মাকে রাস্তায় ফেলে গেল ছেলে-ছেলের বউ!

হাসপাতালের বেডে বৃদ্ধা মা

মাকে রাস্তায় ফেলে গেল ছেলে-ছেলের বউ!

বেলাল রিজভী, মাদরীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুরে জোবেদা খাতুন (৮০) নামে এক বৃদ্ধাকে ছেলে ও ছেলের বউ রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদারীপুর পৌর শহরের শকুনী লেক পাড়ের রাস্তায় তাকে গভীর রাতে ফেলে যায় বলে জানা গেছে। দুই শিক্ষার্থী সকালে হাটতে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে। পরে তাকে ভর্তি করেন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে।

প্রথম দিন নিজের নাম আর ছেলে ও ছেলের বউ মিলে ফেলে রেখে যাওয়ার কথাটুকুই বলতে পেরেছিলেন তিনি। তারপর থেকে আর কথা বলতে পারছেন না। কিছুটা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বৃদ্ধা। পরিবারের কেউ খোঁজখবর নিতেও আসেনি তার।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গত ৩১ অক্টোবর গভীর রাতে তার সন্তানরা মাদারীপুর শহরের শকুনী লেকের উত্তর পাড়ে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। সকালে সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী বিলাস হালদার ও মেহেদী ইসলাম হাটার সময় কেউ পড়ে আছে দেখে এগিয়ে যায়। গিয়ে দেখে হাতে-মাথায় রক্তাক্ত অবস্থায় এক বৃদ্ধা পড়ে আছে। তাৎক্ষণিক তারা বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

উদ্ধারকারী শিক্ষার্থী বিলাস হালদার জানান, ‘আমরা দুজনে বৃদ্ধাকে দেখে তাৎক্ষণিক সদর হাসপাতাল নিয়ে ভর্তি করি। তারপরে জেলা ছাত্রলীগের নেতা পিয়াস শিকদার, নাজমুল হোসেন, মাহমুদ হাসান দিনার, শাওন আহমেদ, অমল কুন্ডসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে বিষয়টি বলি। তারাও ওই দিন হাসপাতালে এসে বৃদ্ধার চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেন। ওই দিন বৃদ্ধা নিজের নাম ও তার সন্তান-বউ মিলে মারধর করে ফেলে গেছেন বলে জানান। তারপর থেকে আর কথা বলতে পারে না। শুধু তাকিয়ে থাকে। বর্তমানে তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ’

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ জানান, ‘উদ্ধারের পর থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। কিছুটা মেডিসিনের অভাব দেখা দিলে সমাজসেবার সহযোগিতায় এনে চিকিৎসা দিচ্ছি। বর্তমানে বৃদ্ধা কিছুটা সুস্থ্য হলেও প্রচণ্ড মানসিক আঘাতে স্মৃতিশক্তি কিছুটা লোপ পেয়েছে। তবে তার আত্মীয়-স্বজনদের পেলে সব ঠিকও হয়ে যেতে পারে। ’

news24bd.tv

বৃদ্ধাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে সরকারি সহযোগিতার কথা জানিয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, সন্তানরা যদি এখনোও তার মাকে নিয়ে গিয়ে সেবা-যত্ন করতে চায়, আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। তবে যদি এমন অবস্থায় ফেলে রাখে, তাহলে তাদের পরিচয় পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া যদি কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি বৃদ্ধাকে নিতে চায়, তাহলে তাদের জিম্মায় দেওয়া হবে। আমরা সরকারি তরফ থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি বলে জানান তিনি।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/বেলাল/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর