বদলি আদেশের পরও স্বপদে বহাল দুর্নীতিবাজ টেকনিশয়ান

প্রতীকী ছবি

বদলি আদেশের পরও স্বপদে বহাল দুর্নীতিবাজ টেকনিশয়ান

টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম ব্যহত
নাসিম উদ্দীন • নাটোর প্রতিনিধি

নাটোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত ইপিআই টেকনিশিয়ান আব্দুল জলিল এখনও স্বপদে বহাল রয়েছেন।

তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় নাটোরের সিভিল সার্জন অফিস ও রাজশাহী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি বদলির আদেশ দেন আব্দুল জলিলকে।  

বদলির আদেশ অনুযায়ী, জলিলের নতুন কর্মস্থল ছিল সিংড়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। অথচ আদেশ জারির ৪ মাস হতে চললেও এখনো যোগদান করেননি তিনি।

ফলে ওই উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ২৮৮টি টিকাদান কেন্দ্রে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে ।

জানা যায়, ইপিআই টেকনিশিয়ান আব্দুল জলিল গেল ৮ বছরে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনার খাত থেকে লাখ লাখ টাকা লোপাট করেছেন। এমনকি কার্যালয়ের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকেও ঘুষ নিয়েছেন।  

গত বছরের ৮ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত নাটোর সদর উপজেলায় এফআইপিভি ভ্যাকসিনের ওপর ৬টি ব্যাচে মোট ২শ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

প্রশিক্ষণার্থীদের সন্মানি হিসাবে ৬শ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও আব্দুল জলিল প্রত্যেককে ৫শ টাকা করে দিয়ে ২০হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। একই প্রশিক্ষণে তাদের নাস্তার হাজার হাজার টাকাও লোপাট করেন।  

বছরে দু’বার অনুষ্ঠিতব্য ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনে ৩৬ জন সুপারভাইজার কাজ করার কথা থাকলেও মাত্র ১৮ জন সুপারভাইজারকে দিয়ে কাজ করানো হয়। পরে বাকি ১৮ জন সুপারভাইজারের টাকা নিজেই উত্তোলন করে পকেটে পুড়েন।  

এখানেই শেষ নয়। সদর উপজেলার আউটরিচ সেন্টারগুলোতে চেয়ার-টেবিল সরবারাহের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকলেও তা সরবারাহ না করে ওই সমুদয় টাকাও গিলে ফেলেন দুর্নীতির হোতা জলিল। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মাইকিংসহ নানা কৌশলে সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

নাটোর সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালে আব্দুল জলিল হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকুরিতে যোগদান করেন। পরের ১৮টি বছর সততার সঙ্গেই কাজ করেন। কিন্তু ২০০৯ সালে ডিজি হেলথ থেকে অর্ডার করিয়ে নিজ বেতনে ইপিআই টেকনিশিয়ান পদে যোগদানের পর থেকেই অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন।

এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গত বছরের ২০ নভেম্বর নাটোর সিভিল সার্জন অফিস বরাবর  একটি অভিযোগ দায়ের করেন নাটোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ কর্মকর্তারা।  

ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ১২ ডিসেম্বর নাটোর সিভিল র্সাজন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার শফিকুল ফেরদৌসকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়।  

তদন্ত কমিটির অন্যরা হলেন, জেলা পাবলিক হেলথ নার্স মোছাঃ তফুরা খাতুন ও মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) হাফিজুর রহমান। ওই কমিটি আব্দুল জলিলের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পায়। ফলে ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর তাকে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে বদলি এবং সিংড়ার মমতাজ খাতুনকে নাটোর সদর কর্মস্থলে যোগদানের জন্য আদেশ দেন।

পরে ওই আদেশ রাজশাহী স্বাস্থ্য বিভাগের ৩ সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২৮ ডিসেম্বর বদলি আদেশটি পরি(স্বাস্থ্য) রাজ বি/ প্রঃ ১৭/১৪ স্মারকে অনুমোদন করেন স্বাস্থ্য পরিচালক। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন ১) ডাঃ শেখ মোঃ মুনজুর রহমান ১৫-০৬-২০০২ তারিখে ই,পি,আই,/ বিবিধ পরিপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ০৯-০৩-২০১৭ সালের আদেশ গোপন করে বদলি আদেশ বাতিল করেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইপিআই টেকনিশিয়ান আব্দুল জলিলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। একটি মহল তাদের পছন্দমত কাউকে চেয়ারে বসানোর জন্য এসব করছে। তাছাড়া বদলির বিষয়টি তাকে আগে জানানো হয়নি।

বিষয়টি অতি শিগগিরি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে  লিখিতভাবে জানানো হবে বলে নিশ্চিত করেছেন  রাজশাহী স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক আনিসুর রহমান।

নাসিম/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর