মস্থলে যৌন হেনস্থার অভিযোগের তদন্তের জন্য প্রতিটি সরকারি এবং বেসরকারি অফিসে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলা রয়েছে আইনে। কিন্তু পরিচারিকাদের কর্মস্থলে এই কমিটি গঠন সম্ভব নয়। তাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কিছু নেই বলেই মনে করছে পরিচারিকাদের সংগঠন।

#মিটু আন্দোলন পরিচারিকাদের সংগঠনের কাছে নীরবতা ভাঙতে সাহায্য করবে বলে মনে করেন সংগঠনের নেতৃত্ব। তাপসী বলেন, ‘‘আমরা যখন বৈঠকে যৌন হেনস্থা নিয়ে আলোচনা করি, তখন অনেক পরিচারিকাই জানান, তাঁরা যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছেন। ’’

সম্পর্কিত খবর