অধরা শিরোপা ঘরে আনার চ্যালেঞ্জ!
নিদাহাস ট্রফি

অধরা শিরোপা ঘরে আনার চ্যালেঞ্জ!

সাহিদ রহমান অরিন

নিদাহাস ট্রফির অর্ধেকটা সময় রাস্তাতেই কেটেছে। তাও এমন সময় যখন বাংলাদেশ ব্যাটিং করছিল। তাই বলে খেলা মিস করিনি। এফএম রেডিওতে কমেন্ট্রি শুনেছি।

হাস্যকর সব বাংলা ধারাবিবরণী শুনতে শুনতে কখন যে বাড়ির মেইন গেটে এসে পৌঁছেছি সেদিকে হুঁশ নেই!

রেডিওর ধারাভাষ্যকাররা বারবার করে বলছিল, বাংলাদেশের হারাবার কিছু নেই। বাংলাদেশের নাকি কোনো চাপই নেই।

আচ্ছা, বাংলাদেশের ওপর যদি চাপ না থাকে, তাহলে চাপ কার? ভারতের (আই মিন ভারত বি দলের) নাকি স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার?

আয়োজক হিসেবে লঙ্কানদের বাড়তি চাপ থাকার কথা। দেশবাসীর প্রত্যাশার চাপ, যেটা কম-বেশি সব স্বাগতিক দলেরই থাকে।

বিপরীতে হোম অ্যাডভানটেজ কিন্তু ঠিকই লুফে নেয়। লঙ্কানরা যেমন ষড়যন্ত্রের ছক কষেছিল পরশুর অঘোষিত সেমিফাইনালে।

তবে চলমান নিদাহাস ট্রফিতে লঙ্কানরা স্বাগতিক হবার পরেও খেলোয়াড় কিংবা টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর বিন্দুমাত্র চাপ ছিলনা। যেমনটা গত বছর ছিল। একটা ম্যাচ জেতার জন্য হাহুতাশ করতে দেখা গেছে লঙ্কান ভক্তদের। ভারতীয় দর্শকদের অসভ্যতামির কার্বন কপি (মাঠে বোতল ছোঁড়া) করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি তারা।

তাহলে এবার চাপ নেই কেন? কারণ আছে অবশ্যই। বেশ কয়েকটা কারণ।

প্রথমেই বলে নিই, শ্রীলঙ্কা বিশ্বের হাতেগণা কয়েকটি দেশের একটা যাদের ১০০% মানুষ শিক্ষিত। জনগণ শিক্ষিত বলে তাদের ক্রিকেট সেন্সও আমাদের থেকে অনেক ভালো। আফটার অল, তারা তো আর আমাদের মতো দুই-চারদিন হলো ক্রিকেট খেলেনা।

আমরা বিশ্বকাপে পা রাখার ৩ বছর আগেই তারা বিশ্বকাপ জিতে বসে আছে! ওদের আর আমাদের ফারাকটা বোঝার জন্য বোধহয় আগের বাক্যটাই যথেষ্ট।

লঙ্কানরা জানে, কলম্বোর প্রেমাদাসায় পেরেরা-মেন্ডিসদের রেকর্ড জঘন্য রকমের খারাপ। গোটা পনের ম্যাচ খেলে মোটে দু’টি জয়! এই অবস্থার পরিবর্তন হুট করেই ঘটানো সম্ভব নয়। তা সে জাদুর বাক্স নিয়ে আসা নতুন কোচ হাথুরুই হোক, আর দুরমুশই হোক।

লঙ্কানরা জানে, তাদের দলটা এখন পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একে তো সেরা তারকা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস নেই। ইনজুরিতে নেই ফর্মে থাকা আরো দুই-তিনজন। ল্যাসিথ মালিঙ্গা-নুয়ান কুলাসেকারারাও ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছে। অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমালকেও নিষেধাজ্ঞার কারণে দর্শক সারিতে বসতে হয়েছে।

লঙ্কানরা জানে, ৭০তম স্বাধীনতা দিবসে, ৭০তম স্বাধীনতার বছরে ক্রিকেট দলের ফাইনাল খেলার চেয়েও দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির শেষ দেখাটা বেশি জরুরি।

ভুলে গেলে চলবে না, নিদাহাস ট্রফি যখন শুরু হয়, তখন মুসলিম-বৌদ্ধ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। যেটা বহাল ছিল দু’দিন আগেও।

বাংলাদেশ সমর্থকদের ওপর লঙ্কানদের হামলার যে ঘটনা ঘটেছে, সেটাকে নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা বললে ভুল হবে না। এরকম উগ্র সমর্থক কম-বেশি সবখানেই থাকে। ফুটবলের সভ্য দেশগুলোতে এরকমটা হরহামেশাই দেখা যায়।

এবার আসি, ভারতের কথায়। ওহ, ভারত বি দলের কথায়।

এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে রিল্যাক্স দল হলো ভারত। তারা দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়েছে, অবিসংবাদিতভাবে এটা চাপমুক্ত থাকার সবচেয়ে বড় কারণ।

আরেকটা কারণ হলো, ক’দিন আগেই তারা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ২৫ বছরের বদলা নিয়ে ফিরেছে। আবার ক’দিন বাদেই তাদের প্রাণের আসর আইপিএল শুরু হতে যাচ্ছে। নিদাহাস ট্রফি এই দুইয়ের মাঝামাঝি পড়ে যাওয়ায় এই মুহূর্তে চলমান সিরিজটা ভারতবাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে নেই।

সবশেষ কারণ, ক্রিকেটকে পুজা করা ভারতের অন্ধ ভক্তরা আগের চেয়ে কিছুটা নমনীয় ও সহনশীল হয়েছে। আর যাই হোক, আজকের ফাইনালে ভারত বাই চান্স বাংলাদেশের কাছে হেরে বসলেও সমর্থকরা রোহিত শর্মা-শিখর ধাওয়ান-সুরেশ রায়নাদের বাড়ি ভাঙচুর করবে না।

এখন বলুন, নিদাহাস ট্রফিতে রাজ্যের চাপ আসলে কোন দলের ওপর? বছরের শুরুতে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে তিন ফরম্যাটেই নাস্তানাবুদ হয়েছি। সাকিব নাই, হেড কোচ নাই বলে হাজারো অজুহাত দাঁড় করিয়েছি।

কিন্তু এই সিরিজে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচ পেয়েছি। সম্ভাব্য সেরা ও পূর্ণশক্তির দল নিয়ে শ্রীলঙ্কায় পা রেখেছি। শুরুতে সাকিব না থাকলেও শেষমেশ তাকেও ফেরত পেয়েছি। ফাইনালে ওঠার সুবাদে কোটি টাকা পুরস্কারের ঘোষণাও শুনেছি।

আর কী কী সুযোগ-সুবিধা দিলে ওরা আমাদের একটা শিরোপা এনে দিতে পারবে, কেউ কি বলতে পারবেন?

ভারতের হয়তো চাপ নেই। কিন্তু দেখিয়ে দেওয়ার অনেক কিছুই আছে। সংবাদ সম্মেলনে সরাসরি কিছু না বললেও দিনেশ কার্তিকের কথায় সে রকমই আভাস মিলেছে।

বিপিএল আর আইপিএল অভিজ্ঞতার কতোটা ফারাক, বিপিএল আর আইপিএলের ক্রিকেট কোয়ালিটির ব্যবধানটা কত বিশাল,আইপিএলের একাদশ আসরের প্রাক্কালে সেটাই নাকি দেখিয়ে দিতে চায় দ্বিতীয় সারির ভারত।

আর সেরকম কিছু যদি হয়, তাহলে আমরা পঞ্চমবারের মতো শিরোপা জয়ের খুব কাছে এসেও খালি হাতে ফিরতে চলেছি। এভাবে বারবার তীরে এসে তরী ডোবানোর চেয়ে মাঝ সমুদ্রে ডুবে মরা শ্রেয়।

লেখক: সাংবাদিক, ক্রিকেট বিশ্লেষক

সম্পর্কিত খবর