ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আনন্দ-উল্লাসে জমেছে বৈসাবি মেলা

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আনন্দ-উল্লাসে জমেছে বৈসাবি মেলা

ফাতেমা জান্নাত মুমু  • রাঙামাটি

পাহাড়ে বৈসাবিকে ঘিরে জমে উঠেছে উৎসবের মেলা। চারদিকে এখন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের আনন্দ-উল্লাসের জোয়ার। ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা সেজেছে নিজেদের ঐতিহ্যরূপে। তাদের পোশাকের বৈচিত্র্যতায় ফুঠে উঠেছে নিজস্ব সম্প্রদায়ের পরিচয়।

মেতেছে নানা আচার-অনুষ্ঠানে।  

আজ শুক্রবার ছিল মেলার দ্বিতীয় দিন। ছুটির দিন হওয়ায় মেলা প্রাঙ্গণ বেশ জমজমাট। বিকের গড়াতেই বিভিন্ন বয়সের পাহাড়ি-বাঙালী নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীদের পাদ ভারে কানায় কানায় ভরে যায় মেলা প্রাঙ্গন।

মেলা যেন পরিণত হয়েছে পাহাড়ি-বাঙালিসহ সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠীর সম্প্রীতির মিলন ক্ষেত্রে।

news24bd.tv

মেলায় চলছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিল্পীদের গান, জীবনযাত্রার ওপর আলোকচিত্র, পাচন রান্না, নাটক, খেলাধুলা, গেঙ্গুলি গানের আসর ও নাচ। রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে এবার বসেছে ৩০টি স্টল। প্রতিটি স্টল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মাচাঙ ঘরের আদলে বাঁশ আর কাঠ দিয়ে তৈরি করা। আর এসব স্টলে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, বম, চাক, পাংখোয়া, লুসাই, খুমী ও খিয়াং নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি-সংষ্কৃতি, অলঙ্কার, কোমর তাঁতের তৈরি পোশাক ও বাঁশ আর বেতের তৈরি পণ্য, খাবার, নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি বিভিন্ন পণ্য সমগ্রি স্থান পেয়েছে। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মেলায় চলে আনন্দের হোলি আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের  ঐতিহ্যবাহী নৃত্য-সঙ্গীত, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, নাটক ও পণ্য প্রদর্শনী। মেলা শেষ হবে আগামীকাল শনিবার।  

তবে বৈসাবি মেলা শেষ হলেও শেষ হচ্ছেনা উৎসব। এ উৎসব চলবে আগামী পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত। থাকছে আনন্দ শোভাযাত্রা, পাহাড়ি খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানো, বিজু, জলখেলি ও বাংলা বর্ষবরণ উৎসব। অর্ধ মাসব্যাপী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জমজমাট থাকবে রাঙামাটি।

news24bd.tv

এ ব্যাপারে সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ১০ ভাষাভাষি ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবিকে বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু নামে পালন করে থাকে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির সংমিশ্রনে বৈসাবি এক বৈচিত্রময় রূপ ধারণ করেছে। এটা মূলত পুরোন বছরকে বিদায় দেওয়া আর নতুন বছরকে বরণ করার জন্য পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের এ বৈসাবি উৎসব। এ উৎসবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন হয়। থাকেনা কোন হিংসা-বিদ্বেষ। আশা করি বৈসাবির আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে প্রতিবছর পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা আনুষ্ঠানিকভাবে এ বৈসাবি উৎসব পালন করে থাকে।
 
মুমু/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর