দেশ ছাড়ছেন ভেনেজুয়েলার সুন্দরীরা

দেশ ছাড়ছেন ভেনেজুয়েলার সুন্দরীরা

দেশ ছাড়ছেন ভেনেজুয়েলার সুন্দরীরা

নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইন

কমে গেছে কর্মসংস্থান, অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে জীবিকার তাগিদে দেশ ছাড়ছেন ভেনেজুয়েলার সুন্দরীরা। এতদিন দেশটিতে বিভিন্ন সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো এসব নারীদের। কাজ কমে যাওয়ায় তারা এখন পাড়ি জমাচ্ছেন মেক্সিকো, কলোম্বিয়া বা পর্তুগালের মতো দেশে।

‘মিস ভেনেজুয়েলা'-র মতো প্রতিযোগিতার হাত ধরে যে নারীরা এতদিন কর্মসংস্থান পেতেন, অর্থনীতির পতনের ফলে সেই সুযোগ হারিয়ে যাওয়ায় দেশ ছাড়ছেন তাঁরা। কারণ অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায় দেশটিতে সুন্দরী মডেলের চাহিদা কমে গেছে। কমে গেছে বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজের সুযোগও।

আসন্ন ‘মিস ইউনিভার্স' প্রতিযোগিতায় চিলের প্রতিনিধিত্ব করবেন আন্দ্রেয়া ডিয়াজ।

২৬ বছর বয়সী এই সুন্দরীর জন্ম ভেনেজুয়েলার শহর ভালেন্সিয়াতে। তবে পানামা ও মেক্সিকো হয়ে চিলে চলে যান তিনি। আপাতত সেখানেই তার বসবাস। কিন্তু যে দেশের মাটিতে প্রথম ব়্যাম্পে হাঁটতে শেখেন আন্দ্রেয়া, সেই ভেনেজুয়েলাতে তার কর্মসংস্থান হয়নি। দেশটিতে দিনে দিনে মডেলের চাহিদা কমতে থাকায় দেশত্যাগ করেন তিনি।

জানা গেছে, নব্বইয়ের দশক থেকে ভেনেজুয়েলায় বাড়তে থাকে সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতার চল। বিশেষ করে ‘মিস ভেনেজুয়েলা' শিরোপায় অংশগ্রহণে বাড়ে অল্পবয়সি নারীদের আগ্রহ। কারণ, এই প্রতিযোগিতায় শিরোপার কাছাকাছি থাকতে পারলেই মিলে যেত কাজের সুযোগ। আর্থিক নিরাপত্তা। চকচকে লাইফস্টাইল। শুধু তাই নয়, ‘মিস ইউনিভার্স', ‘মিস ওয়ার্ল্ড' বা ‘মিস আর্থ'-এর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও ভেনেজুয়েলার নারীদের জয়যাত্রা অব্যাহত ছিল। আর এর মাধ্যমে ভাগ্য খুলে যেত অনেক নারীর। তাই দেশটির তরুণীরা ঝাপিয়ে পড়তো এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। অনেকে কয়েক বছর ধরে নিজ থেকে প্রস্তুতি নিতেন। এই প্রতিযোগিতার মঞ্চ থেকেই উঠে আসেন বহু মডেল, অভিনেত্রী, টেলিভিশন সঞ্চালিকা থেকে মেয়র বা রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীও৷

কিন্তু গত কয়েক বছরে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা। মুদ্রাস্ফীতি দেশটির নাগরিকদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। যা আয় তার চেয়ে বেড়ে যাচ্ছে ব্যয়। উপায়ান্তর না পেয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ অন্য দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। অর্থনীতির এই ধাক্কা অন্যান্য শিল্পের মতো সৌন্দর্য্য জগতেও আঘাত হেনেছে। ফলে একের পর এক সুন্দরীরা পাড়ি দিচ্ছেন মেক্সিকো, কোলোম্বিয়া বা পর্তুগালে৷ জীবিকার খোঁজে এই নারীদের অনেকে আবার পাড়ি দিয়েছেন তুরস্ক বা ভারতের মতো দূরের দেশগুলিতেও।

আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে চলা ‘মিস ওয়ার্ল্ড' প্রতিযোগিতায় পর্তুগালের হয়ে মঞ্চে নামবেন এক ভেনেজুয়েলান নারী। এই প্রবণতার চিত্র আগেও ‘মিস আর্থ' প্রতিযোগিতায় দেখা গেছে যখন পেরু ও স্পেন, দুই দেশেরই প্রতিনিধিত্ব করেন দুই ভেনেজুয়েলান নারী। অর্থাৎ, অর্থের অভাবে ভেনেজুয়েলার সুন্দরীরা এখন অন্য দেশে গিয়ে বাসা বাঁধছেন আর সে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন।

পেরুর প্রতিনিধি, জেসিকা রুসো বলেন, ‘‘দেশ ছেড়েছি বলে সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতার স্বপ্ন আমি ছাড়িনি। আমার বয়স কম। আমি ভবিষ্যতে সারা বিশ্বের ভালো হয় এমন কোনো কাজ করতে চাই। ''

অবশ্য শুধু অর্থনৈতিক পতন নয়, সুন্দরী নারীদের দেশত্যাগের পেছনে রয়েছে আরো একটি কারণ। ভেনেজুয়েলায় থাকাকালীন আন্দ্রেয়া একটি ত্বক পরিচর্যা কেন্দ্রে যান। পরে দেখা যায়, পরিচর্যার বদলে তার মুখে দেখা দিয়েছে ফুসকুড়ি। সৌন্দর্য্যহানি ঘটে। ফলে মডেল হিসেবে ভেনেজুয়েলায় তার কাজের সুযোগ কমতে থাকে। অবশ্য চিলেতে যাবার পর আন্দ্রেয়ার এই সমস্যা সমাধান হয়েছে। সেখানকার উন্নত মেকআপের ফলে সহজেই ঢেকে নিতে পারেন তিনি ত্বকের সব খুঁত।

সম্পর্কিত খবর