এই যুগে সত্যজিৎ রায়ের জন্ম হইলে কি দশা হইতো

ফাইল ছবি

এই যুগে সত্যজিৎ রায়ের জন্ম হইলে কি দশা হইতো

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

আমার ছবি আসবে আর জাতি দুই ভাগ হয়ে যাবেনা এটা এখনো ঘটে নাই। সেই ব্যাচেলর থেকে শুরু।

ব্যাচেলরের সময়তো ফেসবুক ছিলো না। পত্রিকার চিঠি পত্র কলামে গালাগাল দিতে দিতে বিবমিষা ধরাইয়া দিছিলো।

থার্ড পারসনের সময়তো আরও খারাপ অবস্থা।  
তবে আশার কথা এই যে, কিছু বছর পর যে কাজটার জন্য পক্ষে বিপক্ষে বেশি কথা শুনতে হয়, সেই কাজটাই মোটামুটি একটা স্বাভাবিক স্রোতে রুপ নেয়।  
এর একটা কারণ হইতে পারে, আমার কাছে সিনেমা হইলো শিল্পীর নিজস্ব শৈল্পিক ভঙ্গির প্রকাশ। সেটা আগে কি দেখেছি সেই অভিজ্ঞতাকে প্রায়শই চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
আপনি সিনেমা বইলা যা জানেন, যে ফর্মূলাগুলা আপনার অভিজ্ঞতার মধ্যে আছে সেটার সাথে কোনো মিল না রাইখা একদম অন্য রাস্তায় হাঁটতে পারে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই জিনিস একটা উত্তপ্ত আলোচনার জন্ম দেয়, পক্ষে এবং বিপক্ষে (ভালো লাগা মন্দ লাগার কথা বলছি না, সেটা যে কারোরই যে কোনো ছবির ক্ষেত্রে লাগতে পারে। বলছি, পক্ষ-বিপক্ষ অ্যাক্টিভিজমের কথা)।

ডুব নিয়েও পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা হোক। বেশ কিছু পয়েন্ট টুকে নিয়েছি। রাতে সময় টেলিভিশনে তার কিছু কিছু নিয়ে আলোচনা করবো।  
এর মাঝে চলতে থাকুক ছবি দেখা।

এই সুযোগে কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের প্রতি যারা বিশ্ব চলচ্চিত্রের রেফারেন্স ঘেঁটে ঘেঁটে যুক্তি দিয়ে ডুবের প্রতি ভালোবাসা জানাচ্ছেন। আর যারা আরও আগ্রহী গুগল করে ভ্যারাইটি, হলিউড রিপোর্টার, স্ক্রিন ডেইলি, বা আরো ফেস্টিভালের ক্রিটিকগুলা পড়তে পারেন। আমাদের ছোট দেশের ছোট একটা ফিল্মমেকারের কাজ নিয়ে বড় ক্রিটিকরা কি বলছেন সেটা জানা যেতে পারে। তবে যারা ছবিটা দেখেন নাই, চলুন দেখে নিই।

পরিশেষে, ভাবতেছিলাম এই যুগে সত্যজিৎ রায়ের জন্ম হইলে কি দশা হইতো। এমনিতে নাকি, উনাকে উনার জীবদ্দশায় একটা আজব কাজ করতে হইতো। সারা সপ্তাহে যারা যারা উনার ছবিকে সমালোচনার নামে ধুয়ে দিতো তাদের প্রতিটা কথা পয়েন্ট বাই পয়েন্ট উত্তর লিখতে হইতো ছদ্ম নামে। তারপর এগুলা দূরের পোস্ট অফিসে গিয়ে পোস্ট করে আসতে হইতো। আর এই ফেসবুকের যুগে হইলে উনার দশা কি হইতো ভাবা যায়? যেখানে ‘জুম্মন কসাই’য়ের নিক্তিতে মেপে ক্রিটিসিজম লিখতে পারে আব্বাস কিয়ারোস্তামির বা মার্বেল বা ডিসি কমিকসের ছবির থার্মোমিটার দিয়া মাপা যাইতে পারে টেস্ট অব চেরি, সেই ফেসবুকের যুগে সত্যজিৎ রায়ের কথা ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়।

আমাদের সমসাময়িক বা পরের যুগের ফিল্মমেকারদের উদ্দেশ্যে এইখানে আমার বলবার কথা হচ্ছে, এই নয়েজের যুগে আপনাকে আরও বেশি নিজের কণ্ঠস্বরের দিকে তাকাতে হবে, তাকাতে হবে নিজের দর্শকের প্রতি যে আপনার ছবির সঙ্গে হাসছে, কাঁদছে, ভাবছে। নাহলে আপনাকেও কেবলই ছাঁচের ছবিই বানাইতে হবে। কারণ জুম্মন কসাই বা সুপার হিরো মুভিওয়ালা আপনাকে আক্রমণই করবে আপনার ছাঁচ থেকে বের করে তার ছাঁচে ঢোকানোর জন্য। আর এই ছাঁচে যদি সবাই ঢোকে তাহলে ওং কার ওয়াই পাবো কোত্থেকে, আব্বাস কিয়ারোস্তামি পাবো কই, নুরী বিলগে জিলান পাবো কই। কোথায় পাবো তাদের?

এই জন্য প্রথম ছবি থেকেই, আমি শুধু তাকাই আমার দর্শকের দিকে। এই যেমন গত এক দিনে তাকিয়েছি, যে দর্শক জাভেদ হাসানের বেদনায় সিক্ত তার দিকে, যে দর্শক টের পান সাবেরীর ক্রন্দনের সাথে নিজের চোখও ভিজে আসছে তার দিকে, যে দর্শক নিতুর জটিলতাকেও উপলব্ধি করেন তার দিকে, যে দর্শক উপলব্ধি করেন কিভাবে অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে এতকালের ঘরবন্দী গৃহিনী মায়া হঠাৎ হয়ে উঠেন স্বাবলম্বী, যে দর্শক উপলব্ধি করেন “আহারে জীবন, আহা জীবন (Saraf Ahmed Zibon)।

(চলচ্চিত্রনির্মাতার ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

সম্পর্কিত খবর