এতো সমস্যা কেন আপনাদের?

জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া

ফেসবুক লাইভে পিয়ার প্রশ্ন

এতো সমস্যা কেন আপনাদের?

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

ফেসবুকে আপলোড করা ছবির নিচে ভক্তদের বিব্রতকর মন্তব্য ও পরামর্শে চটেছেন মডেল ও অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া। এ নিয়ে গতকাল ফেসবুক লাইভে এসে নিজের ক্ষোভ ও কষ্টের কথা জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে ওইসব মন্তব্যকারী ও পরামর্শদাতাদের উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। প্রয়োজনে তাকে (পিয়া) ফেসবুক-ইন্সটাগ্রাম থেকে আনফলো করার পরামর্শও দিয়েছেন এই মডেল।

লাইভে এসে পিয়া বলেন-

হ্যালো, আজকে হঠাৎ করে লাইভে চলে আসা একটা কারণেই। আমি ফেসবুকে যে পোস্টগুলো দেই, ওখানে যে কমেন্টগুলো দেখি, মূলত ওইগুলোর জন্যই। শুধু কমেন্টই না, আমরা বাঙালিরা সচরাচর যেভাবে কথা বলি, যেসব সমস্যা মোকাবেলা করি ওইটা নিয়েই কথা বলব।  

কিছুক্ষণ আগে একটা পোস্ট দিয়েছি।

সেখানে আমার দুইটা ছবি দেওয়া আছে। দেখি একজন কমেন্টস করল আপনি বেশি শুকনা, আপনার ‘ওয়েট প্রোটন’ করা উচিত।

আবার আগে মডেল বা নায়িকা যারা ছিল তারা একটু 'ওয়েট প্রোটন' করলেই বলত, 'উহ, বাংলা সিনেমার নায়িকা বা বাংলাদেশের মডেল, মোটা তো হবেই'। মানে বাংলাদেশের অভিনেত্রী বা মডেল মানেই মোটা হবে। যখন আমরা ফিগার সচেতন হই, এগুলো নিয়ে কথা বলি, আমরা ওয়ার্কআউট করি, তখন আবার বলা হয় আপনি বেশি শুকনা, এতো শুকনা কেন? এতো শুকনা হলে ভালো লাগে না।

এরপর আবার বলা হয়- বাংলাদেশের মডেল ৫ ফিট ৪ ইঞ্চি হবে। তার থেকে বেশি তো হবে না। ইন্ডিয়ান বা বাহিরের মডেলগুলোকে দেখেছেন। তারা দেখতে অনেক লম্বা, কত সুন্দর। এবং যখন আমার কথা আসে, আমি ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি। তখন বলা হয় বেশি লম্বা, খাম্বার মতো, এতো লম্বা কেন? বাঙালি মেয়েদের এতো লম্বা মানায় না। অন্যদিকে, কালো হলে বলা হয় আপনি অনেক কালো, বড় মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দর। আমি নিজে ফেস (মোকাবেলা) করেছি। আমার বড় বোন অনেক সুন্দর। সবাই এসে বলত, বড় মেয়েটা বেশি সুন্দর, ছোটটা অত সুন্দর হয়নি। আবার কেউ যদি একটু ফর্সা হয়ে যায় তখন বলে, মেকআপ যখন করবেন, একটু ডার্ক করবেন, তাহলে বেশি সুন্দর লাগবে। মানে, যেটাই হবে সেটাই খারাপ।

আবার কিছু লিখলে, সুন্দর একটা স্ট্যাটাস দিলে বলবে, 'ও সেলিব্রেটি হয়ে গেছেন, বেশি ভাব দেখান তাই না?' আবার নরমাল একজন মেয়ে কিছু লিখলে সেখানেও সমস্যা – লাইফে তো আপনি নিজে কিছু করতে পারেননি, এতো কেন কথা বলেন?' মানে মেয়েরা যাই করবে তাই নিয়েই আপনাদের সমস্যা! এতো সমস্যা কেন আপনাদের, আমি জানতে চাই।

আমার ফেসবুক, আমি চালাই বা আমার ইনস্ট্রাগ্রামে ছবি আপলোড দেই। আপনার ভালো না লাগলে আনফলো করেন, কমেন্টস করার দরকার নেই। আপনাদের ডেকে ডেকে বলছি না, আপনি আমার ফেসবুকে আসেন, দেখেন, কমেন্টস করেন।

নিজেরা এসে- ‘আপু হিজাব পরেন’, ‘আপু আপনি কিন্তু জাহান্নামে যাবেন’, ‘আল্লাহর কথা চিন্তা করেন’ বলে বাসায় গিয়ে পর্নো দেখেন ‘সো হোয়াট ইজ দিস’। এতো যদি সমস্যা থাকে তাহলে বলবো- বাসার মধ্যে থাকেন। বাসায় ইন্টারনেট রাখবেন না, সবার জন্য ইন্টারনেট না। ‘বানরের হাতে খন্তি দিলে যে অবস্থা হয়, আমাদের তাই হয়েছে। ’

বানরের হাতে একটা খন্তা আছে মানে ইন্টারনেট আছে এবং একটা মোবাইল আছে। এখন ওটা দিয়ে আপনারা যা ইচ্ছা তাই করবেন। আমি জানি এসব বলে কাজ হবে না, যা করার আপনারা তাই করবেন। আপনারা বলছি- মানে পার্টিকুলার কিছু মানুষকে বলছি। যাদের এতো সমস্যা। সবাইকে বলছি না।

আমার ফেসবুকটাকে আমার মতো করে চালাতে দেন, আমি কীভাবে চালাই, না চালাই, আপনাদের সবাইকে মোস্ট ওয়েলকাম যদি আমাকে আনফলো করতে চান। কোন সমস্যা নেই। আমার যেটা ভাল লাগে, আমি সেটা করি। প্লিজ, আমি জাহান্নামে যাব, নাকি জান্নাতে যাব, সেটা আপনার না দেখলেও চলবে। আমার নাম জান্নাতুল ফেরদৌস কিনা, আমার নামের সাথে আমাকে মানায় কিনা, এটাও আপনার দেখার বিষয় না।

আপনি যদি এত ভালো হন, মানুষের জন্য এত কিছু করার ইচ্ছা থাকে, নিজের ছেলে-মেয়ে আছে, ভাই-বোন আছে; জানি নিজের ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোনও আপনার কথা শুনবে না, তাদেরও আলাদা লাইফস্টাইল আছে, তাহলে নিজে করেন। নিজের যেটা ভালো মনে হয় সেটা নিজে করেন। আমি লম্বা, না কালো, না শুকনা, না ফর্সা, জান্নাতে যাব না জাহান্নামে যাব, আপনাদের না দেখলেও চলবে। আমে যেমন আছি, অনেক খুশি আছি। ধন্যবাদ।

নিজের যেটা ভালো মনে হয় সেটা করেন, আমি লম্বা, না শুকনা, না কালো এবং জান্নাতে যাব, না জাহান্নামে যাব সেটা আপনাদের না দেখলেও চলবে। আমি যে রকম আছি, অনেক খুশি আছি। ধন্যবাদ।

(পিয়ার ফেসবুক লাইভ থেকে সংগৃহীত)

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর