উইনির মৃত্যুতে কাঁদছে বিশ্ব

উইনি মাদিকিযেলা ম্যান্ডেলা

উইনির মৃত্যুতে কাঁদছে বিশ্ব

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ও সাবেক ফার্স্টলেডি উইনি মাদিকিযেলা ম্যান্ডেলার (৮১) মৃত্যুতে কাঁদছে বিশ্ব। সোমবার বিকেলে তিনি মারা যান। এরপর রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট কিরিল রামাফোসা দেশটিতে এক সপ্তাহের জাতীয় শোক ঘোষণা করেন। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উইনির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার আর্চবিশপ ডেসমন্ড টিটু শোক প্রকাশ করে বলেছেন, উইনি বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক ছিলেন। তার সাহসী ভূমিকা আগামী প্রজন্ম ও মানবাধিকারকর্মীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

এএনসি’র সিনিয়র সদস্য ফিকিলি মাবালুলা উইনি স্মরণে বলেন, যুগে যুগে যত বর্বর সরকার আসবে, তাদের কাছে আতঙ্ক হয়ে থাকবে উইনির কর্মকাণ্ড।

news24bd.tv

প্রখ্যাত আমেরিকান রাজনীতিক জেসে জ্যাকসন টুইট করেছেন, নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে উইনি অন্ধকারাছন্ন আফ্রিকানদের আলোর পথ দেখিয়েছিলেন।

তাদের সাহস সবার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসওম্যান ম্যাক্সিন ওয়াটার বলেছেন, আমি আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী এবং বিশ্বের অন্যতম নেতা ও মানবাধিকার কর্মীকে হারালাম।

ব্যক্তিগতভাবে অভিনেত্রী নাওমি ক্যাম্পবেল, ইদ্রিস এলবা, ভিওলা ডেভিস গভীর শোক প্রকাশ করে টুইট করেছেন।

কে ছিলেন উইনি?

উইনি মাদিকিযেলা ম্যান্ডেলা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার সাবেক স্ত্রী। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের কারণে নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে তিনিও কারাবন্দি হন।

প্রায় তিন দশকের আন্দোলনে এই দম্পতি বিশ্বে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। দেশটির বহু মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ‘জাতির মাতা’।

যদিও পরে নানা আইনি ও রাজনৈতিক জটিলতায় উইনি মাদিকিযেলা ম্যান্ডেলা তার সুনাম ধরে রাখতে পারেননি।

news24bd.tv

১৯৩৬ সালে দেশটির তৎকালীন ট্রান্সকেই (বর্তমানে ইস্টার্ন কেপ) জন্মগ্রহণ করেন উইনি মাদিকিযেলা ম্যান্ডেলা। তিনি একজন প্রশিক্ষিত সমাজসেবী ছিলেন। কাজ করতে গিয়েই ১৯৫০ সালে তার সঙ্গে নেলসন ম্যান্ডেলার পরিচয় হয়। নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে তার বিয়ে ৩৮ বছর টিকে ছিল।

যদিও নেলসন ম্যান্ডেলার দীর্ঘ কারাজীবনের কারণে দাম্পত্যের বড় সময়টিই তারা পরস্পরের থেকে দূরে ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

নেলসন ম্যান্ডেলা জেলে গেলে তার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান উইনি। নেলসন ম্যান্ডেলার যেদিন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ হয়, সেদিন সমর্থকদের উদ্দেশে উইনি বলেছিলেন, ‘আমার এবং আমাদের কারোই কখনো আশা ছাড়া উচিত হবে না। এ আন্দোলন চলতেই থাকবে। ’

যদিও পরে তিনি নানা স্ক্যান্ডাল ও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। দেশটিতে তার অনেক বক্তব্য নিয়েই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। যেমন: নেকলেসিং নামে এক চর্চার প্রশংসা করেছিলেন উইনি। এ প্রথায় সন্দেহভাজন তথ্য পাচারকারীর গলায় জ্বলন্ত টায়ার ঝুলিয়ে দেয়া হত।

এছাড়া আশির দশকে তিনি এএনসি’র অন্য সদস্যদের নিয়ে সোয়েতোর এক অংশে ত্রাসের রাজত্ব কয়েক করেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

১৯৯১ সালে অপহরণের দায়ে তাকে আদালত ছয় বছরের কারাদণ্ড দেন। আপিলের পরে সে দণ্ড কমিয়ে জরিমানা করা হয়। ২০০৩ সালে ব্যাংক ঋণ সংক্রান্ত ঘটনায় প্রতারণার অভিযোগেও তার সাজা হয়।

কিন্তু এসবের পরেও উইনিকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর ভাবা হয়। তিনি সব সময় গরীব কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের অধিকার আদায়ে লড়াই করেছেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থেকেছেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত এএনসি’র সংসদ সদস্য ছিলেন।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান     •     অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর