শিল্পীকে সরকার বা কেউই তৈরি করেন না

শিল্পীকে সরকার বা কেউই তৈরি করেন না

-কনকচাঁপা
নিউজ ২৪ ডেস্ক

বন্ধুরা আজ আট বছর হল আমি এই ফেসবুকে তোমাদের সাথে আছি, খুব কম সময় আমি শিল্পী হিসেবে কথা বলি কারণ আমি শিল্পী হলেও আসলে তোমাদেরই একজন। যাইহোক আজ একজন শিল্পীর প্ল্যাটফর্ম থেকে কিছু কথা বলি। তোমরা কিছু মনে করো না।

বাংলাদেশে একটি পরিবারে যখন একজন শিল্পী জন্ম নেয় প্রথমত বাবা মা তা আমলেই নেন না।

তারা যদি আমলেও নেন দেখা যায় হয়তো তারা অর্থনৈতিকভাবে অক্ষম তার ঘরে জন্মানো শিল্পীকে গড়ে তুলতে। অনেক সময় বাবা মা যদিও সেই সন্তান কে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর হন দেখা যায় তার সেই বিষয়ক কোন সঠিক শিক্ষা ইন্সটিটিউট নেই। কিছু পরিবার আছে সন্তান গান নাচ অভিনয় শিখতে চাইলে তাকে ত্যাজ্য করেন! শিল্পী তখন নিজের জীবন নিজে গড়ে খেয়ে না খেয়ে।

এক্ষেত্রে অস্বাভাবিক আবেগপ্রবণ না হলে কেউই এই অনিশ্চিত জীবনে পা দেন না।

কারণ শিল্পীর যতই প্রতিভা থাক তার উপযুক্ত পারিশ্রমিক কখনোই পান না বিশেষ করে বাংলাদেশে। আর এটাও সত্যি যে একজন শিল্পী কখনো আর দশ টা চাকুরীজীবী মানুষের মত হিসেবি হতে পারেন না। তা পারলে তিনি এই অনিশ্চয়তার জীবন বেছেই নিতেন না। ধরা যাক একজন মানুষ অনেক অনিশ্চয়তার পর শিল্পী হলেন, পায়ের নীচে মাটি আসলো, তখনও কিন্তু তিনি শিল্পীর দায়িত্বে ব্যস্ত। ব্যংকে কয় টাকা জমলো এই হিসেব শিল্পী করেন না বেশির ভাগ। সেই ধাঁচেরই তিনি নন। উপরন্তু তাকে শিল্পীর ঠাটবাট বজায় রাখতে অনেক কিছুতেই, নিজেকে, নিজের বাসস্থান কে সাজাতে হয় যা তার আসল বিত্তে পড়েনা। বাংলাদেশিরা একজন জনপ্রিয় শিল্পীকে কখনোই পাবলিক বাসে দেখা পছন্দ করেন না। তারা শিল্পীদের একটা ফ্যান্টাসি ভাবনায় জড়াতে পছন্দ করেন। শিল্পীরাও সেই ভাবনার জালে পা দিয়ে মিথ্যা স্টারইজম এ ঢুকে পড়েন।

এখানে বলে রাখি বাংলাদেশের শিল্পীরা এখনো রয়ালটি পান না যা তার একান্তই প্রাপ্য। একজন প্লেব্যাক সিংগারের কত গান রেডিও টিভিতে বাজে তার হিসাব জনগণ জানেন কিন্তু সরকার শিল্পীর সাথে সে হিসাব চুকান না। একজন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী যতকিছু পেতে পারেন বাংলাদেশের শিল্পীরা কি সবটা পাচ্ছেন?

শিল্পী যতদিন কাজে ব্যস্ত থাকেন ততদিন ই তার হাতে পয়সা থাকে এবং সেটা সরকারি চাকুরীজীবীর মত লম্বা সময় ধরে না। বেশিরভাগ শিল্পীরই স্থায়ীত্ব কাল বড়জোর পনের বছর। এর পর শুরু হয় তাকে ছুড়ে ফেলার পালা। শিল্পী সিনিয়র হতে না হতেই তাকে ত্যাগ করা বাংলাদেশের শ্রোতা, দর্শক, এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বদ অভ্যাস। সেক্ষেত্রে শিল্পী খুব শীঘ্রই বেকার হয়ে পড়েন। মধ্য বয়স আসার আগেই তিনি ব্রাত্যজীবন এ চলে যান।  

মন শরীর দুটোই ভেংগে পড়ে। এইবেলা শিল্পী মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। হয়তো সবাই না কিন্তু অনেকেই দুরারোগ্য ব্যাধির কবলে পড়েন। ভেজাল খাবার খেয়ে বাংলাদেশের সব মানুষেরই এখন শেষ অধ্যায় দুরারোগ্য ব্যাধি। কিন্তু ওই যে কারণে তিনি যৌবনে খবর হতেন ঠিক সেই একই কারনে এই দুরারোগ্য ও লোকমুখে ছড়াতে সময় লাগেনা।  

শিল্পী তার সহায় সম্বল হারান, জনপ্রিয়তা তো আগেই হারিয়েছেন, এখন তার পাওনা সরকারের সামান্য কিছু সহায়তা এবং অতি আগ্রহী পাবলিকের তিরস্কার। এই হল শিল্পীর ভবিতব্য! যে সময়ে সামান্য কিছু সহানুভূতি পাওয়ার কথা সেই সময়ে পাচ্ছেন দুস্থ শিল্পী উপাধি।

আমার ইচ্ছা করে এই প্রার্থনা করতে যে এই দুনিয়াতে কেউ যেন শিল্পী হয়ে না জন্মায়। পড়ে থাক এই পৃথিবী গানহীন, সুরহীন, বাগানে না ফুটুক ফুল, পাখি চলে যাক অন্য কোনও দেশে। আর সব সন্তানরা চাকুরী করে পয়সা জমিয়ে নিশ্চিত জীবন যাপন করুক। মন্দ কি!

হে পাবলিক! মনে রাখবেন এই শিল্পী নামক বেওকুফ জাতির মানুষ গুলো কখনোই সমাজে বেশী ছিলেন না। তারা অল্প সংখ্যক এবং ক্ষনজন্মা। তাদের জন্য এতো ভাবনা এতো আলোচনার কি দরকার!

আর একটা কথা জেনে রাখবেন হে সম্মানিত পাবলিক ---- শিল্পীকে সরকার বা কেউই তৈরি করেন না, পৃষ্ঠপোষকতাও করেন না কখনোই। সবার সৌভাগ্য যে তাদের আমলে একজন একজন শিল্পী জন্ম নেন আর তার কৃতকর্মের ফল হিসেবে গান কবিতা সাহিত্য এই সমাজকে কল্যাণময় করে গুছিয়ে রাখে।

(কণ্ঠশিল্পীর ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত)

এই রকম আরও টপিক