একাদশ সংসদ নির্বাচন ২৩ ডিসেম্বর

একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি

একাদশ সংসদ নির্বাচন ২৩ ডিসেম্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৩ ডিসেম্বর রোববার।

আজ বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা নির্বাচনের এ দিনক্ষণ ঘোষণা করেন। বর্তমানে চলমান সিইসি'র ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।

এরই মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে কমিশন। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো।  

তফসিল অনুযায়ী একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৯ নভেম্বর, বাছাই ২২ নভেম্বর, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯ নভেম্বর এবং ভোট গ্রহণ ২৩ ডিসেম্বর।

এদিকে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করতে এর আগে আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে চার নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব ও সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।

বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্তকরণ ছাড়াও ভোটের উপকরণ সরবরাহ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ভোটকেন্দ্র ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগসহ নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।  ১৮, ১৯, ২০ ও ২২, ২৩ ও ২৭ ডিসেম্বর ও ৩ জানুয়ারিকে মাথায় রেখে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখের খসড়া আগেই তৈরি করে নির্বাচন কমিশন। আজকের বৈঠকে চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয়। বৈঠক শেষে সিইসির কক্ষে ভাষণ রেকর্ডিং করা হয়।

ভাষণে সিইসি বলেন, ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা হয়েছে।  সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ছয় লক্ষ সদস্য নিয়োগ করা হবে। তারা ভোটার, এজেন্ট, নির্বাচনী কর্মকর্তা সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। দেশব্যাপী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূল আবহাওয়া রয়েছে। সবাইকে অনুরোধ নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলবেন।  

তিনি বলেন, দলমত নির্বিশেষে সকলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। ভোট শেষে নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপদে অবস্থান করতে পারবেন।  নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সরাসরি এমনকি অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা ও অঞ্চল পর্যায়ে প্রদর্শনীর মাধ্যমে ইভিএম এর ব্যবহার দেখানো হয়েছে। মানুষের মধ্যে ইভিএম নিয়ে উৎসাহ দেখা গেছে।

এদিকে তফসিল ঘোষণার আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে মতবিনিময় করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে কোন কোন দল ও জোট তফসিল পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানায়। কোন দল বা জোট আবার তফসিল না পেছানোর পক্ষে মত দেয়। জোট গঠনের পর থেকেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল বিরোধীদলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ জোটের সঙ্গেও ইসির মতবিনিময় হয়। সেখানে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়। ঐক্যফ্রন্ট গত সোমবার ইসির সঙ্গে বৈঠক করে তফসিল পেছানোর দাবি করে। সেইসঙ্গে সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তফসিল না দিতে ইসিকে অনুরোধ জানায় বাম গণতান্ত্রিক জোট। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তফসিল না পেছানোর পক্ষে মত দেয় বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট, এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট ও আওয়ামী লীগ।

আজ ৩০০ আসনে (প্রার্থীদের) মনোনয়ন ফরম পাঠানো হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থী চূড়ান্ত হলে ব্যালট পেপার ছাপার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে ইসি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রায় ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এবার ৩০০ আসনে ভোটের জন্য ভোটকেন্দ্র ৪০ হাজার ১৯৯টি, ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬ হাজার ৫৪০টি। আর প্রতি ভোটকেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং, প্রতি ভোটকক্ষে একজন সহকারী প্রিসাইডিং ও দুজন পোলিং অফিসার নিয়োগ থাকবে।

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে সামনে রেখে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা।  ইসির প্রধান ফটকে পুলিশি পাহারার পাশাপাশি বসানো হয়েছে আর্চওয়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সারা দেশে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তৎপর রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও। রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়ানো হয়েছে র‌্যাব-পুলিশের টহল। তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হয়। এতে দেশের প্রতিটি থানায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়। বিকেল থেকে জেলা ও উপজেলা শহর ছাড়াও মহাসড়কে পিকআপ ভ্যান এবং মোটরসাইকেল টহল বাড়ানো হয়েছে।

এর আগে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ভবন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিরাপত্তা জোরদার করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে নির্দেশনা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা।