চার মেয়েকে চলন্ত ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেললো বাবা!

সীতাপুর জেলা হাসপাতালে মায়ের পাশে আলগুন খাতুন (পায়ে প্লাস্টার)l -সংগৃহীত ছবি

চার মেয়েকে চলন্ত ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেললো বাবা!

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

নিজের চার মেয়েকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিল এক পাষণ্ড বাবা। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছে। বাকিদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। গত ২৩ অক্টোবর মাঝরাতে ভারতের সীতাপুরের কাছে চলন্ত ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে।

 

অভিযুক্ত ওই বাবার নাম ইদ্দু মিঞা (৪২)। তিনি জম্মু-কাশ্মীরে শ্রমিকের কাজ করেন। স্ত্রীর একে একে পাঁচটি মেয়ে হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এমন কাণ্ড ঘটান ওই পাষণ্ড বাবা।

কন্যাদের মা আফরিনা খাতুন (৩৬) বলেন, ইদ্দু কখনও স্ত্রী-সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব পালন করেনি।

তাই মেয়েদের নিয়ে নিজের মায়ের গ্রামে থাকতাম। এবার সে এসে জোরাজুরি করে আমাদের তার গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তার মনে যে অন্য চিন্তা ছিল তা কোনমতেই টের পাইনি। ট্রেনে জম্মুতে যাওয়ার সময় ছোট মেয়েকে নিয়ে অন্য সিটে শুয়েছিলাম। মাঝরাতেই ইদ্দু আমার চার মেয়েকে ছুড়ে ফেলে দেয়। সহযাত্রীরাও কিছুই টের পায়নি। আমিও কিছু বুঝতে পারিনি।

তিনি বলেন, ঘুম ভেঙে মেয়েদের খুঁজে না পেয়ে ইদ্দুর কাছে জানতে চাই। সে পরিস্কারভাবে বলে দেয়, 'ওদের ফেলে দিয়েছি'।

আফরিনা বিপদ ঘণ্টা বাজানোর কথা বললে তাকে আর কোলের মেয়ে শাহজাদীকেও ছুড়ে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয় ইদ্দু।

আফরিন জানান, ইদ্দুর হুমকির জেরে গোটা রাস্তা চুপ ছিলেন। এর পর ট্রেন জম্মু পৌঁছালে তাকে ও তার মেয়েকে ছেড়ে পালায় ইদ্দু। তার পর কোনো রকমে মেয়েকে নিয়ে তিনি বিহার ফেরেন। তখনও জানতেন না বাকি সন্তানরা কী অবস্থায় রয়েছেন।

পুলিশ অবশ্য তিনজনকে আহতাবস্থায় খুঁজে পায়। আর ফেলে দেওয়া চার বোনের একজন মারা গেছে।

ভেঙে যাওয়া পায়ে প্লাস্টার লাগানো অবস্থায় সীতাপুর জেলা হাসপাতালে শুয়ে কাতরাচ্ছিল ওই দুর্ভাগা চার মেয়ের একজন আলগুন খাতুন (৯)। সে জানায়, তার বাবা চলন্ত ট্রেন থেকে তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়। তার আরও তিন বোন রাবিয়া (১২), মুনিয়া (৭) ও চার বছর বয়সী বোন সামিনাকেও ছুড়ে ফেলে দেয়। তার মধ্যে মুনিয়া মারা গেছে বলে তাকে জানিয়েছে তার আম্মি (মা)।  

এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন আফরিনা খাতুন। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন।

আলগুনের বক্তব্যকে প্রাথমিক তথ্য ধরে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। কারণ, তিন বোনের মধ্যে একমাত্র আলগুনই পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছে।

এদিকে হাসপাতালে যেন বাকরুদ্ধ সন্তান হারানো মা আফরিনা খাতুন। কিছুক্ষণ পরপর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠছেন। চিৎকার করে বলছেন, মেয়ে জন্ম দেওয়ার এত বড় মূল‌্য আমাকে দিতে হলো!

অভিযুক্ত বাবাকে খুঁজতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, তারা ইদ্দুকে আটক করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। সর্বশেষ জম্মুতে ইদ্দুর মোবাইল ফোন ট্রাক করা হয়েছিল।  -হিন্দুস্থান টাইমস

সম্পর্কিত খবর