বিমান দুর্ঘটনা: নিভে গেল বংশের প্রদীপ

প্রিয়ক ও প্রিয়ংময়ী [ছবি: ফেসবুক]

বিমান দুর্ঘটনা: নিভে গেল বংশের প্রদীপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ঘটনা কেড়ে নিলো বংশের আলো জ্বালানোর শেষ সম্বলটুকু। হাসি-ঠাট্টায় সুখের কমতি ছিলো না পরিবারটিতে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ফারুক হোসেন প্রিয়ক। শখ দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানো আর ছবি তোলা।

শখ পূরণে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে। দেশটা ঘুরে দেখার পর ভিনদেশেও ঘুরে বেরিয়েছেন ভ্রমনপিপাসু  ফারুক।

ফারুক হোসেন প্রিয়ক গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামের শরাফত-ফিরোজা দম্পতির একমাত্র সন্তান। কয়েক বছর আগে ফারুকের বাবা শরাফত মারা যান।

সংসারের অভিভাবককে হারানোর বেদনা বেশিদিন ছিলো না। কিছুদিন পরই ফারুকের কোল জুড়ে এলো একটি ফুটফুটে কন্যা। পরিবারটির দিন কাটতো নতুন সদস্যকে নিয়েই। বাবার আদরের রাজকন্যার নামও রাখা হয় তার নামের সাথে মিল রেখে, প্রিয়ংময়ী তামাররা। আর এভাবেই কাটতে থাকে তাদের সংসার।  

কয়েক মাস আগে প্রিয়ক ভারত ভ্রমণ করে আসেন। ফেরার পথে প্রিয় কন্যার জন্য একটি বিমান কিনে আনেন। আর বাড়িতে এসে কন্যাকে ভ্রমণ কাহিনী শোনান। তখন প্রিয়ংময়ীর শখ জাগে বিমানে চড়ার। যেই কথা সেই কাজ। প্রিয়ক তার প্রিয় সন্তান প্রিয়ংময়ী তামাররার শখ পূরণে নেপাল ভ্রমণের চিন্তা করেন। সেই শখই কাল হলো প্রিয়ক-প্রিয়ংময়ীর জীবনে। এতে এই সংসাসের প্রদীপ জ্বালানোর শেষ সম্বলটুকুও এখন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন মহাসড়কের নগরহাওলা গ্রামের শরাফতের পরিবারে এখন শুধুই শোকের মাতম। চারিদিকে শুনশান অবস্থা। পরিবারের একমাত্র সদস্য মা ফিরোজা বেগম হাও-মাও করে কাঁদছেন।  

ফিরোজা বেগম তার স্বামীকে হারিয়েছেন পাঁচ বছর হলো। একমাত্র বুকের ধন প্রিয়ককে অবলম্বন করে বেঁচে ছিলেন। ছেলেকে কখনও হাতের নাগাল হতে দেননি। কিন্তু আবার কখনও নারী ছেড়া ধনের ইচ্ছের বিরুদ্ধও হননি। ১২ মার্চ সকালে যখন প্রিয়ক বিদায় নিচ্ছিলেন তখন অজানা শঙ্কা বিঁধেছিল তার বুকে। সন্তান প্রিয়ক ও নাতনি প্রিয়ংময়ীর ছায়া যতদূর দেখা যাচ্ছিল ততক্ষণ শুধুই চেয়েই ছিলেন। দুপুরের পরই টিভির পর্দায় দেখতে পান বিমান দুর্ঘটনার খবর। তবে তিনি এখনও জানেন তার ছেলে ও নাতনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তারা বেঁচে আছেন।

কিন্তু মায়ের মন বলে কথা, কোন কিছুতেই আর ভরসা হচ্ছে না তার। গতকাল  সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই অচেতন হয়ে আছেন। যখন চেতনা আসছে তার দাবি, ‘আমার বুকের ধনকে তোমরা এনে দাও। ’ একদিনের বেশী অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত ফিরোজার মুখে ভাত ওঠেনি। তার কথা, ‘ছেলের মুখ দেখেই তবেই ভাত খাব’।  

গেল মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিবেদক যখন  ফিরোজা বেগমের বাড়িতে যান তখন পরিবারের ২ সদস্যের মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে গেছে। তবে ফিরোজা বেগমের কানে পৌছায়নি তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদটি। স্বজনরা জানান, সংবাদটি কিভাবে গ্রহণ করবেন ফিরোজা বেগম এটা ভেবেই তাদের ভয় হচ্ছে।  

ফারুক হোসেন প্রিয়কের শ্বশুর সালাউদ্দিন মাহমুদ খসরুর বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাজির শিমলা গ্রামে। তিনি জানান, ২০১২ সালে ফারুক তার বড় মেয়ে অ্যানিকে বিয়ে করেন। তার একমাত্র ছেলে অপি গত বছর অসুস্থ অবস্থায় মারা যান। এবার তার মেয়েও স্বামী-সন্তান হারিয়ে একা হয়ে গেল। অ্যানিকেও এখন পর্যন্ত স্বামী ও সন্তানের মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি।


সফিউদ্দিন/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর