সৌদি যুবরাজকে আবু জাহেলের সঙ্গে তুলনা

সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান।

সৌদি যুবরাজকে আবু জাহেলের সঙ্গে তুলনা

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানকে কুখ্যাত আবু জাহেলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এক টুইট বার্তায় কাতারের আমিরের ভাই জুয়ান বিন হামাদ আলে সানি এ মন্তব্য করেন।

টুইটার বার্তায় বলেছেন, যারা সব কিছুকে সংখ্যা ও আকার দিয়ে বিচার করে তারা কম বুদ্ধিসম্পন্ন। এ ধরনের ব্যক্তিরা শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়।

মোহাম্মদ বিন সালমানের এক অবমাননাকর মন্তব্যের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বদর যুদ্ধে কুরাইশরা আবু জাহেলের সংখ্যাভিত্তিক বিশ্লেষণ বিশ্বাস করেছিল। যদিও আবু জাহেল মুসলিম বাহিনীর যোগ্যতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল।

এর আগে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান মিশর সফরে গিয়ে কাতারের সরকার ও জনগণকে অবমাননা করে বলেছেন, কাতারের জনসংখ্যা মিশরের একটি সড়কের জনসংখ্যার সমান।

তিনি এও বলেন, সৌদি আরবের যে কোনো মন্ত্রীই কাতার সংকটের সমাধান করার যোগ্যতা রাখেন। এটা কোনো ব্যাপার না।  

সৌদি যুবরাজের এ বক্তব্যে কাতারের সরকার ও জনগণ ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছে।  

২০১৭র' জুন মাসে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব। সৌদি আরবের আহ্বানে সাড়া দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর।

আলোচিত নাম যুবরাজ সালমান
সৌদি রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। বছরের শুরুতেও পরিবারের আর দশটা প্রিন্সের মতো ছিল তাঁর অবস্থান। তবে ক্যালেন্ডারের পাতা যত উল্টাল, তাঁর অবস্থান ততই বদলে যেতে থাকল। ক্ষমতাবান হয়ে উঠলেন তিনি। একের পর এক ঘটনায় উঠে এল তাঁর নাম। বছরজুড়ে নানা খেল দেখিয়ে আলোচিত ব্যক্তি হিসেবে নাম লেখালেন তিনি। সৎভাই আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর বছর তিনেক আগে সৌদির সিংহাসনে বসেন বাদশাহ সালমান। প্রথমে ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্রাউন প্রিন্স, অর্থাৎ রাজবংশের পরবর্তী উত্তরসূরি ঘোষণা করেন। আর ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে করেন ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স। ভাতিজাকে সামনে রেখে আসলে ছেলেকে উত্তরসূরি হিসেবে প্রস্তুত করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। আস্থা অর্জন করায় বাদশাহ অনেক বিষয়ে ছেলেকে ভরসা করতে শুরু করেন। দেশটির পররাষ্ট্রনীতির চালগুলো মূলত প্রিন্স সালমানই চালতেন।

এই চালে ভালো খেল দেখিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন প্রিন্স সালমান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বিদেশ সফরের জন্য বেছে নেন সৌদি আরবকে। মে মাসে ট্রাম্পের ওই সফরে ওয়াশিংটন ও রিয়াদের মধ্যে কয়েক শ কোটি ডলার মূল্যের চুক্তি হয়। পুরস্কৃত হন প্রিন্স সালমান। পরের মাসে ৩১ বছর বয়সী ছেলেকে ক্রাউন প্রিন্স বা যুবরাজ ঘোষণা করেন বাদশাহ। সরিয়ে দেন ভাতিজাকে। ভবিষ্যৎ বাদশাহির পথ সুগম হওয়ায় পর্দার আড়াল থেকে সামনে চলে আসেন প্রিন্স সালমান। আরব বিশ্বে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে তিনি ইরানকে শায়েস্তা করার দৃশ্যমান উদ্যোগ নেন। ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কাতারকে শিক্ষা দিতে মিত্রদের নিয়ে মাঠে নামে সৌদি আরব। একযোগে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে তারা। আরোপ করে অর্থনৈতিক অবরোধ। যুক্তরাষ্ট্রকে হাতে না রেখে যে টেকা যাবে না, তা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন প্রিন্স সালমান। সামনে নিয়ে এসেছেন ‘ভিশন ২০৩০’ নামের একটি মহাপরিকল্পনা। এর মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। আর বিনিয়োগের মাধ্যমে এ কাজে সৌদির পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।

কর্মসংস্থান মানেই নতুন প্রজন্মের জন্য আশার আলো। তাই দেশটির তরুণদের মধ্যে প্রিন্স সালমানের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বয়সে তরুণ এই প্রিন্স কঠোর সমাজব্যবস্থায় নানা বিধি-নিষেধের মধ্যে থাকা তরুণদের মনের কথা পড়তে সক্ষম হলেন। তরুণ প্রজন্ম ও নারীরা খুশি হবেন—এমন উদ্যোগ নিয়ে তিনি নিজেকে জনগণের আরও কাছে নিয়ে গেলেন। সেপ্টেম্বরে সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতিসংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। এই আদেশের সুফল মিলবে ২০১৮ সালের জুন মাস থেকে। নারীরা তখন মনের আনন্দে গাড়ি চালাতে পারবেন। এই আদেশের দুই দিন পর দেশটির শুরা কাউন্সিল সিদ্ধান্ত দেয়, এখন থেকে সৌদি নারীরাও ফতোয়া জারি করতে পারবেন। শুধু তা-ই নয়, সৌদির কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্রীরা এখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারেন। প্রিন্স সালমান কট্টরপন্থী সৌদি আরবকে মধ্যপন্থী রাষ্ট্রে পরিণত করার পরিকল্পনার কথা জানান অক্টোবরের দিকে। এক গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ সম্মেলনে তিনি বলেন, সৌদি হবে সব মানুষের দেশ। তাঁর দেশ মধ্যপন্থী ইসলামের পথে ফিরে যাবে। আগে রাষ্ট্রটি এই আদর্শেই পরিচালিত হতো এবং সব ধর্ম ও পুরো বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত ছিল।

একের পর এক সাফল্য পেয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন প্রিন্স সালমান। ইচ্ছা প্রকাশ করেন দেশটি থেকে ঝেঁটিয়ে দুর্নীতি দূর করার। আবদার মেনে নিয়ে বাবা ছেলেকে প্রধান করে নতুন একটি দুর্নীতি দমন কমিটি ঘোষণা করেন। এরপর যা হয়, তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না অনেকেই। দুর্নীতির অভিযোগে ১১ প্রিন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। বিশ্লেষকেরা তখন বলেছিলেন, শাসনব্যবস্থায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তিনি এমনটা করেছেন। পরবর্তী সময়ে অবশ্য বিশ্লেষকদের কথার সত্যতা মেলে। কারণ, বছরের শেষের দিকে আর্থিক সমঝোতার মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী ওই অভিযানে গ্রেপ্তার প্রায় ২০ প্রিন্স ও কর্মকর্তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

আরেকটি ঘটনায় আলোচনায় আসেন সৌদির এই ক্রাউন প্রিন্স। নভেম্বরের দিকে সৌদি আরবে গিয়ে আকস্মিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। তাঁকে প্রিন্স সালমানই পদত্যাগে বাধ্য করেছিলেন বলে প্রচার আছে। কারণ, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতির ঘুঁটি তো তিনিই চালেন! হারিরি যে বাধ্য হয়ে এমনটা করেছিলেন, দেশে ফিরে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ার মাধ্যমে সেটাই প্রমাণিত হয়। নতুন বছর সৌদির জন্য আরও ভালো কিছু নিয়ে আসছে। এ বছর নারীরা মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে পারবেন। শুধু ত-ই নয়, বছরের শুরু থেকেই বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারবেন সৌদিরা। আর সবকিছুর পেছনে আছেন তরুণ প্রিন্স সালমান। তাঁর এসব উদ্যোগ কতটা সফল হবে, সুফল বয়ে আনবে, সময়ই তা বলে দেবে। তবে আরব বিশ্বের রাজনীতি নিয়ে তিনি যে আগামী বছরগুলোতেও ভালো খেলবেন, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সম্পর্কিত খবর