টানা বর্ষণে দিনাজপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, জনজীবন বিপর্যস্ত

টানা বর্ষণে দিনাজপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, জনজীবন বিপর্যস্ত

নিউজ ২৪ ডেস্ক

দিনাজপুরে টানা বর্ষণে বেড়েছে জেলার নদ-নদীর পানি। পূনর্ভবা ও আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। অতি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে খাল-বিল, ডোবা-নালাসহ নিচু এলাকা। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।

টানা বর্ষণে কাজ না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। জেলায় কয়েক হাজার একর জমির ফসল পানির নিচে।  

এদিকে, শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস জানায়।

অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে বীরগঞ্জের শতগ্রাম ইউপির বলদিয়াপাড়া, বড়সুতু গ্রামের বাড়ি ও জমি প্লাবিত।

প্লাবিত হয়েছে সুজালপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা ওইসব পরিবারের লোকজন গবাদি পশুসহ আসবাবপত্র নিয়ে স্থানীয় বলদিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা এবং সুজালপুর ইউনিয়নের উত্তর মাকড়াই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা।

খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নে টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়ে প্রায় ৯০০ বাড়িতে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

ঘোড়াঘাট উপজেলার বালুপাড়া, হঠাৎপাড়া, ঋশিঘাট, খাইরুল, চাঁদপাড়া, গুয়াগাছী, বিন্যাগাড়ী, কৃষ্ণরামপুর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত।  

আর গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে দিনাজপুর শহরের উপশহর, উত্তর রামনগর হিরারহার, গোবরাপাড়া, বাঙ্গীবেচা ঘাট এলাকা, কাঞ্চন কলোনী, সাধুর ঘাট এলাকা, দপ্তরীপাড়া, হঠাৎপাড়া এবং বিরল উপজেলাসহ আরও কয়েকটি উপজেলার নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

চিরিরবন্দর উপজেলার রাণীবন্দর এলাকায় দিনমজুর মোহাম্মদ আলী জানান, দুইদিন ধরে কোন কাজ নেই। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে কাজের সন্ধান করেও রাণীরন্দর বাজারে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোন কাজের সন্ধান মেলেনি।

বীরগঞ্জের মরিচা ইউনিয়নের গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. রেজাউল করিম জানান, অব্যাহত বর্ষণের ফলে বিদ্যালয় মাঠে হাঁটু পানি জমে গেছে। কয়েকটি ক্লাসরুমে বৃষ্টির পানি জমে গেছে। ফলে শিক্ষক উপস্থিত হলেও শিক্ষার্থী না আসায় শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে, টানা বর্ষণে কাঁচা বাজারে মরিচ এবং পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়েছে আরও এক দফা। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম।  

গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে শনিবারও অব্যাহত বৃষ্টিপাত থাকার কারণে শ্রমজীবী মানুষ কাজে যেতে পারেনি। শহরের রাস্তাগুলো ফাঁকা। দোকানপাট বেশিরভাগই বন্ধ। বৃষ্টির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারে কম ছিল। টানা অতিবৃষ্টির কারণে জনজীবনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী জানান, মৌসুমী আবহাওয়ার লঘু নিম্নচাপ প্রবাহিত হওয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে শনিবার বৃষ্টিপাত কমে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।  

অপরদিকে দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুজ্জামান খান জানান, দিনাজপুরের পূনর্ভবা নদী, আত্রাই নদী, চিরিরবন্দরের ইছামতি নদী, ফুলবাড়ীর ছোট যমুনা নদী, পার্বতীপুর ও নবাবগঞ্জের করতোয়াসহ জেলার ছোট-বড় ১৭টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবার বেলা ১২টার দিকে পূনর্ভবা ও আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার কাছে অবস্থান করছে।