বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই । আজ বিকাল সোয়া ৬টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
এর আগে বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অসুস্থ রাজ্জাককে।
সেখানে তাকে কার্ডিয়াক বিভাগে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান নায়করাজ। তার লাশ রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে রাখা আছে।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নায়করাজ আব্দুর রাজ্জাককে ২১শে আগষ্ট ২০১৭ তারিখ সন্ধ্যা ৫টা ২০ মিনিটে ইউনাইটেড হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে পরিবারের সহায়তায় নিয়ে আসা হয়।
এই প্রচেষ্টা চলাকালে ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ কার্ডিওলজিস্ট ডা. মোমেনুজ্জামান ইমার্জেন্সি বিভাগে ওনার পাশেই ছিলেন। কিন্তু সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
ষাটের দশকের মাঝের দিকে চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন নায়করাজ রাজ্জাক। ষাটের দশকের বাকি বছরগুলোতে এবং সত্তরের দশকেও তাঁকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রধান অভিনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হত। বাংলাদেশের পাশাপাশি কলকাতার ছবিতেও সমান জনপ্রিয়তা পান এই অভিনেতা।
তার পুরো নাম আবদুর রাজ্জাক। ডাক নাম রাজু, রাজ্জাক, রাজা। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতার নাকতলায় জন্মগ্রহণ করেন নায়করাজ রাজ্জাক। তাকে নায়করাজ উপাধি দিয়েছিলেন চিত্রালী সম্পাদক আহমদ জামান চৌধুরী। বাংলা ও উর্দু মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন খ্যাতিমান এ অভিনেতা।
বাবার নাম আকবর হোসেন, মা নিসারুননেছা। তিনি ১৯৬২ সালে খাইরুন্নেছাকে (ভালোবেসে লক্ষ্মী বলে ডাকতেন) বিয়ে করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। তার সন্তানরা হলেন- বাপ্পারাজ (রেজাউল করিম), নাসরিন পাশা শম্পা, রওশন হোসেন বাপ্পি, আফরিন আলম ময়না ও খালিদ হোসেইন সম্রাট।
কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন স্বরসতী পূজায় মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে অভিনয় জীবনে পা রাখেন রাজ্জাক। গেম টিচার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁকে বেছে নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। প্রথম অভিনীত নাটক ‘বিদ্রোহী’। কলেজজীবনে ‘রতন লাল বাঙালি’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি সিনেমায় পা রাখেন। ১৯৬৪ সালে কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার কারণে ঢাকায় চলে আসেন আবদুর রাজ্জাকের পরিবার।
জহির রায়হানের বেহুলা সিনেমার মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রে নাম লেখান। তার প্রথম নায়িকা সুচন্দা। জুটি হিসেবে রাজ্জাক-কবরী দীর্ঘদিন ঢালিউড শাসন করেন।
১৯৯০ সাল পর্যন্ত নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন তিনি। নূতনের বিপরীতে মালামতি সিনেমায় নায়ক হিসেবে শেষ অভিনয় করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে নায়ক চরিত্রের বাইরে অভিনয় শুরু করেন। রাজ্জাকের প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র অনন্ত প্রেম (১৯৭৭)। নায়িকা চরিত্রে ছিলেন ববিতা। সর্বশেষ পরিচালিত চলচ্চিত্র আয়না কাহিনি (২০১৪) এবং সর্বশেষ চলচ্চিত্র কার্তুজ (২০১৪)।
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: এতটুকু আশা, নীল আকাশের নিচে, জীবন থেকে নেয়া, নাচের পুতুল, পিচঢালা পথ, আবির্ভাব, দ্বীপ নেভে নাই, টাকা আনা পাই, রংবাজ, আলোর মিছিল, অশিক্ষিত, ছুটির ঘণ্টা, চন্দ্রনাথ, শুভদা, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত
পুরস্কার: পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (সেরা অভিনেতা), মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৪ (আজীবন সম্মাননা), বাচসাস পুরস্কার ২০০৯ (আজীবন সম্মাননা)
তিনি ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হন।