ভারতে মোট ডাউনলোডের অর্ধেকই পর্নোগ্রাফি

প্রতীকী ছবি

ভারতে মোট ডাউনলোডের অর্ধেকই পর্নোগ্রাফি

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না শিশু পর্নোগ্রাফি। মানুষের বিকৃত যৌন লালসাকে পুঁজি করে যুগের পর যুগ এক শ্রেণির অসুস্থ মানসিকতার মানুষ শিশুদের দিয়ে পর্নোগ্রাফি কন্টেন্ট তৈরি করে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এটা করতে কখনো মেয়ে শিশুদের অপহরণ করা হচ্ছে, কখনো ছলনার আশ্রয় নিয়ে তাদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় বইছে।

 শিশু পর্নোগ্রাফি বন্ধে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। কঠোর আইন করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর এসব বন্ধ করতে। তবে কোন উদ্যোগই যেন শিশু পর্নোগ্রাফি বন্ধে শতভাগ সফল হচ্ছে না।
একইসঙ্গে অনেক দেশে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসেই শিশুদের দিয়ে করানো হচ্ছে দেহ ব্যবসা। এরই মধ্যে জানা গেল, এই মুহূর্তে শিশু পর্নোগ্রাফির সবচেয়ে বড় যোগানদাতা ও উপভোক্তার দেশ ভারত।

সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এহেন পরিস্থিতিতে দেশটির শিশুদের যৌন নিপীড়ন নিয়ে সামনে এসেছে আরও এক ভয়ঙ্কর তথ্য।  

শিশুদের এই যৌন লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে সরব হওয়া এক নারী সমাজকর্মী ইন্টারনেটে change.org নামের একটি আন্তর্জাতিক সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এই তথ্যকে সামনে এনেছেন। তাঁর দাবি, দেশটিতে ১০ বছর থেকে ১৫ বছরের শিশুদেরকে লালসার শিকার বানানো হচ্ছে। এমনকি, এই শিশুদেরকে বয়সে বড় দেখাতে মোটা-তাজা করণের জন্য দেওয়া হচ্ছে হরমোন ইনজেকশন। ফলে ১০ বছরের একটি শিশু দেখতে পূর্ণবয়স্ত নারীর মতো মনে হচ্ছে। এরপর তাদেরকে শ্রমজীবী থেকে শুরু করে সমাজে উঁচু স্তরে অবস্থান করা মানুষের লালসার শিকার বানানো হচ্ছে। মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে এসব মেয়েকে তুলে দেওয়া হচ্ছে 'খদ্দেরের' হাতে।

সম্প্রতি দেশটির মহারাষ্ট্র প্রদেশে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে সকলের সামনে এনেছেন শাইনা এনসি নামে এক নারী সমাজকর্মী। মহারাষ্ট্র পুলিশ সম্প্রতি একটি নিষিদ্ধ পল্লিতে তল্লাশি চালিয়ে বেশকিছু যৌন কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। এই দলে রতি (নাম পরিবর্তিত) নামে চৌদ্দ বছরের একটি মেয়েও ছিল। সে জানায়, নিষিদ্ধ পল্লির প্রধান মাত্র ১০০ টাকার জন্য তাকে শরীর বিক্রি করতে বাধ্য করত। দিনে অন্তত ৩০ জন গ্রাহকের সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হত।  

যদিও হঠাৎ দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না রতির বয়স মাত্র চৌদ্দ। মেয়েটি জানায়, বড়দের মতো দেখানোর জন্য তাকে নিয়মিত হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হত। এসব ওষুধের প্রভাবে মাঝেমধ্যেই সে অসুস্থ হয়ে পড়তো। ভেতরে ভেতরে খুব দুর্বল বোধ করলেও বাইরে থেকে বোঝা যেত না।

এতো গেল শিশু যৌনকর্মীর কষ্টগাথা। অন্যদিকে ইন্টারনেটও এখন ভারতীয় পর্নোগ্রাফিতে সয়লাব। আর এগুলোর একটা বড় অংশই শিশু পর্নোগ্রাফি। জানা গেছে, ভারতে সবচেয়ে বেশি পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট আপলোড হয় কেরল থেকে। আর সবচেয়ে বেশি সেই কনটেন্ট দেখা হয় হরিয়ানাতে। এদিকে কোন ডিভাইস দিয়ে সবচেয়ে বেশি দেখা হয় এসব 'নিষিদ্ধ' কন্টেন্ট- গবেষণায় উঠে এসেছে সেসব দিকও। এই ধরণের জিনিস এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দেখা হয় মোবাইল ফোনে। সাইবার বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে সারাদিন যা ডাউনলোড হয় তার মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট।

ভারতীয় সাইবার আর্মির পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই ধরণের কনটেন্ট ব্যবহারকারীর তালিকায় পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও। হরিয়ানা, পাঞ্জাবের পরই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, দিল্লি, আসাম।  

সংস্থার মুখপাত্র বলেন, শিশু পর্নোগ্রাফির জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য টার্গেট গ্রাম ও ছোট শহরের শিশুরা। তবে ভাববেন না শহরের শিশুরা নিরাপদ। শহরের স্কুলে যাওয়া শিশুরাও এই তালিকার যথেষ্ট ওপরের দিকে রয়েছে। প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ জন এই ধরণের কনটেন্টের জন্য পরিচিত সার্চ ইঞ্জিনগুলিতে খোঁজ করে।

সম্পর্কিত খবর