'আমরাই মেয়েদের হাতে পুতুল ধরিয়ে দেই'

সাথিরা জাকির জেসি।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ

'আমরাই মেয়েদের হাতে পুতুল ধরিয়ে দেই'

অনলাইন প্রতিবেদক

মেয়েরা কী করবে সেটা পরিবার থেকেই নির্ধারণ করে দেওয়া হয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক সহ অধিনায়ক সাথিরা জাকির জেসি। তিনি বলেন, আমার বাবা-মা যদি সমর্থন না দিতেন তাহলে আমি কখনো এত দূর আসতে পারতাম না। আমার এই উঠে আসার পেছনে আমার বাবা-মায়ের অনেক ভূমিকা রয়েছে।  

'এখন সময় নারীর' -এ স্লোগানকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কনফারেন্স হলে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ টোয়েন্টিফোর এ বৈঠকের আয়োজন করে।

জেসি বলেন, ছোটবেলা থেকে মেয়েদের হাতে পুতুল ধরিয়ে দেওয়া হয়। এটা মায়েরা দেয়, আমরাই দেই। আমার এক বছর বয়সী মেয়ের হাতে আমি বল দেই।

পুতুল দেই না। কেউ পুতুল উপহার দিলে আমি সেগুলো অন্য জায়গায় গুছিয়ে রাখি। ওর যদি বড় হয়ে পুতুল খেলতে ইচ্ছা হয় তখন তাকে দিবো। সে মেয়ে বলে বল খেলতে পারবে না এ ধরণের  চিন্তা যেন ওর মাথায় না ঢোকে সেটাই চেষ্টা করছি আমি।

তিনি বলেন, আমরা কীভাবে তৈরি হবো সে সিদ্ধন্ত পরিবার নিয়ে থাকে। তাই মা-বাবাকেও ভাবতে হবে। ২০০৭ সালে যখন শুরু করি তখন খুব কম মেয়েরা খেলতো। একটা সময় বলতো এ কেমন মেয়ে সারাদিন ছেলেদের সাথে খেলে। যখন জাতীয় দলে খেলে দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছি তখন তারা বাহবা দিয়েছে। তবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের জনপ্রিয়তা কম। কারণ আমরা শুরু করেছি অনেক পরে। তাই সময়ের ধারাবাহিকতায় নারীরাও এগিয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সময় এখন নারীর এগিয়ে যাওয়ার। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, রাজনীতি, অর্থনীতি ও নেতৃত্বে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা নারী ক্ষমতায়নের কথা বলি। কিন্তু , এখনো নারীকে অর্থের অভাবে রাস্তায় সন্তান প্রসব করতে হয়। সময়ের অনেক পরিবর্তন আসলেও এখনো গ্রামের মেয়েটি জানে না তার বয়ঃসন্ধিতে তার করণীয় কি? সে তার সমস্যা কার সঙ্গে শেয়ার করবে? তার মার শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সচেতনতা না থাকায় তার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত কী হবে তা সে জানে না। আমরা নারী দিবসের রঙ নিয়ে চিন্তা করি। রঙ বা দিবস তো দূরের কথা এখনো প্রত্যন্ত এলাকার নারী তার নূন্যতম অধিকারের কথাও জানে না। আমরা ২০ বছর আগের জায়গা থেকে হিসাব করলে দেখবো এখন হয়তো অনেক এগিয়েছি। কিন্তু নারীদের এগিয়ে নিতে আমাদের পদক্ষেপ আরো জোরালো হতে হবে। নারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। নারীদের এগিয়ে নিতে গণমাধ্যমেরও কাজ করতে হবে। নিজেদের অবস্থান থেকে নারীদের এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের নারী ক্রিকেটাররা, ফুটবলাররা মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, অন্য দেশের খেলোয়াড়দের পরাস্থ করছে। তখন আমরা আশার আলো দেখি। প্রতিটি পেশায় এখন দুর্দান্ত দাপটে অবস্থান করছেন নারীরা। এখনো যেসব সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করলে নারীর অগ্রযাত্রা আরো বেগবান হবে।

লেখক ও সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইমদাদুল হক মিলন, নূরজাহান বেগম মুক্তা, নিলুফার চৌধুরী মণি, সামিয়া রহমান, অধ্যাপক রুপা চক্রবর্তী, ডা. সাগুফা আনোয়ার, ফাতেমা বেগম, অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, কামরুন নাহার ডানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত খবর