৭ মার্চের ভাষণ বঞ্চিত মানুষের দাবি আদায়ের দলিল

জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ।

নিউইয়র্কে আলোচনা সভায় বক্তারা

৭ মার্চের ভাষণ বঞ্চিত মানুষের দাবি আদায়ের দলিল

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের যৌথ উদ্যোগে ৭ মার্চের ভাষণে উপর আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

৭ মার্চ বুধবার সন্ধ্যায় কনস্যুলেট জেনারেলের মিলয়াতনে সম্মিলিত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেট জেনারেলের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ অন্য নেতারা প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।

৭ মার্চ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন ডেপুটি কনসাল জেনারেল মো. সাহেদুল ইসলাম।

জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের উপর নির্মিত প্রামাণ্য ভিডিও চিত্র প্রদর্শন ছিল অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ।

সভায় আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া সম্মানের উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, এই ভাষণ আর বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; এটি এখন সারা পৃথিবীর মানুষের অনুপ্রেরণাদানকারী একটি দলিলে পরিণত হয়েছে। যা মানুষকে জাগ্রত রাখবে তাদের দাবি আদায়ের ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে।

তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে ৭ মার্চের ভাষণের পরই চুড়ান্তভাবে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। জাতির পিতার ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয়বাংলা’-তে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাত্র-যুবক, কৃষক-শ্রমিক, কুলি-মজুরসহ সর্বস্তরের মানুষ সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১র’ ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।

রাষ্ট্রদূত মাসুদ বর্তমান সরকারের গতিশীল নেতৃত্বে সমুদ্র বিজয়, পদ্মা সেতু নির্মাণ, পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, এমডিজি বাস্তবায়ন, এসডিজি বাস্তবায়নে অগ্রগতিসহ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হওয়ার মতো সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন।

তিনি প্রবাসীদের উদ্দেশে বলেন, আসুন, আমরা সকলে হৃদয়ে লাল-সবুজের পতাকা ধারণ করে, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করি। বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই।

কনসাল জেনারেল শামীম আহসান, এনডিসি জাতীয় জীবনে ৭ মার্চের ভাষণের সুদূর প্রসারী প্রভাবের কথা তুলে ধরে বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের সকল নিপিড়ীত, নির্যাতিত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য একটি স্বীকৃতি। শুধু বাঙালি জাতি নয় বিশ্বের সকল নিপিড়ীত স্বাধীনতাকামী মানুষের কাজে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আবেদন কখনই শেষ হবে না।

কনসাল জেনারেল বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসী বান্ধব সরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশের ভাবনায় তিনি সব সময়ই প্রবাসীদের কল্যাণকে অক্ষুন্ন রেখেছেন।

কনসাল জেনারেল শামীম আহসান আশা প্রকাশ করে বলেন, দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় প্রবাসীরা সবসময়ই ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ না হলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না, বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। আজ দেশে-বিদেশে আমরা সবাই ৭ মার্চের ভাষণের সুফল পাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের এই দিনে ড. সিদ্দিকুর রহমান দল-মত নির্বিশেষে সকলের প্রতি আহ্বান জানান, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যেন জাতির পিতাকে তাদের মনে সর্বোচ্চ স্থান দেন। কেউ যেন জাতির পিতাকে নিয়ে কখনই কোনো বিরূপ মন্তব্য না করেন।

আলোচনায় আরও অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, শহীদ পরিবারের সন্তান ফাহিম রেজা নুর। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নৃশংসতার প্রত্যক্ষদর্শী ও একাত্তরের ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানের জনসমূদ্রে থাকা আকিব হাসান। বক্তাগণ ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ বিশ্ব সম্পদে পরিণত হয়েছে যা প্রতিটি বাঙালির জন্য অত্যন্ত গৌরবের বলে উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো, ১৯৭১র’ ৭ মার্চ রমনার রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতার দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ অন্তর্ভুক্ত করে।

সম্পর্কিত খবর