শিশু শ্রমিকের মৃত্যু, ভোল পাল্টালো পরিবার

সোহান।

শিশু শ্রমিকের মৃত্যু, ভোল পাল্টালো পরিবার

নাটোর প্রতিনিধি

সন্তানের মৃত্যুর এক সপ্তাহ না যেতেই ভোল পাল্টালো পরিবার। গত ১১ই মার্চ নাটোরের বড়াইগ্রামের গড়মাটিতে রশিদ অটো রাইস মিলের ভেতর সোহানের মৃত্যু হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর জন্য মিল কর্তৃপক্ষকে দায়ি করা হয়।

কিন্তু মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর রোববার সোহানের পরিবার মিল কর্তৃপক্ষের একজন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে।

নিহত সোহানের বাড়িতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সোহানের বাবা আব্দুল জলিল, দুই চাচা মকলেসুর রহমান ও ইলিয়াস হোসেন, মামা নজরুল ইসলাম এবং অটো রাইস মিলের ম্যানেজার (প্রশাসন) নজরুল ইসলামসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

তাদের দাবি, সোহানের মৃত্যু নিয়ে রহস্যজনক কোনো ব্যাপার নেই। বাই সাইকেলে চেপে বাড়ি ফেরার সময় নিজেই বেখেয়ালেই মিলের ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে সে মারা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তার বয়স ১৭ বছর লিখে তাকে কিশোর শ্রমিক আখ্যা দিয়ে মিলে শ্রম আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে মর্মে প্রচার করা হয়েছে।

কিন্তু সে কিশোর নয়, প্রাপ্ত বয়স্ক। এছাড়া মৃত্যু নিয়ে কোনো সন্দেহ না থাকায় তার লাশের পোস্টমর্টেম করা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে অটো রাইস মিলের ম্যানেজার (প্রশাসন) জানান, নিহত সোহানের পরিবারকে যতটুকু সম্ভব ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। এছাড়া কিছু সংবাদ মাধ্যমে ওসির কক্ষে রশিদ অটো রাইস মিলের ছেঁড়া খাম পাওয়ার যে কথা বলা হয়েছে তাতে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। ওই খামে ওসি শাহরিয়ার খানের কাছে নিহত সোহানের পোস্টমর্টেম না করার আবেদন দেওয়া হয়েছিল মাত্র।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত একজন গণমাধ্যমকর্মী সোহানের পরিবারের কাছে জানতে চান, সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক কে? সোহানের পরিবার নাকি মিল কর্তৃপক্ষ?

জবাবে জানানো হয়, পরিবার সংবাদ সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলন পরিবারের পক্ষ থেকে করা হলে সেখানে মিল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি কেন? তা জানতে চাওয়া হলে এর কোনো উত্তর দিতে পারেনি পরিবার।

সোহানের মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে তার চাচা মকলেসুর রহমান ও ইলিয়াস হোসেন গণমাধ্যমের সামনে মিল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেলেও এখন কেন তাদের পক্ষে কথা বলছেন, জানতে চাইলে এরও কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি পরিবার।

উল্লেখ্য, গত ১১ই মার্চ বিকেলে রহস্যজনকভাবে বড়াইগ্রামের গড়মাটিতে রশিদ অটো রাইস মিলে মৃত্যু হয় শিশু শ্রমিক সোহানের। মৃত্যুর পাঁচ ঘণ্টা পর সোহানের পরিবারকে মৃত্যুর ঘটনা অবহিত করে মিল কর্তৃপক্ষ দাবি করে, ট্রাকচাপায় সোহানের মৃত্যু হয়। পরদিন ১২ই মার্চ মিল কর্তৃপক্ষকে দায়ি করে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দেয় সোহানের পরিবার। সাংবাদিকরা সোহানের বাড়িতে অবস্থানের পর মিলের জিএম এডমিন নজরুল ইসলাম কৌশলে সোহানের বাবা আব্দুল জলিলকে সঙ্গে নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের অনুমতি চেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যান ও অনুমতি আদায় করেন। এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে রহস্যজনক মৃত্যুর সংবাদটি প্রকাশিত হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, পরিবারের কোনো সদস্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোহানের মরদেহ উত্তোলন করা হলে মিল কর্তৃপক্ষের প্রশ্নবিদ্ধ হবে, এমন আশঙ্কা থেকেই  রোববার সংবাদ সম্মেলনটি করা হয়ে থাকতে পারে।


(নিউজ টোয়েন্টিফোর/নাসিম/তৌহিদ)