'ঝগড়া করো না', বললেন সু চি

সংগৃহীত ছবি

'ঝগড়া করো না', বললেন সু চি

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ আর নির্যাতনের মুখে দুই মাসেই ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। জাতিসংঘে দফায় দফায় এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ঘটনার দুই মাসেরও বেশি সময় পর আজ প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের দেখতে গিয়ে ঝগড়া করতে নিষেধ করলেন দেশটির নেত্রী অং সান সু চি।

গত ২৫ অাগস্ট রাখাইনের ওই অঞ্চলে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর নির্বিচারে হত্যা, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্যে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বুধবার রাতেও সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা।  নির্যাতনের কারণে সাগর পাড়ি দিয়ে পালিয়ে আসতে গিয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছে শত শত রোহিঙ্গা।

 

রয়টার্স জানিয়েছে, সু চি যখন বৃহস্পতিবার রাখাইন সফরে গেলেন, তার আগের রাতেও প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া হাজার চারেক রোহিঙ্গা জল-পাহাড় ডিঙিয়ে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিপুল সমালোচনা চলছে। সেই সমালোচনার মধ্যে আগাম কোনো ঘোষণা না দিয়েই বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিটুয়ে থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে মংডুর উদ্দেশ্যে রওনা হন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চি।

news24bd.tv
রয়টার্স জানিয়েছে, মংডুতে গিয়ে সু চি সড়কপথে রোহিঙ্গাদের এলাকায় যান। তিনি গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় জড়ো হওয়া মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি শুধু তিনটি বিষয় বলেছেন- তাদের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে হবে, সরকার তাদের সহায়তা করবে এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করা উচিৎ নয়।

সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় ২০ জন রাখাইন সফরে সু চির সঙ্গে ছিলেন। তাদের মধ্যে জ জ নামের এক ব্যবসায়ীও রয়েছেন, যার ওপর এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

রাখাইনে কয়েকশ বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসবাসের ইতিহাস থাকলেও ১৯৮২ সালে আইন করে তাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই রোহিঙ্গাদের বর্ণনা করে আসছেন ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ ও ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে।

গতবছর ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিদ্রোহীদের’হামলায় নয় সীমান্ত পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু হয়। নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সে সময় রাখাইনে যাওয়ার জন্য সু চির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু সে সময় তার সাড়া মেলেনি। গত ২৫ অাগস্ট ফের সেনা অভিযান শুরু হয় আরাকানে। মিয়ানমারের সংঘাতপূর্ণ এলাকায় সাংবাদিকদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা স্রোত ও তাদের মুখে নির্যাতনের বর্ণনা উঠে আসে গণমাধ্যমে। এসে সারাবিশ্বে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে জাতিসংঘ। এরপর সু চিকে বেশ কয়েকজন নোবেলজয়ী চিঠি লিখে মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে এনে নিরাপত্তাসহ বসবাসের সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন।  news24bd.tv

অথচ, নোবেল বিজয়ী সু চির দল এনএলডি ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মধ্যে দিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা ছিল, তিনি হয়ত রাখাইনে শান্তি ফেরানোর উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু তিনি কখনোই অধিকার বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিজের চোখে দেখার জন্য রাখাইনে যাওয়ার আগ্রহ তিনি দেখাননি। সাম্প্রতিক সময়ে সেনা অভিযানে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কট তৈরি হওয়ার দুই মাস পর আরাকান সফর করলেন সু চি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সু চি যখন আরাকানে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে গেছেন তখন সেখানে আর রোহিঙ্গা নেই বললে চলে। সবই দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।  

এদিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে সু চি সরকার জানিয়েছে, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা রাখাইনে বসবাসের প্রমাণ দেখাতে পারবে, কেবল তাদেরই ফিরিয়ে নেওয়া হবে।  

তবে বিশ্লেষকদের মতে, যে অবস্থায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, তাদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে পরিচয়পত্র বা মিয়ানমারে ঘরবাড়ি থাকার প্রমাণ জোগাড় করা অসম্ভব। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের কাছে জাতীয় পরিচিতির যেসব কাগজপত্র ছিল, গতবছরই সেগুলো বাতিল করে দিয়েছে সে দেশের সরকার। তাই কোন রোহিঙ্গা যদি তার বাড়ির ঠিকানা বলতে পারে সেটাই তার পরিচিতি হওয়া উচিত। না হলে এই সমস্যার সমাধান কখনো সম্ভব হবে না।

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর