ইভটিজিংয়ে ২২ দিনেই খুলনায় ঝরে গেল ৩ প্রাণ

প্রতীকী ছবি

ইভটিজিংয়ে ২২ দিনেই খুলনায় ঝরে গেল ৩ প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনায় বখাটেদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে । ২২ দিনের ব্যবধানে খুলনা মহানগরী, দাকোপ ও বাজুয়া ইউনিয়নে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে তিন ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। অনেক ছাত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।  

আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসার পথে বখাটেরা উত্যক্ত করত।

এমনকি কারও কারও বাড়িতে গিয়েও বখাটেরা প্রেমের প্রস্তাব, এমনকি অপহরণের চেষ্টা করে বলে জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।

জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর রাতে মহানগরীর হরিণটানা বাগমারা এলাকায় বখাটেদের হুমকিতে আত্মহননের পথ বেছে নেয় মেধাবী স্কুলছাত্রী সামছুন্নাহার চাঁদনী। ওই রাতে বখাটেরা বাড়িতে এসে তাকে অপহরণের চেষ্টা করেছিল।

একইভাবে বখাটের নির্যাতনে ৬ নভেম্বর দাকোপ সরকারি এল বি কে মহিলা কলেজের ছাত্রী জয়ী মন্ডল ও ২৭ অক্টোবর বাজুয়া এসএন ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী বন্যা রায় আত্মহত্যা করেন। এছাড়া ২ নভেম্বর দুপুরে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ইভটিজিংয়ের শিকার খুলনা আযমখান কমার্স কলেজের আরেক ছাত্রী। এসব ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে থানায় তিনটি মামলা হয়েছে।  

সচেতন মহল মনে করছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গায়ে না মাখানো ভাব আর অপরাধীদের রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের কারণে ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধ বাড়ছে। পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করলেই থানায় গিয়ে হাজির হচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। আবার অনেক ভিকটিম ভয়ে অভিযোগ পর্যন্ত করতে পারছেন না। তাতে আরও বিপদে পড়তে হচ্ছে তাদের। এমনকি অভিযোগ করলে পুলিশ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা্ নেওয়ার আগেই কোনভাবে অপরাধী তা জেনে যাচ্ছেন। ফলে তারা এসে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। হয়রাণি করছেন। ফলে অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে ভিকটিমের পরিবার।

নারীবাদী সংগঠন খুলনা প্রগতিশীল নারী সমাজের সদস্য সচিব সুতপা বেদজ্ঞ জানান, সহজলভ্য ইন্টারনেটের যথেচ্ছ ব্যবহার ও রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। বখাটেদের উৎপাত বন্ধ করার জন্য তিনি এসব অপরাধীদের দ্রুত কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
 
এদিকে সর্বশেষ ১২ নভেম্বর খুলনা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় ইভটিজিংয়ের ঘটনা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে ওই সভায় বখাটেদের দৌরাত্ম্য ও তৎপরতা রুখতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়।  

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মো. আব্দুল্লাহ আরেফ জানান, জনগণ এগিয়ে না এলে পুলিশের একার পক্ষে ইভটিজিং নির্মূল করা কঠিন। ইভটিজিং প্রতিরোধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

সম্পর্কিত খবর