যে কারণে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিল সৌদি আরব

যে কারণে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিল সৌদি আরব

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজায় ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞ চালালেও সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান অবশেষে ইসরাইলকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

দি আটলান্টিক পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, "ইসরাইলের সঙ্গে সৌদি আরবের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এবং আমরা যদি ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও শান্তি স্থাপন করতে পারি তাহলে মিশর, জর্দানসহ পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত আরব দেশগুলো ব্যাপক লাভবান হবে। "

মুহাম্মদ বিন সালমানের এমন বক্তব্যে মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, নিজের ব্যক্তিস্বার্থের জন্য সৌদি যুবরাজ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

আর এর মাধ্যমে তিনি ফিলিস্তিনিদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। কারো মতে তিনি মূলত নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের খেলার পুতুলে পরিণত হয়েছেন। আর সেটা শুধু ক্ষমতার জন্য।

মুহাম্মদ বিন সালমান এখনো সৌদি আরবের রাজা না হলেও তিনিই মূলত সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন।

রাজার পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য তিনিই যে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি তা প্রমাণের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরবর্তী রাজা হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়েছেন।  

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া এবং নিজেকে নেতৃত্বের যোগ্য প্রমাণ করার জন্য ইহুদিবাদীদের সমর্থন লাভের চেষ্টা করছেন। তিনি সম্প্রতি ওয়াশিংটন সফরকালে ইহুদিবাদী লবিং গ্রুপের বেশ ক'জন কর্মকর্তার সঙ্গেও সাক্ষাত করেন।

সৌদি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফুয়াদ ইব্রাহিম মনে করেন, "সৌদি আরবের উগ্র গোষ্ঠীগুলো যাতে রাজার আসন গ্রহণ করতে না পারে সেজন্য তার আগেই যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান আমেরিকার আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন। তিনি নিজেকে সৌদি আরবের প্রকৃত শাসক ও সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। "

এদিকে ফিলিস্তিনের জনগণ আপোষের পরিবর্তে দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামের পথকেই বেছে নিয়েছেন। যুগ যুগ ধরে চলে আসা সংগ্রাম তারা এখনো অব্যাহত রেখেছেন। তারা ইসরাইলের দখলদারিত্বের প্রতিবাদ জানাতে গত শুক্রবার থেকে গাজায় ইসরাইলি সীমান্তের কাছে সমাবেশ করা শুরু করে এবং এখনো তা অব্যাহত আছে। ফিলিস্তিনিদের এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ২০ জন নিহত হওয়া ছাড়াও প্রায় ১৬০০ ব্যক্তি আহত হয়েছে। মুসলিম বিশ্বতো বটেই এমনকি পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তিগুলোও ওই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। এরইমধ্যে সৌদি যুবরাজ আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা জন্ম নিয়েছে।

সৌদি যুবরাজ গত ডিসেম্বরের পর থেকেই ইসরাইলের পক্ষে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ডিসেম্বরে দখলিকৃত বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি আগামী মে মাসে মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের ওই ঘোষণার বিরুদ্ধে সারা মুসলিম বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও সৌদি আরব কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। উল্টো মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওই ঘোষণার প্রতি সমর্থন দেয় রিয়াদ। এ কারণে ট্রাম্পের ওই ঘোষণার নিন্দা জানাতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও যোগ দেয়নি সৌদি আরব।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রাম জোরদার হওয়ায় নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প চাপে আছেন। এ কারণে তারা ইরান, হাশত আশ্ শাআবি, হামাস, হিজবুল্লাহ, আনসারুল্লাহর মতো প্রতিরোধ সংগ্রামের বিরোধী হিসেবে পরিচিত সৌদি আরবকে দিয়ে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন, যাতে অন্য দেশও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে এগিয়ে আসে। আর নিজের ক্ষমতার আসন নিশ্চিত করতে আমেরিকা ও ইসরাইল যা বলছে, সৌদি যুবরাজ সেটা বাস্তবায়ন করছেন।

সম্পর্কিত খবর