যুবলীগ নেতা হত্যার ঘটনায় নাটোর থমথমে

যুবলীগ নেতা হত্যার ঘটনায় নাটোর থমথমে

নাটোর প্রতিনিধি

যুবলীগ নেতা হাসান আলী হত্যার ঘটনায় থমথমে অবস্থায় রয়েছে নাটোরের দত্তপাড়া বিসিক শিল্পাঞ্চল এলাকা। শুক্রবার সকাল থেকেই বাজারের সমস্ত দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর পুড়িয়ে দেওয়া বাড়ি-ঘরসহ বাজার এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।

শুক্রবার দুপুরে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

নিহতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান এবং অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন।

আধিপত্য বিস্তাররকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দত্তপাড়া বাজারে ১নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি হাসানকে কুপিয়ে হত্যা করে স্থানীয় ইউপি সদস্য সালাউদ্দিন সেন্টুর সমর্থকরা। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী সেন্টুসহ ২টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়।

এদিকে, নিহত হাসান আলীর বাড়িতে গিয়ে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে গিয়ে নাটোর-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, হাসান আলীর হত্যাকারী যেই হোক তাদের রেহায় নেই।

হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারসহ দ্রুত বিচারের জন্য সব কিছু করা হবে।

অপরদিকে, হাসান আলীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে ফতেঙ্গাপাড়া সহপুরো দত্তপাড়া এলাকায়। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে ছিল চতুর্থ সন্তান। শুক্রবার সকালে নিহত হাসানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বুক চাপড়ে কাঁদছেন হাসানের স্ত্রী আয়েশা বেগম। বড়বোন হাসিনা বেগম ভাইয়ের শোকে কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছেন। মা হাজেরা বেগম ছেলের মৃত্যুতে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। আর হাসানকে মানুষ করা ভাবী আলেয়া বেগমের বিলাপ ভারি করে দিচ্ছে আশপাশের পরিবেশ।  

প্রতিবেশীরাও কেঁদে চলেছেন হাসানের জন্য। কেউ বিশ্বাস করতে চাচ্ছেননা হাসান আর নেই। এলাকায় প্রতিবাদী হিসেবে সবার কাছে প্রিয় ছিল হাসান। বাদ আছর দত্তপাড়া মাদ্রাসা মাঠে নিহতের জানাজা নামাজ শেষে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। বিকেলে দাফন শেষেহত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী।

পুলিশ বলছে, এক সপ্তাহ আগে অপর একটি হত্যা মামলায় কারাগারে আটক থাকা সজীব ও সোহান জামিনে মুক্ত হয়। মুক্ত হয়েই তারা পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হত্যার আগে বৃহস্পতিবার দিনভর সেন্টুর নেতৃত্বে তারা হাসান আলীকে নজরদারীতে রাখে। দিনশেষে দত্তপাড়া বাজারে একটি চা দোকানে এসে বসলে পেছন থেকে হামলা করে উপর্যুপরি কুপিয়ে হাসানকে গুরুতর আহত করে একটি হত্যা মামলার জামিনে থাকা আসামি সজীব ও সোহান।  

পরে হাঁসুয়া উচিয়ে বীরদর্পে বাজার থেকে বেরিয়ে আসে। ভরা বাজারে এসময় হাসান আলীকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। উল্টো পুলিশি হয়রানি এড়াতে যে যার মতো দেকানপাট বন্ধ করে সটকে পড়েন।

হাসানের পরিবারের দাবী, পূর্ব বিরোধের জেরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও হাসানের সাথে বিরোধে জড়ান সেন্টু। সেই বিরোধ মারামারি পর্যন্ত গড়ায়। সেসময় স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বিরোধ মিমাংসার ব্যবস্থা করলেও ক্ষোভ ছাই চাপা থেকে যায়। বৃহস্পতিবারের এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও প্রত্যক্ষ সহযোগি ইউপি সদস্য সালাউদ্দিন সেন্টু।

এলাকাবাসীর দাবি, পুরো হরিশপুর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে ইউপি সদস্য সালাউদ্দিন সেন্টু আর তার দুই সহযোগি সোহান ও সোহাগ। প্রতিটি অপকর্মের সাথেই তারা তিনজনের কেউ না কেউ জড়িত। বছর দুয়েক আগে শহরের কানাইখালীতে এক কাঁচ ব্যবসায়ীকে হত্যা মামলার মূল আসামি ছিলেন সজীব ও সোহান।


(নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল)

সম্পর্কিত খবর