বনভান্তের শততম জন্মোৎসব পালিত

বনভান্তের শততম জন্মোৎসব পালিত

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

শত বছরপূর্ণ হলো মহাপরির্বানপ্রাপ্ত বৌদ্ধ আর্য্যপুরুষ মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনান্দ মহাস্থবির বনভান্তের। তাই নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে বনভান্তের জন্মোৎসব পালন করে পার্বত্যাঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।  

মঙ্গলবার ভোর পৌনে ৬টায় রাঙামাটি রাজবন বিহারের কেক কেটে বনভান্তের জন্মোৎসবের সূচনা করেন তারই শিষ্যসংঘের প্রধান প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। এরপর ফুল হাতে ছুটেন রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত অগণিত পুণ্যার্থীরা।

 

ভোরের সূর্য পূবের আকাশে উঁকি দেয়ার আগেই রাঙামাটির প্রধান সড়ক মিশে যায় লাখো মানুষের পাদভারে। সে সময় রাঙামাটি রাজবন বিহারের ৩২ একর বিস্তৃত এলাকা পরিণত হয় লোকারণ্যে। সব বিভেদ ভুলে নগ্ন পায়ে সবাই একাকার ফুল হাতে। মহাপরির্বানপ্রাপ্ত বৌদ্ধ আর্য্যপুরুষ মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনান্দ মহাস্থবির বনভান্তের প্রতি জানায় গভীর শ্রদ্ধা।

ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় সংরক্ষিত বনভান্তের দেহধাতু (বিশেষ কফিন) রাখা ঘরটি। এ মহাপুণ্যানুষ্ঠানে সদ্ধর্মানুরাগী অগণিত পূণ্যার্থীর পাশাপাশি ঢল নামে হাজার হাজার দর্শনার্থীর। সব ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়ের লক্ষাধিক নারী-পুরুষের মহাসম্মিলনে পুরো বিহার এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। হাজারও মানুষের পাদভারে জনসমুদ্রে পরিণত হয় রাজপথ থেকে রাজবন বিহার এলাকা। যেন তিল ধারণের জায়গাটুকু অবশিষ্ট ছিল না কোথাও।  

ধর্মীয় প্রার্থনা ও লাখো মানুষের কণ্ঠে সাধু, সাধু, সাধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় পুরো রাজবন বিহার। রাতভর চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নাচ গান সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান মালা। আতশবাজির ঝলকানিতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পরে রাঙামাটি শহরে।

রাঙামাটি রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদে সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, বৌদ্ধধর্মীয় মহাগুরু বনভান্তে ১৯২০ সালের ৮ জানুয়ারি রাঙামাটি সদরের ১১৫ নম্বর মগবান মৌজার মোড়ঘোনা গ্রামের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি দেহত্যাগ করেন তিনি। বনভান্তে জীবদ্দশাকালে অধ্যক্ষ হিসেবে রাজবন বিহারে অবস্থান করেছিলেন। এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে বনভান্তের শততম জন্মোৎসব।  

এর আগে বনভান্ত্রের জন্মোৎসব উপলক্ষে ২ জানুয়ারি থেকে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে রাঙামাটি রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদ। শহরে বৌদ্ধধর্মীয় গ্রন্থ ‘ত্রিপিটক’ শোভাযাত্রা প্রদর্শন, বনভান্তের দুর্লভ আলোকচিত্র নিয়ে স্থিরচিত্র প্রদর্শনীর, ভিক্ষুসঘের পবিত্র ত্রিপিটক পাঠ ছাড়াও অনুষ্ঠিত হয়েছে বনভান্তেকে নিয়ে সঙ্গীত ও রচনা প্রতিযোগতা।  

এ ছাড়াও প্রতিদিন সন্ধ্যায় হাজার প্রদীপ ও আকাশ বাতি প্রজ্জ্বলন করা হচ্ছে। বনভান্তের শততম জন্মবার্ষিকীতে কেক কাটা, ধর্মীয় সভা, পঞ্চশীল প্রার্থনা, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, বুদ্ধমূর্তি দান করা হয়। সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও আকাশ প্রদীপ উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মহাপরির্বানপ্রাপ্ত বৌদ্ধ আর্য্যপুরুষ মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনান্দ মহাস্থবির বনভান্তের শত বছর পূর্ণ আনুষ্ঠান মালা।


NEWS24▐ Kamrul 

সম্পর্কিত খবর