রাঙামাটিতে এবার আ.লীগ নেত্রীকে কুপিয়ে জখম

ঝর্ণা খীসা

রাঙামাটিতে এবার আ.লীগ নেত্রীকে কুপিয়ে জখম

যুবলীগ নেতা হত্যার প্রতিবাদে হরতাল চলছে
ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

এবার সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করলো রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ঝর্ণা খীসাকে। এ ঘটনায় আহত হয় তার পরিবারের বাকি সদস্য। আহতরা হলেন- তার স্বামী জীতেন্দ্র লাল চাকমা ও ছেলে রণবিষ্ণ চাকমা। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে রাঙামাটি শহরের বিজয় নগর এলাকায় ভালেদী পাড়ায় এঘটনা ঘটে।

বর্তমানে তাদের আশংকাজনক অবস্থায় রাঙামাটি জেনারেল হাসপতালে ভর্তি রয়েছে।

রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ঝর্ণা খীসা অভিযোগ করে বলেন, ভোর রাতে ১০/১৫ জনের একদল মুখোশধারী সশস্ত্র যুবক জোর পূর্বক ঘরে ঢুকে আমাকে এলোপাতাড়ি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। এসময় আমার স্বামী ও সন্তান আমাকে বাচঁতে এগিয়ে আসলে তাদেরও সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। আমি তাদের বলছিলাম কেন আমাদের মরছো? তারা তখন অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়ে বলে, 'বক্তব্য দেওয়ার খুব ইচ্ছা তাই না? ভবিষ্যতে আর এ মুখে বক্তব্য দিতে পারবি না।

' তখন আমি বুঝতে পেরেছি গত বুধবার বিকালে জুরাছড়ি যুবলীগের সহ-সভাপতি অরবিন্দু চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে ও হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখার অপরাধে তারা আমাকে মারছে।

এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর বলেন, একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা করছে একটি নামধারী সশস্ত্র গ্রুপ।

আমরা এ নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এসব ঘটনায় আজ আমরা রাঙামাটি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করছি। বিকালে রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ঝর্ণা খীসা ওতার পরিবারকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হবে। এছাড়া সন্ত্রাসীদের চিহ্নত করে তাদের বিরুদ্ধে মামালা করা হবে।
এদিকে, জুরাছড়ি উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি অরবিন্দু চাকমা হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে রাঙামাটিতে জেলা যুবলীগের ডাকে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে হরতালের সমর্থনের মাঠে নামে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হরতালের কারণে রাঙামাটি শহরের সকল দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে। জেলার বাইরে ও অভ্যন্তরীণ রুটে কোন যানবাহন চলাচল করছে না। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ৬টি নৌ-রুটেও সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।  

রাঙামাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পিকেটিং করতে দেখা গেছে যুবলীগের নেতাকর্মীদের। অন্যদিকে রাঙামাটি নানিয়ারচর উপজেলার ৯নং ওয়ার্ডে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর ও নব্য মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ কমিটির সদস্য অনাধি রঞ্জন চাকমা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে আধা বেলা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ পালন করছে সংগঠনটি। তাই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও নাশকতার ঘটনা এড়াতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আকবর হোসেন চৌধূরী জানান, পরিকল্পিতভাবে প্রথমে জুরাছড়ি উপজেলা যুবলীগের নেতা অরবিন্দু চাকমাকে হত্যা করেছে। পরে বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাসেল মার্মা ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ঝর্ণা খীসাসহ তার পরিবারকে কুপিয়ে আহত করেছে। আমরা এসব অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়।

রাঙামাটি কতোয়ালী থানার কর্মকর্তা (ওসি) সৎজীত বড়ুয়া জানান, হরতাল চলাকালে বর্তমানে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিভিন্ন এলাাকায় অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়ন করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর ও জুরাছড়ি উপজেলায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছে সাবেক ইউপি মেম্বর অনাধী রঞ্জন চাকমা ও উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি অরবিন্দু চাকামা। এছাড়া একই দিন সন্ত্রাসী হামলায় মারাত্মক আহত হয়েছে বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাসেল মার্মা। এসব ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।